রাজা বল্লাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘী।





কিভাবে যাওয়া যায়:
ঢাকার পাশের জেলা মুন্সীগন্জের অবস্থান রামপাল ইউনিয়নেই  রাজা বল্লাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘীর। ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের দূরুত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার  তবে এই দিঘীটি দেখার জন্য আরো ০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে আসতে হবে ঢাকা হতে সকালে এসে দিঘীটি দর্শন করে বিকেলেই ঢাকায় ফিরে আসা যাবে সড়কপথে যেতে কষ্ট হবে না কিন্তু নৌপথে গেলে সময়ও বাচঁবে এবং যানজট এড়িয়ে নদী পথের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সাচ্ছন্দের সাথে পৌছানো যাবে সদর ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চে দিয়ে মাত্র  ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যেতে পারবেন মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে এখান থেকে  আবার রিক্সায় যেতে হবে রামপাল ইউনিয়নের রামপাল কলেজ তার পাশেই রয়েছে  রাজা বল্লাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘী দেখতে যাওয়া যায় ভাড়া মাত্র ৩৫-৪০ টাকা

কিছু কথা:
বল্লাল সেন ধার্মিক (প্রচুর মন্দির গড়েন)  ছিলেনএবং সে তার মাকে খুব ভালবাসতেন তিনি মাতৃভক্ত ছিলেন। প্রজাদের পানীর কষ্ট দুর করতে চান সে তার কাছের সবার কাছে পরামর্শ চাইলেন। পরামর্শদাতার নাম ছিল রামপাল আর তার নাম অনুসারে এই যায়গার নাম করন করা হয় এখনও রামপাল, পঞ্চবটি এই সব ঐতিহাসিক গ্রামগুলো এখনো টিকে আছে রাজা বল্লাল সেন একদিন ঘোষনা দিলেন একরাতের মাঝে তার মা যতোটা রাস্তা পায়ে হাটতে পারবেন উনি ততোবড় দীঘি খনন করবেন রাজা ভেবেছেন তার বৃদ্ধা মা কতোটুকুই বা আর হাটতে পারবে রাতে রাজমাতার হাটা দেখে বল্লাল সেন অবাক হয়ে গেলেন এবং আতঙ্ক হয়ে পরলেন ।তিনি দেখেন তার মাতা হন হন করে হাটা শুরু করে বিশাল এলাকা ক্রস করে ফেললেন বল্লাল সেন তার মায়ের পথরোধ করলেন  ছলনার মাধ্যমে পরে বিশাল এলাকা খনন করলেন কিন্তু মায়ের সাথে ছলনার ফলে দিঘিতে পানি আসে না বল্লাল সেনের প্রেস্টিজ শেষ প্রজাদের সামনে মন্ত্রি রামপাল জানালেন দিঘিতে প্রান বিসর্জন দিলে পানি আসবে (দিনাজপুরের রাম সাগরের গল্পটাও অবিকল) রাম সাগরের রাজা রাম নিজের প্রান বিসর্জন দিয়েছিলেন বল্লাল সেনও তাই করতে গেলেন কিন্তু রামপাল তার বন্ধুকে খুব ভালোবাসতেন তাই বন্ধুকে ফাঁকি দিয়ে নিজের প্রান বিসর্জন দিলেন
বল্লাল সেনের সেই  দিঘী টি এখনো আছে কিন্তু এখন আর দিঘি বলে চেনা যায় না কেন না এখন সেই যায়গা টিতে গড়ে উঠেছে  বিশাল একটা নিচু জায়গা আর সেইখানে ধুমায় চাষ বাস করা হচ্ছে তবে বর্ষায় নাকি পুরো দিঘিতে পানি থাকে

সেন বংশের শেষ হলো কিভাবে? রাজা বল্লাল সেন (মনে হয় উনি শেষ বল্লাল সেন, ) প্রচন্ড ধর্মান্ধ ছিলেন তার রাজ্যে তেমন কোন মুসলিম ছিলনা সেইখানে শূধু একজন মুসলীম প্রজা ছিলেন আর সেই মুসলিম টির  কোন সন্তান হয় না একদিন এক ফকির তার বাসায় ভিক্ষা চাইতে লে, এবং এই কথাটি বলায় আল্লাহ তোমার মনের আশা পুর্ন করবে সেই গৃহস্থ প্রচন্ড রাগ করে বলে তোমাকে ভিক্ষা দিবো না  আমার কোন পুত্র সন্তান হয় না। তুমি ভন্ড ফকির

সেই ফকির তখন বললেন আমি দোয়া করলাম বাচ্চা তোমার একটি পুত্র সন্তান হবে কিন্তু একটি সর্ত হলো সন্তান হলে তুমি অবশ্যই আল্লাহর নামে একটা গরু কোরবানী দিবেসত্যি সত্যি তার এক পুত্র সন্তান হলো। কিন্তু সেই রাজ্যে তখন মানে বল্লাল সেনের রাজ্যে তখন গরু খাওয়া বড় অপরাধ ছিল কাছেই ছিল জঙ্গল সেই গৃহস্থ তখন একটি বুদ্বি বের করল আর সেই মতাবিক লুকিয়ে গরু জবাই দিয়ে হার গোর মাটি চাপা দিল কিন্তু একটি কাক সেই মাংসের টুকরা উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বল্লাল সেনের প্রাসাদে ফেললো বল্লাল সেন তখন অনেকক্ষেপে গেলেন (লক্ষ্যনীয় মহাস্থান গড়ের লোক কথার সাথে যথেষ্ট সাদৃশ্য) সেই মুসলমান প্রজাকে ধরা হলো বল্লাল সেন আদেশ করলেন তুমি ছেলে হওয়াতে গরু কুরবানী করেছ তুমি জাননা হিন্দুদের কাছে গরু প্রচন্ড শ্রদ্ধার জিনিস এখন গরুর বদলে তোমার সদ্যজাত পুত্রকে হত্যা করা হবে পুত্রকে বাচাতে সেই গৃহস্থ পালিয়ে গেলেন পালাতে পালাতে উনি পবিত্র মক্কা শরীফে গেলেন মক্কা শরীফে বাবা আদম নামের একজন ধার্মিক পীর সব ঘটনা শুনে অনেক রাগ করলেন বাবা আদম সাড়ে সাতহাজার মুরীদ নিয়ে বিক্রমপুর আসলেন এখানে উনারা সবাই এক সাথে শব্দ করে আজান দিয়ে নামায পড়া শুরু করলেন উনি এজন্যে এখানে একটা মসজিদ ও  নির্মান করেন অঞ্চলের প্রথম মসজিদ হয়  সেটি  তাই এই মসজিদটির নাম দেওয়া হয় বাবা আদমের মসজিদ বল্লাল সেন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন


বল্লাল সেনের সেনাবাহিনীর সংখা ছিল অনেক বড় তারপরেও উনি প্রাসাদে বলে রেখেছিলেন সে যদি মারা যাই প্রাসাদের সব মহিলারা যেন সুইসাইড করে নেয় তবুও যেন কারও হাতে ধরা না দেয়  রানীরা তাকে জিজ্ঞেস করলো, কিভাবে আমরা তারা বুঝবে যে উনি  মারা গেছে।  উনি জানালেন তার জামার ভেতরে একটা কবুতর লুকিয়ে রাখবে আর উনি মারা গেলে সেই কবুতর ছাড়া পেয়ে উড়ে আসবে আর তা দেখে যেন তার পরে সব মহিলারা গন সুইসাইড করবে যুদ্ধে মুসলমানরা হেরে গেল বাবা আদম তিনি অনেক ধার্মিক ছিলেন তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রেও নামায পড়ছিলেন কিন্তু বল্লাল সেনের সৈন্যরা তার চুল পরিমান ক্ষতি করতে পারলো না বাবা আদম নামায শেষ করার পর বল্লাল সেনের সঙ্গে মুখো-মুখি লড়াই হলো বাবা আদম তখন এক পর্যায় বললেন আমার আল্লাহর ইচ্ছে আমি  মারা যাব তোমার হাতে নও চালাও তলোয়ার বল্লাল সেন তরবারী চালালেন কিন্তু তার তরবারী উনাকে একটুও আহত করতে পারলো না আবারও বাবা আদম বললেন শুন আল্লাহ চান না  আমার মৃত্যু হোক কোন কাফিরের তলোয়ারে তুমি আমার তলোয়ার নিয়ে আমাকে মারও   এবারে বাবা আদমের তলোয়ার নিয়ে রাজা বল্লাল সেন  তাকে আঘাত করলেন। আর তখনই  বাবা আদম শহীদ হন বাবা আদমের মসজীদের পাশেই তার মাজারে উনার কবর মসজিদটা দুর্দান্ত সুন্দর গেলেই পবিত্র অনুভতি হয় জায়গাটার নাম সিপাহীপাড়া এখানেই বাবা আদম বল্লাল সেনের সাথে লড়াই করেন বাবা আদমকে হত্যার পর গায়ে লেগে থাকা রক্ত ধুতে বল্লাল সেন নদীর পানিতে ঝুকেন ঝোকার ফলে চান্স পেয়ে উনার কবুতরটা পালিয়ে যায় বল্লাল সেন বিপদ বুঝতে পেরে দ্রুত প্রাসাদে ফেরেনততোক্ষনে দেরী হয়ে গেছে কবুতর দেখে রানীরা সবাই বিশাল অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে তাতে আত্মাহুতি দেন শোকে দুঃখে কাতর বল্লাল সেন নিজেও আত্মহত্যা করেন
বল্লাল সেনের মৃত্যুর কারন তিনি নিজেই আর তার হাতেই নিহত বাবা আদম লড়াইয়ে পরাজিত হয়েও উনি জয়ী বল্লাল সেনের মৃত্যুর পরে বৌদ্ধরা আবার সিংহাসনে বসে কিন্তু বেশী দিনের জন্যে না মুসলমানরা আসা শুরু করেছে খুব দ্রুত ক্ষমতা চলে যায় তাদের হাতে

 মুন্সীগঞ্জে প্রভাবসালীদের সাথে প্রশাসনের কিছ অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত

মুন্সীগঞ্জের কিছূ প্রভাব সালীদের ও অসাধু কমকতা দের দাপটে দখলছাড়া হয়ে যাচ্ছে প্রাচিন বিক্রমপুরের রাজা বল্লাল সেনের এই ঐতিহ্যবাহী রামপাল দিঘীটি দিঘীটির চার পাশে নির্মান হচ্ছে বড় বড় ঘড় বাড়ী। আর এতে করে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে মুন্সীগন্জের তথা প্রাচিন বিক্রমপুরের ইতিহাস ঐতিয্য  দলি্লের অবস্থাতে গিয়ে দেখাগেছে, প্রায় ২২ শত ফুট দৈর্ঘ শত ফুট প্রস্থে এই বিশাল আকৃতির দিঘীটি একে বারে দখলের বাইরে আর কারনে ধিরে ধিরে সংকুচিত হয়ে আসছে  দিঘীটির আয়াতন সংকুচিত হয়ে প্রায় অর্ধেক হয়েগেছে যেখানে একটি বিশাল আকৃতির দিঘি দিঘীর চার পাড়ে নির্মান করা হচ্ছে কাচা-পাকা ঘড় বাড়ী ‍
স্থানীয় জনগন অভিযোগ করে যখন যে সরকার মতায় আসে সেই সরকারের লোকজন স্থানিয় ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজেশে শুরু হয় দিঘীর পার দখলের প্রক্রিয়া পরে ধিরে ধিরে শুরু হয় দিঘীর ভূমি দখলের কাজ বর্তমানে দিঘীর দনি-পূর্ব পাড় দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে এবং ঠিক তার উল্টো পাড়ে নির্মান করা হচ্ছে বিশাল আকৃতির বহুতল ভবন
আর বিগত কিছু দিনের মধ্যে দিঘীর পশ্চিম পারে নির্মান করা হয়েছে আরো একটি দ্বিত্বল ভবন একাজে কেউ বধা প্রদান করলে তাদের মার ধর করার হুমকি দেয় ভূমি দস্যুরা এবং জায়গা নিজেদের বলে দাবী করে ইতিহাস থেকে জানা গেছে মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের ঐতিহ্যের মধ্যে বাবা আদম শাহী মসজিদ, ইদ্রাকপুর কেল্লা, বজ্রোযোগীনি তে অতিস দিপংকর এর বাড়ী, টঙ্গীবাড়ীর কালীবাড়ী, সোনারং এর জোরা মঠ, আউটশাহীর শাহী মসজিদ, রাজা বল্লাল সেনের রাম পাল দিঘী, কোদাল ধোয়া দিঘী রাজা বল্লাল সেনের বাড়ী অন্যতম এগুলির প্রত্যেকটিরই আলাদা আলাদা ইতিহাস রয়েছে
লোক মুখে শোনা যায় রাজা বল্লাল সেনের দিঘীটির ইতিহাস এটি একটু ভিন্ন রকম সেই এলাকার বৃদ্বদের মুখ থেকে জানা গেছে, যে একটি সময় প্রাচিন বিক্রমপুরের রাজধানী রামপাল অঞ্চলে খুব পানির সমস্যা ছিল আর তাই রাজা বল্লাল সেনের মা অঞ্চলের পানির সমস্যা দুর করার জন্য একটি বড় ধরনের পানির উৎস খনন করার নির্দেশ দেয়  রাজা বল্লাল সেন ছিল মায়ের খুব ভক্ত মায়ের নির্দেশ পালনের জন্য বড় দিঘী খননের উদ্দেগ নেন তিনি কিন্তু কথা হচ্ছে কত টুকু হবে দিঘীর দৈর্ঘ প্রস্থ তা নির্ধারন করার জন্য সির্ধান্ত নিলেন তার মা সকাল থেকে পায়ে হেটে যেখানে গিয়ে কালান্ত হয়ে বসবেন সেটা হবে দৈর্ঘ আর তার পর প্রস্থে যতটুকু যেতে পারবেন সেটা হবে প্রস্থ
এইভাবে দৈর্ঘ ও প্রস্থ নির্ধারনের পরে কয়েক হাজার শ্রমীক দিয়ে কাজ করা শুরু করে  দিঘীটি খনন করেন। আর  সময় শ্রমীকরা কাজ শেষ করে কোদাল ধোয়ার জন্য যে যায়গা টা তৈরী করে সেটি  হলো এখন কোদাল ধোয়ার দিঘী নামে পরিচিত রাজা বল্লাল সেনের দিঘী দখল সম্পর্কে বলা হলে দিঘীর পাশে বসবাস কারীরা দাবী করেন দিঘীর জায়গায় নয় এটি তারা নিজেদের ব্যাক্তি মালিকানা জায়গায় ঘড় বাড়ী নির্মান করছেন ৃতবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামপাল এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, যারা দিঘীর পারে ঘর-বাড়ী নির্মান করছে তারা দিঘীরপারে জায়গাটি নিজেদের জায়গা বলে দাবী করছে

তারা ভূমি অফিসের অসাধূ কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে প্রভাব সালীদের মতার বলে জায়গা গুলি দখল করে নিচ্ছে বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক আজিজুল আলম জানান, দিঘীর জায়গা দখল সমম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই আসলে এসব ঐতিহ্যবাহী জায়গা গুলি প্রশাসনের একার পে রা করা সম্ভব নয় গুলি রায় স্থানীয় বাবে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে কেউ যদি দিঘীর জায়গা নিজের বলে দাবী করে তাহলে তার কাগজ পত্র দেখা হবে আর কেউ যদি সরকারী ভূমি দখল করে তাহলে তাদের কে ছাড় দেওয়া হবে না রাজা বল্লাল সেনের দিঘী রার জন্য তিনি খূব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের আস্বাশ দেন সর্বপরি প্রাচিন বিক্রমপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে রা করতে হলে সমস্ত ভূমি দস্যুদেরকে কঠোর হস্থে দমন করতে হবে বলে মনে করে অভিঙ্গ মহল


0 Comments