চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার



আপনার কি কখনও কখনও চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হয়ে যাওয়া এবং ভীষণ রকম চুলকানির মতো সমস্যাগুলি হয়? হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। এমনটা হয় তো! এই সমস্যাগুলিই আমাদের জানান দিতে থাকে যে আমাদের চোখ কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, নয়ন যুগলের অসুস্থ হতেও যে আর দেরি নেই, তাও এই লক্ষণগুলি দেখেই প্রমাণ পাওয়া যায়। এমন অবস্থায় অনেকেই আমরা কিছুই করি না। কিন্তু যেটা করা উচিত, তা হল কিছু খাবারের নিয়ম, কিছু অভ্যাস ত্যাগ করা, কিছূ রুটিন তৈরি করা আর  ব্যায়াম, যা চোখের ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিষয়গুলো ধাপে ধাপে  জেনে নিন।

আমাদের শরীরের অত্যন্ত মূল্যবান স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ। ফলে চোখের যত্ন নেয়া আমাদের জন্য আবশ্যক। কখনও নিজেদের অজান্তে আবার কখনও বা কিছু অভ্যাসের করণে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে ফেলছি আমরাই।

চিকিৎসকদের মতে, সকল অভ্যাস বদলাতে পারলে জ্যোতি কমার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান। যা কিনা চোখের জ্যোতি কমার অন্যতম কারন।

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ব্যবহার সব আজকাল জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। ফলে সব অভ্যাস পুরোপুরি বাদ দেয়া যায় না। বিশেষ করে রাতে আলো নিভিয়ে চোখের কাছে মোবাইল রেখে তাতে সিনেমা দেখা বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট, কাড়ে নিচ্ছে চোখের দৃষ্টি।

ধূমপানে আসক্তি, কেবল হার্ট নয়, ধোঁয়া থাবা বসাচ্ছে আপনার চোখেও। ক্যাটারাক্ট তো বটেই, বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশানকেও (রেটিনার অসুখ) ত্বরান্বিত করে। দৃষ্টিশক্তি কম হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে এই ধূমপানকেই চিহ্নিত করছেন চিকিৎসকরা।

চোখের অসুখ থাকলে তো সময় অনুযায়ী চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। অসুখ না থাকলেও বছরে দুবার চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া খুবই প্রয়োজন। এই কাজে অবহেলা করবেন না।

চোখের জ্যোতি বাড়ার উপায়

.ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি করে যথা: মিষ্টি পেঁপে, কাঁঠাল, কুমড়া, কালো কচু শাক, হেলেঞ্চা শাক, পুঁই শাক, লাউ শাক, ধনিয়া পাতা, পাট শাক, গাজর, মিষ্টি আলু, ডিম, কলিজা, মলাঢেলা ছোট্ট মাছ।

. সব সময় চোখকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে, চোখকে ধূলিকণা থেকে বাঁচাতে হবে,

. বেশী করে কোরআন শরীফপাঠ করুন আল্লাহর রহমতে দৃষ্টিশক্তি কোনো দিন কমবে না,

. মোবাইল, কম্পিউটার, টিভির ক্ষতিকর তেজক্রিয় রশ্মি থেকে চোখকে দূরে রাখুন,

. চোখে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার এর পরামর্শ নিন।
পুনরায় আগের মত দৃষ্টিশক্তি ফেরত না পেলেও কিছু ব্যায়াম খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন করে দৃষ্টি শক্তি আবার বাড়িতে দিতে পারেন। চোখের বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম আছে যেগুলো আপনি নিয়মতি করতে পারেন। চোখের জন্য এরোবিক ব্যায়াম খুব কার্যকরি। তাছাড়া সাঁতার টেনিস খেলা চোখের জ্যোতি বাড়িয়ে দিতে পারে।

যে সব খাদ্য দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে:-

) এলাচ গ্রাম মাত্রায় সকালে খেলে এক মাস থেকে ৪০ দিনের মধ্যে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি দূর হয়। চোখ ঠাণ্ডা হয়, চোখের জ্যোতি বাড়ে।

) রাতের বেলায় একটা পাত্রে দুচামচ ত্রিফলা চূর্ণ ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে জল দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন অথবা জল নিয়ে চোখের ওপর ছিটে দিন। এতেও চোখের জ্যোতি বাড়ে। এমনকি বৃদ্ধাবস্থাতেও চোখ নির্মল সতেজ থাকবে।

) পুষ্টিবিদদের মতে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, বিটা ক্যারোটিন লিউটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে উপকারী। ওমেগা- ফ্যাটি এসিড প্রধানত আসে মাছ থেকে। এছাড়া ফ্লাক্স সিডস, ওয়ালনাটস, পেশতা বাঁধাকপিতে পাওয়া যায় এধরনের চর্বি। আর বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় গাজর এবং সবুজ শাক-সবজি, ফলমূলে। লিউটিন পাওয়া যায় ডিমের সাদা অংশে। চোখের জ্যোতি বাড়াতে এই লিউটিন সহায়ক।

) ডিমের সাদা অংশ ছাড়াও সবুজ শাক-সবজিতেও থাকে প্রচুর লিউটিন। চোখের জ্যোতির জন্য ক্ষতিকর খাবারেরও একটি তালিকা দিয়েছেন পুষ্টিবিদগণ। যেসব খাদ্য কম খাওয়া উচিত অথবা পরিহার করা উচিত তা হচ্ছে সুগার, প্রক্রিয়াজাত ময়দা, ট্রান্সফ্যাট (বনস্পতি) ধূমপান।

) যদি দেখা যায় চোখের দৃষ্টি ক্রমশঃ স্তিমিত হয়ে আসছে তাহলে কমলা লেবুর রসে বাটা গোলমরিচ সৌন্ধব লবণ মিশিয়ে সকাল-বিকাল সেবন করতে হবে। অন্ততঃ তিনমাস এভাবে নিয়মিত সেবন করতে হবে।

) এক কাপ গাজরের রসে পৌনে এক কাপ পালং বা চৌলাইয়ের শাকের রস মিশিয়ে সকালে সূর্যোদয়ের সময়ে এবং বিকালে সূর্যাস্তের সময়ে নিয়মিত সেবন করতে পারলে সেবনকারীর চশমার দরকার হবে না কোনো দিন।

) শোয়ার সময় সপ্তাহে তিন দিন তুলোর মোটা পলতে দুধে ভিজিয়ে চোখে রেখে তার ওপর পটি বেঁধে দিলে চোখ ভালো থাকে। আবার কখনো কখনো ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা শীতল স্বচ্ছ দুধ দুতিন ফোঁটা চোখে দিলে চোখ শীতল থাকে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি কখনো ক্ষীণ হয় না।

) বাদামের -১০ টি দানা (অর্থাৎ শাঁস) রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে খানিকটা দুধ খেয়ে নিতে হবে। এতে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ার সঙ্গে বলবৃদ্ধিও হবে।

) ধনে পিষে নিয়ে তার রস বের করে দুফোঁটা করে প্রতিদিন দুচোখে দিলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি হয়

আসুন জেনে নেওয়া যাক কী সেই ব্যায়ামগুলি...

. হাতের তালু আর চোখ
খুব ব্যস্ত নাকি কম্পিউটারেতাহলে বন্ধু একটু সময় বের করে কয়েক মিনিট হাতের তালুটা চোখের উপর রাখুন দেখি! তবে চোখের উপর চাপ দেবেন না যেন! এমনটা কয়েক মিনিট করে রাখলেই দেখবেন মন এবং চোখের স্ট্রেস কমতে থাকবেসেই সঙ্গে চোখের ক্লান্তিও দূর হবেআর চাখের ক্লান্তি দূর হলে চোখের কোনও ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনি দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না

. কথায় কথায় চোখ পিটপিট করতে ভুলবেন না যেন!
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে কম্পিউটার, মোবাইল বা যে কোনও ডিজিটাল স্ক্রিনে কাজ করার সময় আমাদের চোখের পাতা একেবারেই পড়তে চায় নাফলে চোখের উপর চাপ বাড়তে শুরু করেসে কারণেই যারা দিনের বেশিরভাগ সময় কম্পিউটারে কাজে করেন, তাদের কিছু সময় পরপর চোখ পিট পিট করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরাএমনটা করলে চোখের ক্লান্তি দূর তো হয়ইসেই সঙ্গে চুলকানি এবং ড্রাই আইয়ের মতো সমস্যাও দূর হয়এখন প্রশ্ন হল কতবার চোখ পিট পিট করতে হবে? চিকিৎসকেরা বলে থাকেন কম করে সেকেন্ড যদি এমনটা করা যায় তাহলে চোখের উপকার পাওয়া যাবে

. বলের মতো ঘোরাতে থাকুন চোখের মণি
আপনি কি চান বয়স বাড়লেও চোখ তরতাজা থাকুক? তাহলে বন্ধু দিনের মধ্যে কম করে মিনিট খরচ তো করতেই হবে! আর এই দু মিনিটে করবেন কী? তেমন কিছু না! প্রথমে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং তারপর ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চোখের মণিকে ঘোরাতে হবেতবে পুরো ব্যায়ামটা খুব ধীরে ধীরে করবেনএমনটা প্রতিদিন - মিনিট করলেই দেখবেন দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করেছেসেই সঙ্গে মনযোগও বৃদ্ধি পাবে

. ঠান্ডা-গরম পানিতে সেক দিতে ভুলবেন না
একটা বাটিতে গরম পানি আর আরেকটা বাটিতে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে নিনতারপর একটা তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে কিছু সময় চোখের ওপর রাখুনতারপর পানি দিয়ে একই ভাবে চোখে সেক দিনএমনটা কয়েক মিনিট করলে সারা দিন ধরে কাজ করতে করতে চোখের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিক হতে শুরু করবেসেই সঙ্গে কান্তি দূর হবে এবং দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটবে

. ফোকাস শিফটিং এক্সারসাইজ
চোখের পেশির ক্ষমতা বাড়াতে এই ব্যায়ামটি দারুন কাজে আসেএক্ষেত্রে চোখের একেবারে সামনে যে বস্তুটি আছে তার দিকে তাকান সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পর তার থেকে একটু দূরে রয়েছে এমন কিছুর দিকে এক দৃষ্টিতে পুনরায় সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুনএমনটা করতে থাকলে চোখের পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টিশক্তিও বাড়তে শুরু করে


0 Comments