বিছানায় শুয়ে শুয়ে বোরিং হয়ে গেছি। বেড বক্সের উপর থেকে চশমাটা হাতরে নিলাম আর খাটের পাশ থেকে লাঠিটা নিয়ে নাতনীর ঘরে গেলাম গল্প করব বলে। গিয়ে দেখি, ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। আমি যেতেই বলল, নানী আপু তুমি বস। আমি টিউশনে যাব। বসলাম ওর ঘরে। ল্যাপটপটা খোলাই ছিল। চশমা চোখে দিয়েও ভালো দেখতে পারি না। হঠাত মনে পড়ল আজ কত যুগ ধরে ফেসবুকে যাই না। অথচ যে মেয়েটা না এখনকার বুড়িটা একসময় দিন রাত ফেসবুকে চ্যাটিং, ছবি আপলোড দেওয়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো। অনেক কষ্টে পাসওয়ার্ডটা মনে করলাম। আইডিটা লগ ইন করে দেখি ইনবক্সে ৮৬৭৮ টা ম্যাসেজ। আইডিটা চেনাই যাচ্ছে না। সব অপরিচিত লাগছে। ফ্রেন্ড সংখ্যা ছিল ৪৭৮৮ জন। কিন্তু এখন চ্যাট লিস্টে আছে ২৮ জন। বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় হয়ত ওরাও আর ফেসবুক চালায় না। ইনবক্সে ঢুকতেই আমার ক্লোজ কয়েকটা ফ্রেন্ডের ম্যাসেজ। বন্ধু শরীরটা ভালো নেই। বেশিদিন হয়ত বাচব না। ম্যাসেজটা ছিল ৫ বছর আগে। খবর পেয়েছি ৪ বছর আগেই সে মারা গেছে। আমার বেস্টিও ৯ বছর আগে মারা গেছে। ওর সাথে চ্যাটিং গুলো পড়ে খুব ভালো লাগছিপ। গ্রুপে ফ্রেন্ডদের সাথে কত মজা, আড্ডা এ সবই পড়ে আছে। ওদের অধিকাংশইই মারা গেছে। এরপর চ্যাট লিস্টের একদম শেষে পেলাম তার ম্যাসেজ। হ্যা আমার সেই পুরোনো ভালোবাসা। ওর কোন খবরই জানি না। কত ভালোবাসতাম দুজন দুজনকে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে বিয়েটা হয়নি । আজ অনেক দিন পর তার কথা মনে পড়ছে। তার আইডিটায় ঢুকলাম লাস্ট পোস্ট ছিল ১৬ বছর আগে। তার নাতনীর সাথে ছবি। আরো একটু নিচে যেতে দেখলাম তার ফ্যামিলির ছবি। সে, তার স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে আর নাতী- নাতনী। খুব হ্যাপি ফ্যামিলি। জিসানকে যেদিন শেষ দেখেছিলাম চুলগুলো সেই রকম স্টাইল দেওয়া, মুখ খোচা খোচা দাড়ি। কিন্তু এখন এই ছবি গুলোতে লম্বা সাদা দাড়ি।চুলগুলো সব সাদা। কিছু কিছু আবার মেহেদী দিয়ে লাল করা। পরনে সাদা পাঞ্জাবি, পাজামা। মাথায় টুপি। ঠিক বুড়ো দাদু। হা হা হা । হঠাত মোবাইলের স্ক্রীনে নিজের ছবিটা দেখলাম। হ্যা আমিও তো বুড়ি হয়ে গেছি। জিসান দেখলে নিশ্চয়ই বলত, বুড়ি দাদি। জিসান কি আজো বেচে আছে? জানি না, ওর আইডিটায় শেয়ার করা একটা পোস্ট পেলাম। একজন ওর আইডির স্ক্রীনশট দিয়ে লিখেছে, এই দাদু গতকাল আনুমানিক বিকেল ৫ টায় হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।।মুরব্বির জন্য আমরা সবাই জান্নাত কামনা করি। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুক আমিন। পোস্ট পড়েই থমকে গেলাম। পাচ বছর আগের পোস্ট। জিসান মারা গেছে তাহলে? হায়রে! কোথায় সেই একসাথে বাচব বলে কথা দেওয়া দিনগুলো। অজান্তেই চোখের কোনে পানি এলো। এরপর পরিচিত ফ্রেন্ডদের আইডিটা দেখছিলাম। ওদের আইডিটা এখনো প্রানবন্ত। কিন্তু ওরা প্রানবন্ত না। অনেকেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে। যে ফ্রেন্ডটা রোজ নতুন নতুন সেলিফি আপলোড দিত ও ২০ বছর আগে ক্যান্সারে মারা গেছে। খবর শুনে দেখতে গেছিলাম। মজার মজার জোক্স পোস্ট করা ফ্রেন্ডটার খবর জানি না। লেখক ফ্রেন্ডটা ৮ বছর আগেও একটক পোস্ট দিয়েছে ওর ছেলে ওকে বৃদ্ধা আশ্রমে ফেলে এসেছে এই নিয়ে। ওর সাথে যোগাযোগ নেই। এরপর আমার আইডিটায় গেলাম। এত ট্যাগের ভিড়ে নিজের শেষ পোস্টটা পাচ্ছিলাম না। হ্যা পেয়েছি ৩৩ বছর আগে আমার স্বামী আর মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলাম। সেই খানকার কয়েকটা পিক। আরো প্রিভিয়াস পোস্টগুলো পড়ে কখনো হাসলাম। কখনো কাঁদলাম।
হঠাৎ নাতনী ডাক দিল নানী আপু রেডি। টিউশনে যাব। ল্যাপটপ দেও।
আমি: ল্যাপটপ নিয়ে টিউশনে যাবি?
নাতনী: আরে তুমি আদি যুগের মানুষ বোঝো না? আমরা তো ভার্চুয়াল ক্লাস করি।
আমি: ল্যাপটপ নিয়ে টিউশনে যাবি?
নাতনী: আরে তুমি আদি যুগের মানুষ বোঝো না? আমরা তো ভার্চুয়াল ক্লাস করি।
আমি: ওহ! তা বই খাতা লাগে না?
নাতনী: ধূর! কি বল? ক্লাস করতে বই খাতা লাগে?
আমি: ওহ! লাগে না?
নাতনী: তোমাদের সময় লাগতো?
আমি: হ্যা লাগতো তো। তবে তখন আমরা বইয়ে পড়তাম দেশে ভার্চুয়াল ক্লাস হবে।
নাতনী: হা হা হা। টিউশনে খাতা - কলম লাগতো! দারুন ফানি! আচ্ছা আমি যাই টিউশন শেষে তোমাদের কালের গল্প শুনবো।
হ্যা এখনকার আধুনিক আমরা ২০৮০ সালের আদিম আমরা। আমাদেরও ওই যুগের ছেলে মেয়েরা আদি কালের মানুষ বলবে।
এটাই দুনিয়া।
ভালো লাগলে জানাবেন। ধন্যবাদ ☺"'
নাতনী: ধূর! কি বল? ক্লাস করতে বই খাতা লাগে?
আমি: ওহ! লাগে না?
নাতনী: তোমাদের সময় লাগতো?
আমি: হ্যা লাগতো তো। তবে তখন আমরা বইয়ে পড়তাম দেশে ভার্চুয়াল ক্লাস হবে।
নাতনী: হা হা হা। টিউশনে খাতা - কলম লাগতো! দারুন ফানি! আচ্ছা আমি যাই টিউশন শেষে তোমাদের কালের গল্প শুনবো।
হ্যা এখনকার আধুনিক আমরা ২০৮০ সালের আদিম আমরা। আমাদেরও ওই যুগের ছেলে মেয়েরা আদি কালের মানুষ বলবে।
এটাই দুনিয়া।
ভালো লাগলে জানাবেন। ধন্যবাদ ☺"'
0 Comments