ডিজনিল্যান্ড গিয়েছেন কখনো? যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম ক্যালিফোর্নিয়ার অন্তর্গত ‘এনাহিম’ শহরে ডিজনিল্যান্ড থিম পার্কটির অবস্থান। ১৯৫৫ সালে প্রথমবারের মতো ডিজনিল্যান্ড দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত থিম পার্কের ইতিহাসে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ থিম পার্ক বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশেও ডিজনিল্যান্ডের আদলে সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি করা হয়েছে একটি থিম পার্ক।
ম্যাজিক প্যারাডাইস নামের পার্কটি ঢাকার কাছেই কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত একটি বিনোদন কেন্দ্র।
শুরুটা কীভাবে?
ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ এর এপ্রিলে। কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে কোটবাড়ির সালমানপুরে পার্কটির অবস্থান। পার্ক
কর্তৃপক্ষের দাবি, এটিই বাংলাদেশের বৃহত্তম ফ্যামিলি এমিউজম্যান্ট পার্ক। পার্কটি
নকশাও করা হয়েছে পরিবারের নিয়ে একসাথে ঘুরার পরিবেশ তৈরির ব্যাপারটি মাথায় রেখে। পার্কটি
তৈরিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় দুইশ কোটি টাকা৷
ডিজনিল্যান্ডের আদলে তৈরি করা হয়েছে ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক এর বিশাল ফটক। ওয়াটার পার্ক, ২০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের রাইড, ডাইনোসর পার্ক, পিকনিক স্পটসহ ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয় দর্শনার্থীদের কাছে।
কী আছে ম্যাজিক প্যারাডাইসে?
সবুজ প্রকৃতি আর কৃত্রিমের ছোঁয়া মিলে মিশে একাকার পার্কটি। ভিতরে
ঢুকতেই চোখ চলে যাবে বিশাল এক নাগরদোলায়।
ম্যাজিক প্যারাডাইসকে সাজানো হয়েছে তিনটি অংশে। ড্রাই
পার্ক, ওয়াটার প্যারাডাইস এবং ডায়নোসর ওয়ার্ল্ড।
ড্রাই পার্কে প্রায় ১৬ টি রাইড সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফেরিস হুইল, ক্যাঙ্গারু জাম্প, টুইন ড্রাগন, ট্রেন, রোলার কোস্টার, বাম্পার কার, ফ্লাইং জেট ইত্যাদি। এই অংশের প্রতিটি রাইড সুবিধা পাওয়া যাবে ১০০ টাকায়। ওয়াটার বোটের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা।
ওয়াটার প্যারাডাইসে পানিতে থাকে বা পানি সম্পর্কিত বেশ কয়েক ধরণের রাইড সুবিধা রেখেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়েভ পোল, ফ্যামিলি পোল, ল্যাজি রিভার, স্প্ল্যাশ পোল ও রেইন ডান্স।
উচ্চ শব্দের গানে, ঢেউয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আনন্দ বলে বুঝানো যাবে না। বাচ্চাদের জন্যও ওয়াটার পুলে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ছোট পাহাড়ের উপর তিনটি ওয়াটার রাইড আছে যা আপনার পছন্দ হতে বাধ্য।
এই সুবিধা গুলো পেতে সুইমিং কস্টিউম পাওয়া যায় সেখানে, মূল্য ১০০ – ২৫০ টাকা। ১০০ থেকে ২০০ টাকা মূল্যে পাওয়া যাবে টিউবও। রাইড সুবিধা নিতে একদিনের জন্য ভাড়া গুণতে হবে জনপ্রতি ১০০ টাকা।
পার্কের তৃতীয় এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ডায়নোসর ওয়ার্ল্ডকে। পাহাড়ের
সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠতেই ডেকে উঠবে ডায়নোসর। ডায়নোসর?
ঠিক ধরেছেন। ডায়নোসরই। তবে
সেটা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা। কার্ভড
পলিস্টিরিন ফোম দিয়ে পার্কের একটি অংশে ডায়নোসরের কৃত্রিম অবয়ব তৈরি করা হয়েছে। ফাইবার
গ্লাসের আবরণের উপর আঁকা হয়েছে ডায়নোসরের অবয়ব।
হরেক রকমের ডাইনোসরদের দেখা মেলে এখানে। স্কিন টেক্সচার, চোখ, জিহবা, লেজ আর শরীরের মুভমেন্টের সাথে সাউন্ডবক্সের গর্জন- সব মিলিয়ে আসল ডায়নোসর থাকার বাস্তবিক এক পরিবেশই তৈরি হয়। ছোট বাচ্চারা দেখলে ভয় পেয়ে যাবে নির্ঘাত। খেয়াল না করে উপরে উঠলে আপনিও হাজার বছর পুরনো ডায়নোসরের যুগে চলে গেছেন ভেবে ভয় পেতে পারেন। ডায়নোসর আছে বলে এই পার্ককে জুরাসিক পার্কের সাথেও তুলনা দিতে পারেন।
অন্যান্য সুবিধা আছে তো?
একটা পার্কে শুধু যে রাইড কিংবা দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ থাকলেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়ে এমন ধারণা বদলেছে অনেক আগেই৷ পার্কে থাকতে হয় আনুষাঙ্গিক সকল সুবিধা৷ ম্যাজিক প্যারাডাইস কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করেছে সেসব সুবিধা দিতে। পার্কে
আছে খাওয়া-দাওয়াসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আছে নামাজের স্থান ও মহিলা-পুরুষদের জন্য আলাদা স্যানিটেশন ব্যবস্হা। তাই নির্দ্বিধায় পরিবারসহ একটা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন এই পার্কে।
কীভাবে যাবেন ম্যাজিক প্যারাডাইস?
ঢাকা থেকে সড়ক পথে অর্থাৎ বাসে করে কুমিল্লা যেতে এখন মাত্র ২ ঘন্টারও কম সময় লাগে। তাই বাসে স্বাচ্ছন্দ্যে চলে যেতে পারেন পার্কটিতে। ম্যাজিক প্যারাডাইস যাওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে ঢাকা থেকে কুমিল্লা টমছমব্রীজ গামী এশিয়া ট্রান্সপোর্ট, তিশা প্লাস অথবা এশিয়া এয়ার কন/রয়েল কোচ/প্রিন্স দিয়ে সরাসরি কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড নেমে সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে যেতে পারবেন। কুমিল্লা যাওয়ার বাস গুলো কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে ছেড়ে যায়।
এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সহজেই কুমিল্লা আসতে পারবেন। চট্টগ্রামগামী (সুবর্ণা ও সোনার বাংলা বাদে) প্রায় সকল ট্রেনই কুমিল্লা স্টেশনে থামে। তবে ট্রেনে আসলে আপনাকে নামতে হবে কুমিল্লা স্টেশনে। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে কোটবাড়ি যেতে পারবেন। ট্রেনে পৌঁছাতে অবশ্য বাস থেকে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগবে।
চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা আসতে প্রিন্স কিংবা সৌদিয়া বাস বেছে নিতে পারেন। অথবা যে কোন ঢাকাগামী বাসে করেই আসতে পারবেন, আপনাকে কুমিল্লায় নেমে যেতে হবে। আবার ঢাকা গামী ট্রেনে করে বাসের চেয়ে দ্রুত কুমিল্লা পৌঁছাতে পারবেন। অথবা দেশের অন্য কোন জায়গা থেকে আপনার সুবিধামত বাহনে কুমিল্লায় আসতে হবে।
কুমিল্লা থেকে ম্যাজিক প্যারাডাইসে যেতে যদি বাসে আসেন আর বাস কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোড হয়ে যায় তাহলে কোটবাড়ি বাস স্ট্যান্ড মোড়ে নেমে পড়ুন। আর যদি অন্য কোথাও নামেন তাহলে যে জায়গাতেই আসেন সেখান থেকে অটো রিক্সা বা সিএনজি দিয়ে কোটবাড়ি মোড় চলে আসতে পারেন। কোটবাড়ি মোড় থেকে ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক যাওয়ার অটো রিক্সা বা সিএনজি পেয়ে যাবেন।
খরচ কেমন ম্যাজিক প্যারাডাইসে?
ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে। পার্ক
এর প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০০ টাকা। প্রবেশ
মূল্য দিয়ে আপনি ডায়নোসর ওয়ার্ল্ড এবং চা খাওয়ার সুবিধা পাবেন। ওয়াটার
পার্ক এর প্রবেশ মূল্য ৩০০ টাকা, বিভিন্ন রাইডের টিকেট ৫০-১০০ টাকা করে। একসাথে
কয়েক রাইড মিলিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ আছে।
আপনি চাইলে আলাদা আলাদা ভাবে না টিকেট কিনে একসাথে প্যাকেজের টিকেট ও কিনতে পারবেন। ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকায় পাওয়া যাবে প্যাকেজগুলো। ছয় বছরের নিচে বাচ্চাদের কোনো প্রবেশ মূল্য প্রয়োজন হবে না। এছাড়া পিকনিক বা অনেকজন মিলিয়ে গেট-টুগেদার করতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে।
আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
যদি আপনি অনেক দূর থেকে ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কে যান, তাহলে হয়তো খরচ ও সময়ের হিসেবে
আপনার জন্যে ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে। সে
ক্ষেত্রে এই পার্কের আশেপাশের বা কুমিল্লা শহরে দেখার মতো দর্শনীয় কিছু স্হানে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। ম্যাজিক
প্যারাডাইসের কাছেই রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর।
কুমিল্লা শহরে রয়েছে ধর্মসাগর দিঘি অথবা যেতে পারেন কুমিল্লা সিলেট রোডের পাশের ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে। তাই
ম্যাজিক প্যারাডাইস যাওয়ার সুবাধে ঘুরে আসতে পারেন আশেপাশের এসব দর্শনীয় স্হান থেকেও।