কেন চুল পড়ে?
১। এনড্রোজেন হরমোনঘটিত কারনে চুল পড়তে পারে যদি রোগী বয়স্ক হয়ে থাকেন। পারিবারিক ভাবে তিনি এটি বহন করে থাকতে পারেন। এই ধরনের চুল পড়ায় আস্তে আস্তে কপাল চওড়া হতে থাকে। বাচ্চাদের এটা হয় না।
২।চুলে মাত্রারিক্ত ক্যামিকেলস এর ব্যাবহার- চুলে ডাই ব্যবহার, ব্লিচ, কার্ল এবং হেয়ার ড্রায়ার এর ব্যবহার—বেশি গরম বাতাসে চুল পড়ে যায়।
৩।শাওয়ারের পানি যেখানে প্রতিদিন বেশি লাগে বিশেষ করে বাথ্রুমে ঝর্নায় গোসল করলে।.
৪। জ্বর, মানসিক চাপ, সার্জারি পরবর্তি সময়ে।
৫। ফানগ্যাস (রিং ওয়ার্ম) সংক্রমণ।
৬। এলোপেসিয়া এরিয়াটা- যেটা ফ্যামিলিগতভাবে হয়। শরীরের ইমিউন সিস্টেম হেয়ার ফলিকেলসের বিরুদ্ধে কাজ করে।
৭। নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়ে আঘাত করার বদঅভ্যাস। এটি একধরনের মনোরোগ। একে Trichotillomania বলা হয়।
৮। থাইরয়েড হরমোনের অভাবজনিত সমস্যা।
৯। সুষম পুষ্টির অভাব।শরীরে আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, বায়োটিন, ভিটামিন এর অভাবে চুল পরে যেতে পারে।
১০। ক্যানসার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহূত কেমোথেরাপি ও র্যাডিয়েশনের কারনে।
চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজানোর ৬ উপায়
অনেকেই চুলের নানা রকম সমস্যায় ভোগেন। এর মধ্যে চুল পড়ে যাওয়া অন্যতম। নারী বা পুরুষ সবাই এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। শীতকালে তো চুল পড়ার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নতুন চুল গজানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান সবাই।
নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবার আর চুল পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই। তবে কয়েকটি নিয়ম মানলেই চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজাবে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন উপায়ে নতুন চুল গজাবে-
হেয়ার ম্যাসাজ: ম্যাসাজ করলে নতুন চুল গজাবে খুব শিগগিরই। এজন্য তেল বা হেয়ার মাস্ক মাথার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে ও নতুন চুল গজাবে। নিয়মিত চুল চিরুনি করতে ভুলবেন না যেন!
নারকেল তেল: চুলের জন্য নারকেল তেল সবচেয়ে কার্যকরী। এ তেল ব্যবহারে চুল ভেতর থেকে পুষ্টি পায়। নারকেল তেলে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এজন্য দ্রুত চুল লম্বা হয়, সেইসঙ্গে নতুন চুল গজায়। এ ছাড়াও চুল হয় ঝলমলে ও কোমল।
খাবারে ওমেগা রাখুন: চুলের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী এক উপাদান হলো ওমেগা। চুল পড়ার সমস্যা রোধে ও নতুন চুল গজাতে উপাদানটি কাজ করে। তবে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ওমেগা গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপানের প্রভাব চুলের উপরও পড়ে থাকে। এতে চুলের ফলিকল নষ্ট হয়। ফলে চুল পড়া বেড়ে যায়। এ কারণেই ধূমপায়ীদের চুল দ্রুত পেকে যায় ও টাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রোটিন গ্রহণ: প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। যখন আপনার শরীর পর্যাপ্ত প্রোটিন পাবে না; তখনই চুল পড়া শুরু হয়। দিনে অন্তত ৫০-১০০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। তবে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখেই তা গ্রহণ করতে হবে।
খাবারে ভিটামিন: পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। শরীর যদি নির্দিষ্ট পরিমাণে বিভিন্ন ভিটামিন না পায়, তবে চুলেও পুষ্টি পৌঁছায় না। এজন্য সুষম খাবার খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। এতে নতুন চুল গজাবে দ্রুত আর চুল পড়াও বন্ধ হবে।
তবে চুলের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো- ভিটামিন-এ, বায়োটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, আয়রন এবং জিঙ্ক।
চুল পড়া বন্ধ করবে এই খাবারগুলো
চুল পড়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। আমাদের চুল পড়ার অন্যতম কারণ হলো ভুল খাদ্যাভ্যাস। আমরা না বুঝেই এমনসব খাবার খাই যা চুলের পক্ষে ক্ষতিকর। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি শরীরে না পৌঁছালে চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই এমনকিছু খাবার খাওয়া উচিত যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। চলুন জেনে নেয়া যাক-
চুল পড়া বন্ধ করতে খাদ্যতালিকায় রাখুন ডিম। ডিম প্রাকৃতিক প্রোটিনের অন্যতম সেরা উৎস। ডিম ভিটামিন বি১২, জিংক, আয়রন, প্রোটিন, বায়োটিন এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের সবচেয়ে ভালো উৎস যা চুলের জন্য বিশেষভাবে জরুরি। এছাড়া প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যাতে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার থাকে সেদিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
বাদাম, ফ্লাক্স সীড, আখরোট, তিল প্রভৃতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা চুলের ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
মাছ হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড চুলের গোঁড়া মজবুত করতে সহায়তা করে এবং চুল পড়া রোধ করে। তাই সপ্তাহে অন্তত তিনদিন খাদ্যতালিকায় মাছ রাখার চেষ্টা করুন।
আয়রনের অভাবে অনেক সময় চুল পড়ে যায়। যখন শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয় তখন চুলের গোড়ায় পুষ্টির অভাব হয়, চুলের গোড়া আলগা হয়ে চুল পড়া শুরু হয়। তাই আয়রনের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি খান। সবুজ শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের গোঁড়া মজবুত করে, মাথার ত্বক ভালো রাখে।
নিয়মিত লেবুর রসের শরবত খেলে তা চুল পড়া রোধে দারুণ কার্যকরী হবে। কমলায়ও প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
গাজরে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে যা চুলের ফলিকলকে মজবুত করে এবং চুলকে পাতলা হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। পাতলা চুলের পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই চুল পড়া রোধে নিয়মিত গাজর খান।
দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারে প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা চুলের বেড়ে উঠা এবং নতুন চুল গজানোর জন্য সবচাইতে জরুরি। তাই চুলের সুস্থতা চাইলে প্রতিদিন দুধ পান করুন।
কিছু সাধারণ যত্ন
১. নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা এবং আঁচড়ানো। কিন্তু অতিরিক্ত আঁচড়ানো চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়।
২. পেঁয়াজ এর রস চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন | নিয়মিত ব্যবহার করলে নতুন চুল গজাবে।
৩. মেহেদি পাতা কিছু দিন ঘন ঘন ব্যবহার করুন। পাতা বেটে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৪. শুকনা আমলকি পানিতে ভিজিয়ে লাগাতে পারেন।
৫. খাঁটি কালো জিরা তেল বা নির্যাস বেশি বেশি ব্যবহার করতে পারেন।
কথায় বলে যতনে রতন মেলে। নিয়মিত যত্ন নিন, পদ্ধতিগুলো মেনে চলুন। দেখবেন আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে শুরু করেছে।