একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর নিয়মিত
ফেসিয়াল করাটা জরুরী।
কিন্তু সময়ের অভাবে বা
অতিরিক্ত খরচের কথা ভেবে
পার্লারে যাওয়া হয় না। কিন্তু
এই তাল বাহানায় ত্বকের
তো বারোটা বেজে যায়। তাই
আপনাদের সুবিধার্থে, আপনাদের সুবিধা মত সময়ে
স্বল্প খরচে ত্বকের যত্নে
গোল্ড ফেসিয়াল
করার উপায় বলে দিচ্ছি।
ফেসিয়াল
টি ৩৫+ হলে ব্যবহার করা ভালো তবে
আপনার ত্বক যদি একান্তই
আপনার অবাধ্য হয়ে যায়
তাহলে আগেই করতে পারেন,
তবে সেটা ২৮ এর
আগে করবেন না।
ত্বক ভেদে ফেসিয়াল
রুক্ষ
বা শুষ্ক ত্বক হলে
গোল্ড ফেসিয়াল । সবার
ত্বকের ধরন এক না,
কারোটা তৈলাক্ত আবার কারোটা স্বাভাবিক। বুঝতে
পারছেন না আপনার ত্বকের
ধরন কোনটি? চিন্তার কোন
কারণ নেই। আমি
বলে দিচ্ছি কীভাবে যাচাই
করবেন আপনার ত্বকের ধরন।
ত্বকের ধরন যাচাই এর উপায়
রাতে মুখে কিছু লাগাবেন
না। সকালে
উঠে মুখ না ধুয়ে
হাতে কিছু টিস্যু পেপার
নিয়ে সোজা আয়নার সামনে
চলে যান। এবার
টিস্যু পেপার মুখে চেপে
ধরুন যদি পেপার শুষ্ক
থাকে তাহলে বুঝবেন আপনি
শুষ্ক ত্বকের অধিকারী।
যদি তেল তেলে হয়
তবে বুঝবেন আপনার
ত্বক তৈলাক্ত। স্বাভাবিক
ত্বক হলে পেপার শুকনো
থাকবে কিন্তু আপনি নিজেই
এক ধরনের মসৃণ ভাব
অনুভব করবেন। টিস্যু
পেপারে যদি কিছু জায়গায়
তেল, কিছু জায়গায় শুষ্ক
থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার
ত্বক মিশ্র।
গোল্ড ফেসিয়ালের উপকারিতা
ত্বকের কোষ উদ্দীপকের সহায়তা করেঃ গোল্ডে
উপস্থিত আয়ন, যা কোষ,
নার্ভ ও শিরা উপশিরাগুলিকে
উদ্দীপিত করে । যার
ফলে আমাদের ত্বকে রক্ত
সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং
ত্বক দেখায় সজীব ও
সতেজ ।
বলিরেখা ও দাগছোপ কম করেঃ গোল্ড
আমাদের ত্বকের কোষগুলিকে সজাগ
করতে সহায়তা করে, যার
ফলে আমাদের ত্বক হয়
দাগছোপ মুক্ত, বলিরেখাহীন ও
টানটান । যার
কারনে ত্বক হয়ে ওঠে
চমত্কার ।
ত্বকের শুষ্কতা হ্রাস করেঃ বিশেষত
শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও
রুক্ষ দেখায় । এর
থেকে মুক্তি পেতে গোল্ড
ফেসিয়াল করুন । গোল্ড
ফেসিয়াল ত্বকের শুষ্কতা হ্রাস
করে এবং মেটাবলিক রেট
বৃদ্ধি করে ।
ত্বকের জ্বালা হ্রাসঃ কথায়
বলে গোল্ডে ইনফ্লেমেটরি এবং
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে ।
যা ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে
। এটি ত্বকের
কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
যা ত্বকের জ্বালাভাব হ্রাস
করে ।
সূর্যের ক্ষতিকারক ত্বকের চিকিত্সাঃ বাইরের দূষণ এবং
সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি আমাদের ত্বকের
মারাত্মক ক্ষতি করে দেয়
। মেলানিন এমন
এক ধরনের রঙ্গক যা
ত্বকের রং কালো করে
। সূর্যের ক্ষতিকারক
রশ্মি মেলানিন বাড়িয়ে তোলে । একমাত্র
গোল্ড ফেসিয়াল এই সমস্যা থেকে
মুক্তি দিতে পারে ।
গোল্ড মেলানিন কমিয়ে সূর্যের ক্ষতিকারক
ত্বকের চিকিত্সা করে
।
অকাল বয়স্কতা প্রতিরোধ করেঃ
কোলাজেন
এমন একধরনের প্রোটিন যা দেহের স্থিতিস্থাপকতা
নিয়ন্ত্রণ করে । এই
কোলাজেন আমাদের অকালে বয়স্কতার
ছাপ বাড়িয়ে তোলে ।
গোল্ড কোলাজেনের স্তরকে স্থিতিশীল রাখতে
সহায়তা করে এবং আপনার
বয়ষ্কতার ছাপ প্রতিরোধ করে
।
গ্লোয়িং ত্বক পেতেঃ
গোল্ডের
ছোট ছোট কণা চামড়া
শোষণ করে ত্বক গ্লো
করে তোলে । এছাড়াও
গোল্ড ত্বকের রক্ত সঞ্চালন
বৃদ্ধি করে ত্বক হাইড্রেট
করে রাখে । পাশাপাশি
ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা
করে । ত্বক
সুস্থ, তাজা এবং দীপ্তিশীল
করে তোলে ।
অ্যালার্জির চিকিৎসাঃ
মিশরীয়রা
বিশ্বাস ছিল, গোল্ডে ঔষধি
চিকিৎসার বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এছড়াও
গোল্ডে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের রক্ত সঞ্চালন
বৃদ্ধি করে বর্ণ এবং
অ্যালার্জি হ্রাস করতে সক্ষম
।
গোল্ড
শুধুমাত্র ত্বক উজ্জ্বল বা
সুন্দর করেই না বরং বিভিন্ন
ক্ষেত্রে উপকারি । এটি
ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, ত্বকের রং
ফেরায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়
পাশাপাশি ত্বকের নানা ধরণের
সমস্যা মেটায় । তাই
ত্বক সুন্দর করতে চাইলে
গোল্ড ফেসিয়াল করতে পারেন ।
কীভাবে বাড়িতেই করে নিতে পারবেন গোল্ড ফেসিয়াল:
গোল্ড ফেসিয়াল
এই ফেসিয়ালে ২৪ ক্যারাট সোনা
যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা
হয় যা সহজেই ত্বক
ভেদ করতে পারে।
ত্বকের পুরনো লাবণ্য, উজ্জ্বলতা
ফিরিয়ে আনতে গোল্ড ফেসিয়ালের
জুড়ি নেই। ত্বকে
লুকিয়ে থাকা ধূলো ময়লা,
বিষাক্ত পদার্থ বের করে
আনার ক্ষমতা সোনার অসীম। নতুন
কোষ জন্মানোর জন্য সোনার অবদান
অনেক। ৩৫
এর উপরে বয়স হলে
এই ফেসিয়াল করলে যৌবনের সেই
নরম তুলতুলে ত্বক ফিরে পাবেন
। এবার জেনে
নিন কিভাবে ঘরে বসেই
করবেন এই ফেসিয়াল।
একটি গোল্ড ফেসিয়াল কিটে
থাকে গোল্ড ক্লিনজার, গোল্ড
ফেসিয়াল স্ক্রাব, গোল্ড ফেসিয়াল ক্রিম
বা জেল, গোল্ড ফেসিয়াল
মাস্ক।
প্রস্তুতিপর্ব
সবার আগে ত্বককে গোল্ড
ফেসিয়ালের জন্য প্রস্তুত করে
নেওয়া দরকার। তার
জন্য ত্বকের গভীর থেকে
সমস্ত ধুলোময়লা আর দূষিত পদার্থ
বের করে দিতে হবে।
ধাপ 1: ক্লেনজ়িং
প্রথমে
গাঁদা ফুলের নির্যাস থেকে
তৈরি গোল্ড ক্লিনজার দিয়ে
মুখ ক্লিন করুন ।
প্রথমে সারা মুখে আর
গলায় ভালো করে সাধারণ
ক্লেনজ়িং মিল্ক লাগান।
আঙুলের ডগা দিয়ে হালকা
চাপ দিয়ে পাঁচ-সাত
মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর
পরিষ্কার তুলো দিয়ে মুছে
নিন।
ধাপ 2: স্টিম
এবার স্টিম নেওয়ার পালা। মুখ
পরিষ্কার করার সময়ই পাত্রে
করে জল নিয়ে আঁচে
বসিয়ে রাখুন। ক্লেনজ়িং
শেষ হতে হতে জলটা
ফুটে যাবে। জল
ফুটে গেলে আঁচ থেকে
নামিয়ে নিন। এবার
মাথায় একটা তোয়ালে ঢাকা
দিয়ে মুখটা জলের ঠিক
উপরে রাখুন যাতে ধোঁয়াটা
মুখের উপর লাগে।
চার-পাঁচ মিনিট এভাবে
থাকুন। তারপর
মুখ সরিয়ে নিয়ে তুলো
দিয়ে মুখ আর গলা
মুছে নিন। সমস্ত
ধুলোময়লা সরে গিয়ে ত্বক
পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মূল ফেসিয়াল পর্ব
এবার আমরা মূল ফেসিয়াল
পর্বে ঢুকব। তার
জন্য এমন একটা জায়গা
বেছে নিন যেখানে অন্তত
ঘণ্টা খানেক সময় আপনি একা
থাকতে পারবেন এবং কেউ
আপনাকে বিরক্ত করবে না!
ত্বকের যত্নের পাশাপাশি মানসিকভাবে
চাঙ্গা হয়ে ওঠারও এটাই
সময়!
ধাপ 1
আপনার
গোল্ড ফেসিয়াল কিট থেকে গোল্ড
ক্লেনজ়ারটি বের করুন।
সামান্য গোল্ড ক্লেনজ়ার নিয়ে
মুখে আর গলায় লাগিয়ে
বৃত্তাকারে মাসাজ করুন।
পাঁচ মিনিট মাসাজ করার
পর জল দিয়ে ধুয়ে
নিন। তুলো
দিয়ে মুছেও নেওয়া যায়।
ধাপ 2
এবার গোল্ড ফেসিয়াল কিট
থেকে গোল্ড স্ক্রাব বের
করুন। আগের
মতোই অল্প স্ক্রাব নিয়ে
আঙুলের ডগা দিয়ে সারা
মুখে বৃত্তাকারে ঘষতে থাকুন।
চোখের চারপাশের অংশে স্ক্রাব লাগাবেন
না। মিনিট
পাঁচেক স্ক্রাব করার পর জল
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ধাপ 3
এবার মাসাজের পালা। গোল্ড
ফেসিয়াল কিট থেকে পরিমাণমতো
গোল্ড ক্রিম নিয়ে ভেজা
মুখে আর গলায় লাগান। তারপর
মিনিট দশেক বৃত্তাকারে মাসাজ
করুন। হয়ে
গেলে জল দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন অথবা ভেজা তুলো
দিয়ে মুছে নিন।
ধাপ 4
কিট থেকে গোল্ড ফেসিয়াল
জেলটি বের করুন।
মুখে আর গলায় লাগান। মিনিট
পাঁচেক মাসাজ করুন।
তারপর হয় জল দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন অথবা ভেজা
তুলো দিয়ে মুছে নিন। গোল্ড
ফেসিয়াল জেল লাগানোর পর
ত্বকে একটা শীতলভাব অনুভব
করবেন।
ধাপ 5
এটা একদম শেষ ধাপ। আপনার
ফেসিয়াল কিটে যে ট্রিটমেন্ট
প্যাকটি রয়েছে, তা থেকে
পরিমাণমতো বের করে নিন। মুখে
আর গলায় মসৃণভাবে লাগান। চোখ
আর ঠোঁটের চারপাশটা বাদ
দেবেন। এবার
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ
শুয়ে থাকুন। প্যাকটা
মুখে শুকিয়ে গেলে আঙুল
জলে ভিজিয়ে আস্তে আস্তে
রগড়ে রগড়ে তুলে দিন। পিল-অফ মাস্ক হলে
অল্প অল্প করে টেনেও
তুলে দেওয়া যায়।
একেবারে শেষে ঠান্ডা জলের
ঝাপটায় মুখ আর গলা
ধুয়ে নিলেই হল!
ফেসিয়াল-পরবর্তী যত্ন
অয়েল ফ্রি ময়শ্চারাইজ়িং জেল
সারা মুখে আর গলায়
ভালো করে মেখে নিন। ত্বক
কোমল আর সতেজ হয়ে
উঠবে নিমেষে! গোটা
ফেসিয়াল পর্ব শেষ করতে
আপনার সময় লাগবে সাকুল্যে
এক ঘণ্টা! মাসে দু’বার এই গোল্ড
ফেসিয়াল করালে কিছুদিনের মধ্যেই
বুঝতে পারবেন কেমন সোনার
মতো ঝকঝকে হয়ে উঠেছে
ত্বক!
0 Comments