গোলাপ ফুলের কার্যাবলী


1. ত্বক উজ্জ্বল, কোমল এবং মসৃণ করতে গোলাপ ফুলের পাপড়ি1

এটি তৈরিতে যা যা লাগবে

গোলাপ ফুলের পাপড়ি /৮টি
/ কাপ চালের গুঁড়ো এবং এক গ্লাস/কাপ পানি
গোলাপ জল
মধু টেবিল চামচ

পদ্ধতি-

গোলাপ ফুলের /৮টি পাপড়ি টুকরো টুকরো করে নিন। এবার / কাপ চালের গুঁড়োর সাথে পাপড়ির টুকরোগুলো ব্লেন্ডার- মিশিয়ে নিন অথবা বেটে নিন। এই মিশ্রণটির সাথে চা চামচ গোলাপ জল, টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। আবার মিশ্রণটি বেটে নিন নাহলে ব্লেন্ডার- ব্লেন্ড করে নিন। এরপরেও যদি ভালোমতো না মিশে তাহলে হাত দিয়ে চটকে নিন। এবার এই মিশ্রণ মুখে, গলায় দিয়ে ৩০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন যে এটি ব্যবহার করলে যেন খুব হালকা গরম পানি দিয়েই মুখ ধোয়া হয়।

গোলাপ জল

চা চামচ (দোকান থেকে গোলাপ জল কিনতে না চাইলে ঘরে তৈরি করে নিন। কাপ পানিতে / কাপ গোলাপ ফুলের পাপড়ি সেদ্ধ করুন। ২০ মিনিট সেদ্ধ করলেই গোলাপ জল তৈরি হয়ে যাবে।)


2. গোলাপের অ্যাসেনসিয়াল অয়েল আর গোলাপ ফুলের ফেসিয়াল মাস্ক

রোজ ফেইস প্যাক বানাতে গোলাপ ফুল, চালের গুঁড়ো, অ্যাসেনসিয়াল তেল

 এটি তৈরিতে যা যা লাগবে-

চালের গুঁড়ো / কাপ
মধু টেবিল চামচ
১৫/২০টি গোলাপ ফুলের পাপড়ি বাটা,
১০/১২টি পাপড়ি
গোলাপজল টেবিল চামচ
গোলাপের অ্যাসেনসিয়াল তেল / ফোঁটা
পদ্ধতি-

প্রথমে গোলাপের অ্যাসেনসিয়াল তেল তৈরি করতে হবে যেহেতু দিনের মতো সময় প্রয়োজন। তবে একবার প্রস্তুত করলে সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারবেন। ১০/১২টা পাপড়ি নিয়ে একটি ঢাকনাসহ পাত্রে নিন। পাপড়িগুলোর উপর নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল ঢেলে নিন। এরপর পাত্রের মুখ ঢেকে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিন। ২৪ ঘণ্টা পরে পাত্র থেকে পাপড়িগুলো বের করে নতুন আরও কয়েকটি পাপড়ি তেলের মধ্যে রেখে দিন। আরও ২৪ ঘণ্টার জন্য রেখে তারপর পাপড়িগুলো বের করে নিন। বারই পাপড়িগুলো বের করার সময় সেগুলো চেপে তেলগুলো পাত্রে ফেলে নিবেন। আপনি চাইলে শুধু ২৪ ঘণ্টার জন্য রেখেও তেল প্রস্তুত করতে পারেন। তবে যত বেশি বার এরকম করবেন তত ভালো তেল হবে।

তেল প্রস্তুত হলে তেলের সাথে চালের গুঁড়ো, মধু, পাপড়ি বাটা সব মিশিয়ে মুখে, গলায়, ঘাড়ে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


3. মুখের ত্বকের জন্য প্যাক

 যা যা লাগবে-

/৩টি গোলাপ ফুল
চালের গুঁড়ো
সামান্য পানি
মধু
জাফরান

পদ্ধতি-

যে কোন রঙের গোলাপ ফুলের পাপড়ি এই ফেইস প্যাক তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন। লাল বা গোলাপি রঙের হতে হবে এমন কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। প্রথমে /৩টি গোলাপ ফুল ভালোমতো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। সবগুলো পাপড়ি আলাদা করে ফেলুন। / চা চামচ চালের গুঁড়ো নিন। তারপর অল্প পানি নিয়ে চালের গুঁড়োর সাথে পাপড়িগুলো বেটে নিন। ব্লেন্ডার-এও ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন মিশ্রণটি ক্রিম-এর মত হয়, অর্থাৎ পানি একবারে না দিয়ে একটু একটু করে মিশিয়ে বাটতে হবে। এবার মিশ্রণটি মুখ, গলা আর ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

গোলাপ পেস্ট, দুধ, মধু জাফরানের মিশ্রণ প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাক ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয়। দাগও কমে আসে।

গোলাপ পেস্ট, ওট, দুধ এবং মধু মিশিয়েও প্যাক তৈরি করা যায়।

প্রথম সপ্তাহে দিন এটি ব্যবহার করুন। এরপর সপ্তাহে এক দিন ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। এর বেশি নয়, অতিরিক্ত ব্যবহারে বিপরীত হতে পারে।

4.প্রাকৃতিক ক্লিনজার

রোদে পোড়া ভাব অতিরিক্ত হলে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে গোলাপ পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। স্বাভাবিক শুষ্ক ত্বকের জন্য গোলাপ পেস্ট এবং দুধের মিশ্রণ তৈরি করুন। ত্বক তৈলাক্ত হলে দুধের পরিবর্তে ইয়োগার্ট ব্যবহার করে মিশ্রণ তৈরি ব্যবহার করুন। আপনার ত্বকের উপযোগী ক্লিনজারের মিশ্রণ তৈরির পর কাচের জারে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন এক সপ্তাহের জন্য। প্রতিদিন এই ক্লিনজার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহার করলে বাড়তি কোনো কৃত্রিম ক্লিনজারের প্রয়োজন নেই। আর মিশ্রণ ব্যবহারে ত্বকের টোন দুই থেকে তিন ধাপ (শেড) পর্যন্ত উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে।

5. ঠোঁটের ঔজ্জ্বল্যে

প্রথমে চিনি লেবুর রসের মিশ্রণ দিয়ে ঠোঁট হালকাভাবে স্ক্রাব করে নিন। এর ফলে ঠোঁটের মৃত চামড়া উঠে আসে। এরপর গোলাপ পেস্ট মধুর মিশ্রণ ঠোঁটে লাগান। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গোলাপি আভার জন্য লাল গোলাপ সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রতিদিন গোলাপ মধুর ব্যবহারে ঠোঁটে কালচে ভাব দূর হয়, গোলাপি আভা ফুটে ওঠে। তবে স্ক্রাবিং করবেন সপ্তাহে একটি দিনই। আর সাত দিনের জন্য গোলাপ পেস্ট মধুর মিশ্রণ কাচের জারে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।


6. কনুইয়ের দাগ

কনুইয়ে দাগ থাকলে গোলাপ পেস্ট, অলিভ অয়েল, মধু লেবুর রসের মিশ্রণ সেই দাগের অংশে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চিনি দিয়ে স্ক্রাব করুন মিনিট ধরে। মোটমাট ১৫ মিনিট লাগবে। সপ্তাহে দুই দিন মিশ্রণ ব্যবহার করুন।

7. বডি স্ক্রাব হিসেবে

টেবিল চামচ গোলাপ পেস্ট, আধা কাপ টকদই, টেবিল চামচ চালের গুঁড়া এবং চাচামচ মধুর মিশ্রণ বডি স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে এক দিন মিশ্রণ ব্যবহার করুন।

8. ঘরে

ঘরে মিষ্টি সুবাস আনতে একগুচ্ছ গোলাপফুল রাখতে পারেন। অ্যারোমা হিসেবে গোলাপের ব্যবহার অতুলনীয়।
৯. স্নানঘরে

স্নানের জলে আধ কাপ গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে একমুঠো পুদিনা পাতা আর দুটেবিলচামচ লেবুর রস দিয়ে দিন। এবার এই জলটায় স্নান করুন। ত্বকের তেলাভাব নিয়ন্ত্রণে থাকবে। লেবুর রসে ত্বক জ্বালা করলে হোয়াইট ভিনিগার দিতে পারেন।

10. ফেস স্ক্রাব হিসেবে গোলাপ
একটা মাঝারি আকারের গোলাপের পাপড়ি জলে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পাপড়িগুলো চটকে তার সঙ্গে মিহি করে গুঁড়ো করা ওটস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটা মুখে আর গলায় বৃত্তাকারে মাসাজ করুন। এক্সফোলিয়েট করা হয়ে গেলে বাড়তি যত্নের জন্য সামান্য দুধ মেশানো জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। মুখ ধোওয়ার পর তুলোয় করে গোলাপজল নিয়ে সারা মুখ আর গলা মুছে নিন। সব শেষে আর একবার ঠান্ডা জলের ঝাপটায় মুখ ধুয়ে নিতে হবে। ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিলেই দেখবেন কেমন তুলতুলে নরম হয়ে গেছে ত্বক!

11.. গোলাপ ফুলের পারফিউম
রোজ ফেইস প্যাক বানাতে গোলাপ ফুল, পানি, গোলাপ জল - shajgoj.com

 যা যা লাগবে-

পানি কাপ
গোলাপের পাপড়ি কুঁচি কাপ (পাপড়িগুলো যেন মোটা না হয়, কারণ পাপড়ি যত পাতলা হবে তার ঘ্রাণ তত বেশি হবে, আর তাজা ফুল হতে হবে)
গোলাপ জল
স্প্রে বোতল

পদ্ধতি-

কাপ পরিমাণ পানি একটি পাত্রে ঢেলে ঢাকনা দিয়ে খুব অল্প আঁচে চুলায় গরম করুন। পানি গরম হলে পাপড়িগুলো চুলায় রাখা পাত্রে ঢেলে দিন। পাপড়িগুলো রেখে দিন ভেতরে, এবং এমনভাবে রাখবেন যেন পাপড়িগুলো পুরোপুরি পানিতে ডুবে থাকে। যদি উপরে ভেসে উঠে তাহলে চামচ দিয়ে চেপে পানির নিচে রাখুন। ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট খুব অল্প আঁচে চুলায় দিয়ে রাখুন। পানি যেন না শুকায়। ৩০/৪৫ মিনিট পরে একটি কাঁচের পাত্রে পাপড়িসহ পানি ছেঁকে নিন। যতটুকু সম্ভব পাপড়িগুলো চেপে চেপে পানি বের করে নিবেন। অল্প একটু গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এবার একটি স্প্রে বোতলে ঢেলে নিন। আপনার পারফিউম এখন তৈরি। এটি ফ্রিজ- রেখে ব্যবহার করুন। বাইরে রাখলে পারফিউম নষ্ট হবে না, তবে গোলাপের ঘ্রাণ বেশি দিন থাকবে না। তাই ফ্রিজ- রাখলেই ভালো। এটি ব্যবহারের সুবিধা হলো যে আপনার শিশুও এটি ব্যবহার করতে পারবে যেহেতু এতে কোন কেমিকেল নেই। তাছাড়া এতে কড়া ঘ্রাণ হবেনা যার ফলে আপনি অন্য কারও বিরক্তির কারণ হবেন না।
সতর্কতা
) যতটুকু পানি নিবেন সব সময় ততটুকু পাপড়ি কুচি নিবেন। যেমন যদি কাপ পানি হয় তাহলে কাপ পাপড়ি কুচি নিতে হবে। কারণ পানি বেশি হলে পাপড়ির ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যাবে।

) পানি শুকিয়ে গেলেও ঘ্রাণ থাকবে না, তাই চুলায় অবশ্যই খুব অল্প আঁচে রাখতে হবে।

) যদি নিজের গাছ থেকেই ফুল নিয়ে থাকেন তাহলে সকালে নিবেন, এতে ঘ্রাণ বেশি থাকবে।

) পাপড়ি অবশ্যই ধুয়ে নিবেন, পাপড়ি ধুলে ঘ্রাণ চলে যাবে না।

অতঃপর জানলেন সৌন্দর্যচর্চায় রোজ ফেইস প্যাক পারফিউম-এর কথা। ত্বকের যত্ন নিন। সুন্দর সুস্থ থাকুক আপনার প্রিয় ত্বক
  

কিছু বিষয় জেনে নিন আরও

গোলাপের পেস্ট দিয়ে যেকোনো প্যাক তৈরির পর শুধু পানি দিয়ে তা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সাবান বা ফেসওয়াশজাতীয় কিছু দিয়ে ধোবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হয়।

প্যাক ধুয়ে ফেলার পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন অবশ্যই। যেকোনো রঙের গোলাপ দিয়েই প্যাক তৈরি করা যায়। তবে ঠোঁটে গোলাপি আভা আনতে লাল গোলাপ সবচেয়ে ভালো।

আমদানি করা গোলাপ ফুল সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক পদার্থ দেওয়া থাকে। তাই সরাসরি এসব ফুলের পাপড়ি ব্যবহার না করাই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় অর্গানিক গোলাপ ফুল ব্যবহার করলে। তবে তা যদি পাওয়া না যায়, অর্থাৎ যদি রাসায়নিকযুক্ত গোলাপ ফুল ব্যবহার করতে হয়, তাহলে পেস্ট করার আগে পরিষ্কার পানিতে পাপড়িগুলো ভিজিয়ে রাখুন ২০ মিনিটের জন্য। এরপর তুলে নিয়ে সেগুলো দিয়ে পছন্দের প্যাকটি তৈরি করুন


0 Comments