পাহাড়, নদী আর হাওরের জন্য প্রসিদ্ধ সুনামগঞ্জ জেলায় রয়েছে বারিক্কা টিলা, যাদুকাটা নদী, নিলাদ্রী লেক, লাকমা ছড়া, টাংগুয়ার হাওর, শিমুল বাগান সহ বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। কর্মময় জীবনের ব্যস্ততায় ইচ্ছা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে এইসব দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই ভ্রমণ গাইডের আজকের আয়োজনে জেনে নেয়া যাক একদিনে সুনামগঞ্জ ঘুরে বেড়ানোর বিস্তারিত তথ্য।
সময় মাত্র একদিন, তাই আগে থেকেই সঠিক ভাবে ভ্রমণ পরিকল্পনা করে ফেলতে হবে। একদিনে ভ্রমণে আমরা যে জায়গাগুলো ঘুরে দেখবো সেগুলো হলো- লাউড়ের গড়, যাদুকাটা নদী, বারিক টিলা, শিমুল বাগান এবং শহীদ সিরাজ লেক যা নীলাদ্রি লেক নামে অধিক পরিচিত। টাঙ্গুয়ার হাওর হয়েও এই জায়গাগুলো ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে কিন্তু এই ব্লগটি যেহেতু একদিনে সুনামগঞ্জ ভ্রমণ বিষয়ক তাই আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো কিভাবে কম সময় এবং অর্থ ব্যয়ে সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বেশী স্থান ভ্রমণ করতে পারবেন।
দেশের যে প্রান্ত থেকেই সুনামগঞ্জ আসুন না কেন আপনাকে চেষ্টা করতে হবে যেন খুব সকালে সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে পারেন। তাহলে সারাদিন ঘুরার জন্যে বেশি সময় হাতে পাবেন। ঢাকা থেকে রাতের বাসে উঠলে সকাল ৭ টার মধ্যেই সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে পারবেন। সুনামগঞ্জ এসে ফ্রেশ হয়ে স্থানীয় হোটেল থেকে নাস্তা করে নিন।
সুনামগঞ্জ থেকে প্রথমে লাউরের গড় হয়ে যাদুকাটা নদী, তারপর নদী পার হয়ে বারিক টিলার উপর থেকে যাদুকাটা নদী দেখে শিমুল বাগান যান, শিমুল বাগান থেকে নীলাদ্রী লেক ঘুরে আবার আগের পথে সুনামগঞ্জ ফিরে আসুন। আর এই জায়গা গুলোতে ঘুরার জন্যে সময় বাঁচাতে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বাইক রিজার্ভ করে নেওয়া। এতে খুব সহজে পছন্দের জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।
বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০ টাকা অটো ভাড়ায় সুরমা ব্রিজের কাছে চলে আসুন। ব্রিজের কাছে বাইক রিজার্ভ পাওয়া যায়। আবার সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকেও বাইক পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ভাড়ার পরিমান
কম বেশি হতে পারে। একটি বাইকে চালক সহ দুইজন বসার সুযোগ রয়েছে। সারাদিন ঘুরার জন্য একটি বাইকের ভাড়া লাগবে ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা। আর বাইকের ভাড়া অবশ্যই দরদাম করে ঠিক করে নিতে হবে। সেই সাথে বাইক ঠিক করার সময়ই জানিয়ে দিন আপনি কোন কোন জায়গায় ঘুরতে চান।
সুনামগঞ্জ থেকে প্রথমে যেতে হবে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে যাদুকাটা নদীর পাশেই অবস্থতি লাউরের গড় নামক জায়গায়। সেখান থেকেই যাদুকাটার অপূর্ব রূপ দেখতে পারবেন। নদী পাড় হয়ে চলে যান বারেক টিলায়। বারেক টিলার উপর থেকে যাদুকাটা নদীর দিকে তাকালে যে প্রশান্তি অনুভব করবেন তা নাগরিক জীবনের ক্লান্তি মুছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।যাদুকাটা নদীর বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির ধারা, নীল আকাশ আর সবুজ পাহাড়ে অপূর্ব ক্যানভাস মোহিত করবে। টিলার নিচে আছে কিছু খাবার হোটেল, যাদুকাটা নদীর রূপ দেখতে দেখতে চাইলে সেখানে খেয়ে নিতে পারবেন।
শিমুল বাগান দেখে টেকেরঘাটের শহীদ সিরাজ লেক বা নীলাদ্রি লেক দেখতে চলে যান। চমৎকার নীল পানি, ছোট বড় টিলা আর পাহাড়ের সমন্বয় নীলাদ্রি লেককে করেছে অপার্থিব সৌন্দর্য্যের অধিকারী। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না পানির রঙ কতটা নীল আর প্রকৃতি এখানে কতটা মায়াবী। স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের জন্য নিলাদ্রি লেক দেখে অনেক পর্যটক একে বাংলার কাশ্মীর হিসাবে অভিহিত করেন। কিছু একান্ত সময় কাটিয়ে নিন নীলাদ্রী লেকের রূপ দেখে।
নীলাদ্রি লেকের কাছেই রয়েছে টেকেরঘাট বাজার। টেকেরঘাট বাজার থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন৷ আহামরি রকমের হোটেল-রেস্তোরা না থাকলেও সাধারণ মানের হোটেলে একবেলা খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা খারাপ হবে না।
হাতে যদি সময় থাকে তাহলে নীলাদ্রি লেক থেকে লাকমা ছড়া দেখতে চলে যান। টেকেরঘাট থেকে অল্প দূরত্বেই ছড়ার অবস্থান। বর্ষাকালে লাকমা ছড়া দেখতে অনেকটা সিলেটের বিছনাকান্দি ও জাফলং এর মত।
এবার ফিরে আসার পালা, আপনাকে ফিরতে হবে একই পথে। আবার ফিরে আসুন সুনামগঞ্জ শহরে। সুনামগঞ্জে রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে ফিরতি বাস ধরুন আপনার গন্তব্যের। সুনামগঞ্জ থেকে রাত ১০ টা থেকে ১১ টার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সকাল ৭ টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছে যাবেন।
ঢাকা থেকে একদিনের সুনামগঞ্জ ভ্রমণে কেমন খরচ হতে পারে তার একটা ধারনা দেই আপনাদের; ঢাকা হতে সুনামগঞ্জ যাওয়া ও আসা ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১১০০ টাকা। ২জনের জন্যে সারাদিনের মোটরবাইক ভাড়া লাগবে ১০০০-১৪০০ টাকা। এবং খাওয়া দাওয়া ও অন্যান্য খরচ এভারেজ জনপ্রতি ৫০০ টাকা।
0 Comments