সাতলা এই গ্রামটি
যেন এক শাপলার রাজ্য। কী
এক
অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! যা
দেখে থমকে যাই একপাশে শান্ত
নদীর সকালের স্নিগ্ধ রূপ,
আর অন্যপাশে স্বাগতম জানাচ্ছে যেন
লাল শাপলা। দূর
থেকে দেখেই মনে হচ্ছে, যেন আমাদের অপেক্ষাতেই
স্বচ্ছ পানির
উপরে এই
লাল শাপলা ফুলের বিশাল এক
প্রাকৃতিক স্বর্গ সৃষ্টি করে
দাঁড়িয়ে আছে! হাজারো লাল
যেন সূর্য্যের লাল আভাকেও হার
মানায় বিলের পানিতে ফুটে থাকা
এই শাপলা গুলো। আর এই ফুটন্ত শাপলা ফুলের রাজ্যের
মধ্যে মন মাতানো হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছেন নৌকায় বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে
। এপার থেকে
ওপারে আর ওপার থেকে এপার করে বেড়াচ্ছেন, শাপলা তুলছেন তারা।
বরিশালের
উজিরপুরের চার বিলে শাপলার এমন
লাল দুনিয়ার দেখা মিলবে ।
উপজেলার সাতলা ও হারতা
লাগোয়া এই
দুটি উপজেলা ইউনিয়নেই শাপলা
বিল দেখাযায়। এই
দুটি ইউনিয়নের সাতলা তে
রয়েছে পাশাপাশি তিনটি
বিল আর এই বিলগুলো হচ্ছে সাতলা,
নয়াকান্দি, পটিবাড়ি । কালবিরা নামের
আরেকটি বিল রয়েছ একটু দূরেই
হারতা ইউনিয়নে ।প্রায়
বছরের আট মাসই বর্ণাঢ্য
উৎসব চলে এই চারটি
বিলজুড়ে রঙিন শাপলার ।
বিশাল আয়তনের এই বিলগুলোতে ফুটে
থাকা লাল শাপলা প্রকৃতির
রূপ ও সুন্দর কে আরো মোহনীয় করে
তুলেছে।
কখন যাবেন
বিলে জুন
মাস থেকে সাধারনত ফোটা
শুরু করে শাপলা । তবে
জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে
অক্টোবর পর্যন্ত এই ৩ মাস এখানে শাপলায়
ভরপুর থাকে। বছরের
এই মাসগুলোতে শাপলা গ্রাম সাতলা
গেলে হাজারো শাপলা দেখতে
পাবেন। আর
ভাল ভামে মন উজার করে শাপলা দেখতে হলে অবশ্যই
খুব সকালে যেতে হবে,
কারণ শাপলা ফুল বুজে
যায় বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে
। কিংবা ব্যবসাহীরা ফুল বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। তাই এক রাত গ্রামে থেকে ভোরে শাপলা বিলে চলে গেলে সবচেয়ে ভালো হয়।
কীভাবে যাবেন
যে কোন যায়গা থেকে ঢাকার
সদরঘাট চলে আসু সেইখান থেকে রাত ৮
টা থেকে রাত ৯
টার মধ্যে কীর্তনখোলা ১/২, সুরভী ৮,
পারাবত ১১, সুন্দরবন ৭/৮ বরিশালের
উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় লঞ্চগুলো।
গ্রিনলাইন লঞ্চে যেতে পারেন এই লঞ্চটি খুব সকালে তাই সকালে যেতে পারবেন। ভোর
৫ টার দিকে বরিশাল
পৌঁছায় রাতে
যাত্রা করা লঞ্চগুলো। এসব
লঞ্চের ডেকের ভাড়া ১৫০
টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া
১৬০০ টাকা এবং ভিআইপি
কেবিন ভাড়া ৪৫০০ টাকা।
আপনারা চাইলে সড়ক পথেও যেতে পারেন। কিন্তু এটি বেশি সুবিধার হবে না।
প্রায় ৬ থেকে ৮
ঘণ্টা সময় লাগে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে। ভোর ৬ টা
থেকে রাত ১০ টা
পর্যন্ত নিয়মিত ভাবে বাস
বরিশালের পথে যাত্রা করে ঢাকার গাবতলি বাস টার্মিনাল
থেকে। পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে বরিশাল
যায় সাধারণত বাসগুলো
, তবে কিছু বাস
মাওয়া ঘাট পাড় হয়ে
বরিশালের দিকে যায়। বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ
বাস স্ট্যান্ডে এসে থামে বাসগুলো।
উত্তর
সাতলা যাবেন হচ্ছে বরিশাল
থেকে বাসে শিকারপুর এসে
অটো ভাড়া করে । তাছাড়া ঢাকা থেকে বাসে
বরিশাল যাওয়ার সময় উজিরপুরের
নুতনহাট বাস থেকে নেমে
সেখান থেকেও সরাসরি অটো
করে সাতলা শাপলা বিল
দেখতে যেতে পারবেন।
কিংবা বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা ও
বাগধা গ্রামে যাওয়ার সরাসরি
বাস সার্ভিসে ২ ঘণ্টায় পৌঁছে
যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে। এছাড়াও
বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়িতে
চড়েও ঘুরে আসতে পারবেন
শাপলা গ্রাম থেকে।
কীভাবে ঘুরবেন
অবশ্যই
নৌকার প্রয়োজন হবে লাল শাপলার রাজ্যে ঘুরতে
চাইলে । এ
জন্য সাতলার মাঝিদের কাছে
যেতে হতে হবে নৌকার ব্যবস্থার জন্য। আপনাদের
ঘোরার জন্য নৌকার
ব্যবস্থা করে দেবেন তারাই সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে
। আনুমানিক খরচের
পরিমাণ ৫০০ থেকে ৮০০
টাকা হতে পারে নৌকা ও
লোকজনের পরিমাণভেদে । একটি
বিশেষ কথা অবশ্যই সঙ্গে
ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না
ঘুরে
বেরোনোর সময় । এই
মনোমুগ্ধকর পরিবেশকে বার বার মনে করতে চাইলে ছবি ছাড়া অন্য কোন বিকল্প
পথ নেই। ঘুরতে
ঘুরতে শাপলার পাতার ওপর
দেখা পেতে পারেন ছোট-বড় সাপের।
ভয়ের কারণ নেই, এগুলো
কোনো ক্ষতি করবে না। তবে
সাবধানে দূরত্ব বজায় রাখাই
শ্রেয়।
কোথায় থাকবেন
সাতলায়
থাকার জন্য ভালো কোনো
ব্যবস্থা নেই। তবে
স্থানীয় লোকজনের সাহায্য নিয়ে রাতযাপন করতে
পারেন। এটাই
সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি।
কারণ শাপলা দেখতে আপনাকে
সকালেই যেতে হবে বিলে,
ওই গ্রামে রাত কাটালে
আপনার জন্য সহজতর হবে। এমনকি
খাওয়া-দাওয়াও সারতে হবে
এখানে। অবশ্যই
আপনি তাদের অতিথিপরায়ণতায় মুগ্ধ
হবেন। এছাড়া
খানিক দূরত্বের হারতা বাজারে রাতে
থাকার জন্য স্বল্পখরচের দুটি
হোটেল আছে, তবে সেটা
শহুরে লোকজনের জন্য খুব একটা
আরামদায়ক হবে না।
আরামদায়ক রাতযাপনের জন্য অবশ্যই উজিরপুর
বা বরিশালের শরণাপন্ন হতে হবে।
see the nex |
0 Comments