সিলেটের
পর্যটন এলাকা নামে খ্যাত
গোয়াইঘাট উপজেলায় বিছনাকান্দির অবস্থান। বর্ষা মৌসুমে (জুন-অক্টোবর) বিছনাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এর প্রধান
আকর্ষণ হচ্ছে ভারতের পাহাড়
থেকে নেমে আসা ঝর্ণার
স্বচ্ছ পানি। বিছনাকান্দি যেতে
পিয়ান নদী দিয়ে নৌকায়
যেতে হয়।
পান্তুমাইঃ
পান্তুমাই
গ্রামের নাম অনুসারে এই
ঝর্ণাকে পান্তুমাই ঝর্না নামে ডাকা
হয়। কিন্তু ঝর্ণাটি ভারতে
অবস্থিত। যা বড়হিল নামে
পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে এই ঝর্ণাটি
শুধু দেখতেই পারবেন। তাই
এখানে গিয়ে অনেকে হতাশ
হতে পারেন।
রাতারগুলঃ
স্থানীয়দের
কাছে সুন্দরবন নামে খ্যাত রাতারগুল।এটিও
সিলেটের গোয়াইঘাটে অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন
বা সোয়াম্প ফরেস্ট এটি।জলমগ্ন বলে
এই বনে সাঁপের আবাস
বেশি, আছে জোঁকও; শুকনো
মৌসুমে বেজিও দেখা যায়।
এছাড়া রয়েছে বানর, গুঁইসাপ;
পাখির মধ্যে আছে সাদা
বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা,
টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল
এবং বাজপাখি।
শীতকালে
রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর
পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায়
শকুনও। মাছের মধ্যে আছে
টেংরা, খলিশা, রিটা, পাবদা,
মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুইসহ
বিভিন্ন জাত।
কিন্তু
এই বনে একসময় দাপিয়ে
বেড়ানো মেছোবাঘ, বানর, বনবিড়াল, মাছরাঙা,
টিয়া, বুলবুলির কলকাকলি, নানা প্রজাতির সাপের
বিচারণ এখন আর চোখে
পড়েনা। মারা যাচ্ছে বনের
নানা প্রজাতির গাছও।
বর্তমান
সময়ে অনেকেই একদিনে অনেক
জায়গা ঘুরতে চান আর সেই জায়গাগুলো যদি হয় সবই সুন্দর তাহলে তো সোনে পে সোহাগা আজ
তেমনই কিছু জায়গা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
করব। জায়গাগুলো হলো বিছনাকান্দি,
পান্তুমাই ও রাতারগুল ঘুরবেন। তবে
প্রথমেই মনে রাখবেন একদিনে
৩টি জায়গা শেষ করার
জন্য আপনাকে খুব সকালে
রওয়ানা দিতে হবে। যদি
সকাল রওয়ানা দিতে না
পারেন তাহলে পরিকল্পনা থেকে
পান্তুমাই বাদ দিন।
যাতায়াত:
১. রাতের ট্রেন বা
বাসে করে সিলেট আসতে
হবে। ট্রেন ঢাকা কমলাপুর
স্টেশন থেকে ৯:৫০
মিনিটে (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে।
ভাড়া শোভন চেয়ার ৩২০,
শোভন সীট ২৬৫ ও
অন্যান্য। ট্রেন সাধারণত ভোর
৫-৬ টার মধ্যে
সিলেট পৌছে যায়। স্টেশন
থেকে বের হয়ে লোকাল
সিএনজি করে চলে আসুন
আম্বরখানা। জন প্রতি ভাড়া
নিবে ২০ টাকা বা
রিসার্ভ সিএনজি নিতে পারেন
ভাড়া নিবে ১০০ টাকা।
যদি বাসে আসেন তাহলে
রাত ১০-১১ টার
বাসে উঠলে ৬ টার
আগে সিলেট পৌছে যাবেন।
ইউনিক, শ্যামলী পরিবহনে ভাড়া পরবে ৪৭০
টাকা। আল-মোবারক, মামুনে
ভাড়া ৩৫০ টাকা। কিছু
লোকাল বাস আছে যেগুলোতে
ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা।
বাস আপনাকে কদমতলী বাস
স্টেশন নামিয়ে দিবে। যা
রেল স্টেশনের পাশেই। এখান থেকে
আম্বরখানা যেতে হবে। অনেক
সময় বাস মাজার গেইট(দরগা) পর্যন্ত যায়।
মাজার গেইট থেকে আম্বরখানা
২ মিনিটের রাস্তা হেটে যেতে
পারবেন।
এবার খুব দ্রুত ডিঙি
রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে ফ্রেশ
হয়ে আম্বরখানা পয়েন্টে চলে আসুন।
২। আম্বরখানা থেকে সিএনজি (৫
জন বসা যায়) বা
লেগুনা(১৩ জন বসা
যায়) রিসার্ভ করতে হবে সারা
দিনের জন্য। সিএনজি রিসার্ভ
নিবে ১২০০-১৫০০ টাকা।লেগুনা
রিসার্ভ নিবে ২৫০০-৩০০০
টাকা। ড্রাইভারকে বলবেন আপনি হাদারপাড়
ও রাতারগুল যাবেন। সিলেট থেকে
হাদারপাড় দূরে তাই আগে
ঐখানে যাবেন। হাদারপাড় যেতে
১.৫-২ ঘন্টা
লাগবে। রাস্তা আগের তুলনায়
অনেক ভাল।
৩।হাদারপাড়
বাজারে এসে নৌকা রিসার্ভ
করে বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই যেতে
হবে। হাদারপাড় বাজারের পাশে ঘাট রয়েছে।
ঘাট থেকে দরকষাকষি করে
১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে
নৌকা পেয়ে যাবেন।আর যদি
শুধু বিছনাকান্দি যান তাহলে ৬০০-৮০০ টাকার মধ্যে
নৌকা পেয়ে যাবেন।উল্লেখ্য এখানে
আরও ঘাট রয়েছে। তবে
সবচেয়ে ভাল হাদারপাড় ঘাট।
হাদারপাড় থেকে বিছনাকান্দি যেতে
প্রায় ৩০-৪০ মিনিট
লাগবে। এখানে সর্বোচ্চ ৪৫
মিনিট থাকবেন। এরপর নৌকা নিয়ে
পান্তুমাই চলে যাবেন(যদি
সময় থাকে)। যেতে
প্রায় ১ ঘন্টা লাগবে।
এখানে ৩০ মিনিট থাকবেন।
প্রায় ১০০ মিটার দূর
থেকে পান্তুমাই ঝর্নাটি দেখা যায়। কারণ
এটি ভারতে অবস্থিত। তবে
স্থানীয় কিছু ছোট নৌকা
নিয়ে ৫ মিনিটের জন্য
আরেকটু কাছে যাওয়া যায়।
এদেরকে ৫০-১০০ টাকা
দিতে হয়। এবার পান্তুমাই
দেখা শেষ করে চলে
আসবেন হাদারপাড় বাজারে। বাজারে কিছু মোটামুটি
মানে রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এখানে দুপুরের
খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
এবার যাত্রা শুরু করুন
রাতারগুলের উদ্দ্যেশে। তবে ঘড়িতে খেয়াল
রাখবেন ২ টা বাজার
আগে রওয়ানা দেবেন। হাদারপাড়
থেকে রাতারগুল আসতে প্রায় ১
ঘন্টার মত লাগবে। রাতারগুলে
ঘাট রয়েছে ৩ টি।
এর মধ্যে আপনি শেষ
ঘাট চৌরঙ্গী ঘাটে চলে যাবেন।
অন্য ঘাট গুলোতে নৌকা
ভাড়া বেশি। চৌরঙ্গী ঘাটে
নির্ধারিত নৌকা ভাড়া ৭৫০
টাকা ২ ঘন্টার জন্য।
যা রাতারগুল ভ্রমনের জন্য যথেষ্ট। এবার
সিলেটের উদ্দেশ্যে ব্যাক করুন।
বিঃদ্রঃ
১. যেহেতু একদিনে ৩টি জায়গা ভ্রমন
উদ্দেশ্য সেহেতু আপনাকে
সময় সচেতন হতে হবে।
যদি কোন কারনে বিছনাকান্দি
যেতে সময় বেশি লাগে
তাহলে পান্তুমাই বাদ দিন।
২. হাদারপাড় নৌকা রিসার্ভের সময়
একটু সময় নিয়ে রিসার্ভ
করুন। তাদের বুঝতে দিন
আপনি এর আগে এখানে
আসছেন ও কয়েক দিন
আগে আপনার বন্ধু এখানে
এসে ছিল। এখানে নৌকা
ভাড়া সম্পর্কে আপনার খুব ভাল
ধারনা আছে।
৩. খরচ বাচাতে ও
শান্তিতে ভ্রমনের জন্য সম্ভব হলে
শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া
আসুন।
৪.পর্যটন স্থান সমূহে
চিপসের প্যাকেট, বিরিয়ানীর প্যাকেট, পানির বোতল ইত্যাদি
ফেলে নোংরা করা থেকে
বিরত থাকুন ও অন্যকেও
উৎসাহত করুন।
0 Comments