ঘুড়ে আসুন সীতাকুন্ড



বাংলাদেশের সীতাকুন্ডের নিকটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ। এখানের সর্বোচ্চ পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। সীতাকুণ্ড পাহাড় হিমালয় হতে বিচ্ছিন্ন হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ। চট্টগ্রাম অংশে ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্য্যন্ত এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এই পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত হয়েছে সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক। পাহাড় পার হয়ে আরো ভিতরে পাতাল কালীবাড়ি।

কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বাসে সীতাকুন্ড:
উত্তরঃ ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, মহাখালি যে কোন বাস স্ট্যান্ড থেকে চট্রগ্রাম গামী যে কোন বাসে করেই যেতে পারবেন সীতাকুন্ড। এস আলম, শ্যামলি, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, ঈগল, এনা প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাস ভাড়া ৪২০- ৪৮০ টাকা। এসি বাসের মধ্যে গ্রিনলাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, টি আর এইসব বাস ভাড়া ৮০০-১১০০ টাকা। অবশ্যই নাইট কোচে রওনা দিয়ে সকালে গিয়ে সীতাকুণ্ড বাজারে নামবেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিভাবে:
উত্তরঃ ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে এসে ফেনী স্টেশনে নামতে হবে। শ্রেনীভেদে ট্রেন ভাড়া জন প্রতি ২৬৫-৮০০ টাকা। ফেনী স্টেশন থেকে ১০-১৫ টাকা রিক্সা/অটো দিয়ে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাসে ৫০-৮০ টাকা ভাড়ায় সীতাকুন্ড যেতে পারবেন। তবে রাতে রওনা দিয়ে সকালে গিয়ে নামলে ভালো হবে।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড:
উত্তরঃচট্টগ্রাম থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে সীতাকুণ্ডে আসতে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বাসে করে যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার, কে খান মোড় অথবা কদমতলী যেতে হবে। লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন ৪০- ৮০ টাকা ভাড়ায়।

চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড: এখান থেকে অনেক বাস পাবেন। এছাড়া অলংকার থেকে সীতাকুণ্ড বাজারের রাইডার বা ছোট বাস পাবেন। এগুলো করে সিতাকুন্ড বাজার নেমে লোকাল সি এন জি পাবেন বা রিক্সায় ব্যাস কুন্ড নেমে হাটা শুরু করবেন বা চাইলে একদম পাহাড়ের নিচু পযন্ত যাবেন। সীতাকুণ্ড থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে।

চন্দ্রনাথ পাহাড় বা সীতাকুণ্ড পাহাড় হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান আর সুবিশাল সমুদ্র অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ডকে করেছে অনন্য। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্থান সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র কিলোমিটার পূর্বে দিকে। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সায় করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে নিচের গেটের কাছে যাওয়া যায়। তবে পায়ে হেঁটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে হিন্দুদের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনা অধিবাসীদের জীবন যাত্রার চিত্র দেখে যেতে পারবেন। এছাড়াও পাহাড়ের একটু গভীরে গেলে চোখে পড়বে জুমক্ষেত এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা ফুলের বাগান। চন্দ্রনাথ পাহাড় চূড়াতেই চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখাঁ যায়। এই ঝর্ণার কাছ থেকে পাহাড়ে উঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পুরোটাতেই পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের পথটি সম্পূর্নই পাহাড়ি। সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামুলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামাতে সহজ হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫২ ফুট। হেঁটে উঠতে একটু পরিশ্রমের কাজ হলেও আপনার হাঁটার উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ লাগবে। সাধারণত ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত সময় লাগবে আসতে ধীরে উঠলে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরেই চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে এবং চূড়ায় মন্দিরের কাছে ছোট টং দোকান আছে সেগুলিতে হালকা খাবার এবং পূজা দেয়ার উপকরণ পাওয়া যায়, তবে ভালো হয় উঠার সময় সাথে পর্যাপ্ত পানি কিছু শুকনো খাবার সাথে রাখলে।

সীতাকুণ্ড বা চন্দ্রনাথ গিয়ে কোথায় থাকবেন:
সীতাকুণ্ডে থাকার জন্য হোটেল সৌদিয়া, সাইমুন আবাসিক সহ সীতাকুণ্ড বাজারে কয়েকটি মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল আছে। হোটেল সৌদিয়ায় বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন 01991-787979, 01816-518119  নাম্বারে। এছাড়া এখানে টেলি-কমিউনিকেশনের অধীনস্থ একটি ডাকবাংলো আছে। অনুমতি নিয়ে সেখানে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। ভালো কোথাও থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম অলংকার মোড়ে মোটামুটি মানের ৬০০-১৫০০ টাকায় হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এছাড়া স্টেশন রোড, নিউমার্কেট, জিইসি মোড়ের আশেপাশে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। সীতাকুণ্ড বাজারে কিচু ভালোমানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।

সীতাকুণ্ড বা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়ে কোথায় খাবেন:
সীতাকুণ্ডে সাধারণ মানের হোটেলের মধ্যে সৌদিয়া রেস্টুরেন্ট, আপন রেস্টুরেন্ট এবং আল আমিন উল্লেখ্যযোগ্য। তবে ভাল খাবার পরিবেশনায় এখানে আল আমিনের বেশ সুনাম রয়েছে।

সীতাকুন্ডের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান:
সীতাকুণ্ডে ঘুরে বেড়ানোর জন্যে অনেক জায়গাই আছে। কাছাকাছি হওয়ায় চাইলে দিনে দিনে অনেক গুলো জায়গাই ঘুরে দেখতে পারবেন। এক রাত থেকে দুইদিনের জন্যে ঘুরতে গেলে প্রায় সবগুলো জায়গাই ঘুরে দেখা সম্ভব। আপনার কত সময় আছে, সেই হিসেব করে পরিকল্পনা করে নিতে পারেন কি কি দেখবেন।

সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
গুলিয়াখালি বীচ
বাঁশবাড়িয়া বীচ
ঝরঝরি ঝর্ণা
কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
কমলদহ ঝর্ণা

সীতাকুণ্ড বা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার সময় সাথে অবস্যই কিছু প্রয়োজনিয় জিনিস নিয়ে যেতে উচিৎ:
অনেকেই দেখবেন সাথে লাঠি নিয়ে উঠে। যার দাম ২০-৩০ টাকার মধ্যে!! আপনি চাইলে লাঠি নিতে পারেন। তবে বেশিরভাগ লোক লাঠি ছাড়াই উঠে। আর সাথে পানি নিতে অবশ্যই ভুলবেন না। পানি আর খাবার স্যালাইন সিতাকুন্ড পাহাড়ে উঠার আগেই কিনে নিবেন। যারা পানি একদম কম খান,তারাও পানি খেতে বাধ্য হবেন। সুতরাং পানি খুবই প্রয়োজনীয়।

সীতাকুণ্ড বা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠা ও নামার সময় লাগবে:
আপনি যদি একনাগাড়ে উঠেন তাহলে ১ঘন্টার মত লাগবে। তবে একনাগাড়ে উঠা সম্ভব না। আপনাকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর -১০ মিনিটের জন্য বিরতি দিতে হবে। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই ঘন্টা লাগবে। পাহাড় থেকে নামতে ৩০-৪০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। মনে রাখবেন উঠার রাস্তা আর নামার রাস্তা আলাদা। নামার রাস্তা দিয়ে উঠার চেস্টা করবেন না। আর উঠার রাস্তা দিয়ে নামার চেস্টা করবেন না।

পাহাড়ে উঠবার সিঁড়িপথের এধারে ওধারে যেখানে সেখানে খুদে খাড়া কিছু গাছড়া চোখে পড়ে। উচ্চতায় হাঁটু অবধিও ওরা উঠে না। গাছের উচ্চতা বিচারে পাতাগুলো ভালোই বড়ো। পাতাগুলোর শিরাবিন্যাসে কেমন একটা টানটান ভাব আছে। কিছুটা আমাদের বন-পটপটির সঙ্গে মিল আসে। তবে এর পাতাগুলো আরেকটু ভারি হবে। পাতাগুলো কাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসে জোড়ায় জোড়ায়। এক জোড়ার পূব-পশ্চিম তোপরের জোড়া উত্তর-দক্ষিণ করে বের হয়। দু'জোড়া তিন জোড়া পাতার পরেই শীর্ষ থেকে একটি লম্বা শক্ত মঞ্জরীদণ্ড উর্দ্ধমুখি হয়ে ওঠেমঞ্জরীদণ্ডের মাথাটা বেশ 'টা ভাগে ভাগ হয়ে নলাকার ঘণ্টার মতো দুধ-সাদা ফুল ফোটায়। একেকটা ফুলে পাপড়ি পাঁচ। ফুলগুলো একক ফুল হিসাবে যেমন সুন্দরতেমন সুন্দর একসঙ্গে পুষ্পমঞ্জরীতে। ফুলে গন্ধগুণ নাই বটেরূপগুণের কোনো ঘাটতি নাই। আর তারা এই অতটুকুন গাছড়াতে ফোটেও অবিরামচতুর্ধারে চন্দ্রদ্যুতি ছড়ায়। শীতের দিকে আর গাছড়াটির দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু আবার ঠিক পরের বছরের গ্রীষ্মে গিয়ে অজস্র অজস্র গাছ ফুলের সাক্ষাৎ পাইআবার সেই চন্দ্রদ্যুতি দেখতে পাই। ভালো ছবি নিবো বলে যখন ফুলগুলোর কাছে ঘেঁষি তখন বৃষ্টি এসে যায়তাতে ভালো ছবি নিতে পারি না। পরে জ্যৈষ্ঠের শেষাশেষি আরেকবার গিয়ে খুদে এই ফুলগুলির পরশ পাবার চেষ্টা করি। ফুলটির ঠিক নামও খুঁজি অনেকদিন থেকে। খুঁজে খুঁজে মোটামোটি একটা কিনারা করা গেলো। বাংলা নাম হিসাবে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর ডাকা নাম থেকে বাংলা-ভাবে জরিফুল নামটি বেশ মনে ধরেছে আমার। এই নামেই তাকে ডাকতে চাই

বি:দ্র: পযাপ্ত পরিমান পানি আর খাবার সাথে রাখবেন সাথে স্যালাইন  রাখতে পারেন  পূজা না থাকলে শিব মন্দির ক্রস করে কাসেম মামুর টিলায় একটি দোকান ছাড়া আর কোথাও কিছু পাওয়ার সম্ভবনা কম। ভোর বেলা উঠার চেস্টা করবেন তাহলে কস্ট কম হবে রোদ বাড়লে কস্ট বেশি হবে।



পরিবেশ পরিষ্কার রাখবেন যাতে করে আপনার পরবর্তী ভ্রমনপিপাসু মানুষদের ভ্রমন আনন্দদায়ক হয়।



0 Comments