চন্দ্রনাথ যাত্রাঃ
যে কোন জায়গা
থেকে হোক না কেন খুব ভোরে চলে আসুন সীতাকুন্ড। আমি ঢাকা থেকে ট্রেন এর কথা বলছি।
ট্রেনে যাত্রা শুরু হয়
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। রাত ১০.৩০ এর মেইল
ট্রেনে ১২০ টাকা জন
প্রতি টিকেক কেটে নিই
ঢাকা থেকে সীতাকুন্ডের। সিট
পাওয়ার জন্য বেশ বেগ
পেতে হয়, সিট পেতে
অবশ্যই কমলাপুর থেকে উঠে আগে
ভাগে ট্রেনে উঠে সিট
বেছে নিন। সকাল ৬.৪০ এ পৌছে
যাই সীতাকুন্ড স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমেই
চলে যান সীতাকুন্ড বাজারে
। সেখান থেকে
নাস্তা করে জনপ্রতি ২০
টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে
করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হতে
থাকি মন্দিরে ঘেরা রাস্তা দিয়ে।
সিএনজি থেকে নেমে ১০
টাকা ভাড়ায় বাঁশ নিয়ে
যাত্রা শুরু করি ১২০০
ফুট উচ্চতার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। পাহাড়ে ওঠার আগে
অবশ্যই ১ লিটার পানি,
স্যালাইন, আর শুকনো খাবার
প্রত্যেকের ব্যাগে রাখবেন, উপরে
খাবারের দাম ডাবল।
#লক্ষ্য_রাখবেনঃকিছুক্ষণ ওপরে ওঠার পর দেখতে পাবেন ছোট্ট একটি ঝড়ণা, ঝড়ণার পর দুই দিকে #দুটো_রাস্তা! হাতের ডান পাশে দেখতে পাবেন সিঁড়ি আর বাম পাশে মাটির রাস্তা। বন্ধুবান্ধব নিয়ে ট্রেকিং এ গেলে অবশ্যই হাতের বাম পাশের রাস্তা দিয়ে উঠুন, এতে প্রচুর দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন। আর নামার সময় বাম পাশের সিঁড়ি দিয়ে নামুন। উপরে ওঠার সময় বুঝতে পারবেন বাঁশের গুরুত্ব। পাহাড়ে উঠতে আমাদের সময় লাগে ১ ঘন্টা ২৪ মিনিট। দিনটা ছিল হালকা বৃষ্টির। মেঘলা দিন পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার ছিল বলেই আশা করি। উপড়ে উঠে যে দৃশ্য দেখতে পাই তা ক্যামেরায় দেখানো সম্ভব না। বার বার বাতাসের মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিলো আমাদের। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে অপর প্রান্ত দিয়ে নামা শুরু করি। ২০০০ খাড়া সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসি। সেখান থেকে সিএনজিতে করে ২০ টাকা ভাড়ায় আবার চলে আসি সীতাকুন্ড বাজারে। চন্দ্রনাথ বিজয়ের পর এবারের যাত্রা খৈয়াছড়া ঝড়ণা। দুপুরের খাবার টা সীতাকুন্ডে খাবেন না!
খৈয়াছড়া যাত্রাঃ
চন্দ্রনাথ
ঘুরে অনেকেই #ইকো_পার্ক বা,
#গুলিয়াখালী সি বিচে যায়।
তবে আমার মতে খৈয়াছড়া
টা বেস্ট। ট্রেকিং লাভার
হলে তো অবশ্যই!
সীতাকুন্ড
বাজার থেকে মিরসরাই গামী
বাসে উঠে জনপ্রতি ২০
টাকা ভাড়ায় নেমে পড়ুন
মিরসরাই। হেল্পারকে বলে রাখবেন খৈয়াছড়া
ঝড়ণার দিকে যাবো, তাহলে
সে জায়গা মত নামিয়ে
দিবে। নতুবা মিরসরাই বাজারে
নিয়ে গেলে আবার উলটো
পথে আসা লাগবে। রাস্তা
পার হয়ে চিকন রাস্তার
মাথায় দেখতে পাবেন ঝড়ণার
রাস্তার নির্দেশনা সাইনবোর্ডে। সেখান থেকে সিএনজি
তে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায়
পৌঁছে যাবেন খৈয়াছড়ার পয়েন্টে।
সিএনজি থেকে নেমে হাতের
ডান পাশের প্রথম ভাতের
হোটেল টাতে সেড়ে নিতে
পারেন দুপুরের খাবার। হোটেলের পাশেই
বসে থাকা দেখতে পাবেন অনেক ট্যুর গাইড। ২৫০
টাকায় তাকে ভাড়া করুন
একটু বেশি কম হতে পারে। খাবার
হোটেলেই ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি
চাইলে রেখে আসতে পারেন। হোটেল থেকেই ১০
টাকা জোড়া ফুটবল খেলার
এঙ্গলেট ভাড়া করে নিন।
আর ১০ টাকায় বাঁশ
ও কিনে নিন। কোমড়ে
গামছা বেঁধে বাকি বস্তুগুলো
রেখে গিয়ে যাত্রা শুরু
করুন। বৃষ্টির দিন হলে বেশ
কাদা থাকবে সাবধান থাকবেন। কিছুক্ষণ পর পর ই
পাথড়ে ওপর দিয়ে বয়ে
যাওয়া ঝড়ণার স্রোতধারা বা,
ঝিড়ি পথ অনুসরণ করা
লাগে, পাড় হতে হয়
বেশ কয়েকবার। জোক থাকতে পারে খেয়াল রাখবেন যেন না
ধরে। বাঁশের প্রয়োজন আরো
একবার অনুভব করতে পারবেন।
ট্রেকিং এর সময় বিভিন্ন
গভীর খাত গুলো খেতে
সতর্ক থাকবেন। সামান্য ভুলেই প্রাণনাশের আশংকা
থাকে। আধঘন্টা সময়ের ব্যবধানে পৌঁছে
যাই চোখ জুড়ানো খৈয়াছড়া
ঝড়ণায়। ১১ টি ধাপের
এই ঝড়ণায় খুব বেশি
সাহস না থাকলে এই
ঝড়ণা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকুন। আর ট্রেকিং
নেশা থাকলে ঝড়ণার বাম
পাশের প্রায় ৯০ ডিগ্রি
পথটি অনুসরণ করে উপরে
উঠতে থাকুন। বাঁশের ব্যবহার
এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর ট্যুর গাইডের
নির্দেশনাও। একটু পা পিছলে
গেলে অনেক বড় দূর্ঘটনা
ঘটতে পারে।
যদি চন্দ্রনাথ আর খৈয়াছড়ার পর
আপনার আরো এনার্জি অবশিষ্ট
থাকে তাহলে ঘুরে আসুন
ইকো পার্ক বা, গুলিয়াখালী
সি বিচ।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
গুলিয়াখালী
সৈকত দেখার ইচ্ছে থাকলে
খৈয়াছড়া ঝর্ণার সর্বোচ্চ দুটি
ধাপ দেখুন। এরপর স্থানীয়
হোটেলে খাবার খেয়ে সীতাকুণ্ড
চলে আসুন। সম্ভব হলে
সীতাকুণ্ড এসে খাবার খান।
এতে সময় বাঁচবে। সীতাকুণ্ড
বাসস্ট্যান্ড ব্রীজের নিচ থেকে সিএনজি
করে চলে যান গুলিয়াখালী
বিচের বাঁধ পর্যন্ত। গুলিয়াখালী বীচ সম্পর্কে
বলতে গেলে যে শব্দগুলো
মাথায় ভিড় করে, সেগুলো
হলো সবুজ, শান্তি, মায়া,
ভ্রম। সবুজ ঘাসের গালিচা
বিছানো এরকম বীচ দ্বিতীয়টি
আছে নাকি আমার জানা
নেই। সিএনজি থেকে নেমে
১০-১৫ মিনিটের হালকা
কাদাময় রাস্তায় হেঁটে পৌঁছে যাবেন
সবুজের এই গালিচায়।
যেদিকেই
তাকাবেন চারদিকে সবুজের গালিচা, মাঝে
মাঝে এবড়োথেবড়ো গর্ত। এতটাই সুন্দর
চারদিক, হা করে শুধু
দেখতে থাকবেন প্রকৃতির এই
অদ্ভুত সবুজ রূপ। ফটোগ্রাফির
জন্য বীচটি স্বর্গস্বরূপ হওয়ায়
প্রফেশনাল কিংবা শখের ফটোগ্রাফারদের
আনাগোনা লেগেই থাকে। ইদানীংকালে
অনেক নাটক ও সিনেমার
শ্যুটিংও হয়েছে এখানে। সবুজ গালিচা
দিয়ে হাঁটার সময় একটু
সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, মাঝে
মাঝে গর্তগুলোতে পার হওয়ার জন্য
গাছের গুঁড়ি দিয়ে অস্থায়ী
ব্রীজ বানানো হয়েছে। অসাবধানতায়
সেগুলো পার হতে গেলে
কাদায় পড়ে গোসল করে
উঠতে হবে।
এখানে
দেখতে পাবেন ম্যানগ্রোভ বনের
শ্বাসমূল, জোয়ারের সময় সমুদ্রে পানি
অনেকটা কাছে চলে আসে।
সবুজ গালিচা পার হয়েই
সমুদ্রের চিরায়ত সেই অদম্য ঢেউ
দেখতে পাবেন। তবে সমুদ্রের
কাছের জায়গাটা বেশ কর্দমাক্ত ও
পিচ্ছিল। তাই সমুদ্রের বেশি
গভীরে না যাওয়াই ভালো।
সবুজ ঘাস আর সাগরের
বিশাল জলরাশি দেখে চলে
আসুন সীতাকুণ্ড।
অখবা যেতে পারেন
সীতাকুন্ড ইকো পার্ক
সীতাকুণ্ড
উপজেলা সদর থেকে ২
কি.মি. দক্ষিণে ফকিরহাট
বাজার সংলগ্ন মহাসড়কের পূর্ব
পাশে রঙ্গিন ফটক সহ
সাইনবোর্ড ইকোপার্কের দিক নির্দেশনা দেয়।ইকোপার্কে
প্রবেশের সাথে সাথে আপনি
একটি বড় ডিসপ্লে ম্যাপ
দেখতে পাবেন, যার মাধ্যমে
আপনি ইকোপার্ক সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা পাবেন।
উঁচুনিচু
নির্জন পাহাড়, হরিণ, ভালুক, বানর,
খরগোশ এবং হনুমান সহ
বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সমাহার, পাখ পাখালীর কলরব,
প্রাকৃতিক ঝর্ণা, চিরসবুজ বৃক্ষরাজি
সমৃদ্ধ ইকোপার্ক খুবই মনমুগ্ধকর।সন্ধায় পশ্চিম
আকাশে সূর্য যখন গোধূলীর
রক্তিম আভা তৈরী করে
ইকোপার্কে তখন এক নৈসর্গিক
পরিবেশের সৃষ্টি করে।
বোটানিক্যাল
গার্ডেন ও ইকোপার্কের প্রধান
ফটকের ভিতরে ডান পাশে
রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের প্রধান
নার্সারী এবং তার অফিস।এই
নার্সারীতেই আছে দেশ-বিদেশের
নানা প্রচলিত ও বিলুপ্ত প্রজাতীর
ফুল, ফল ও ঔষধি
গাছ যেমন – অর্জুন, তেলসুর,
চাপালিস, চুন্দুল, করই, জারুল, তুন,
জাম, জলপাই সহ আরো
অনেক।
সীতাকুন্ড
বাস স্ট্যান্ড থেকে মাত্র ২
কি. মি. দক্ষিণে ফকিরহাট
নামক স্থান দিয়ে এ
পার্কে প্রবেশ করতে হয়।
এরপর চলে যান আপন
গন্তব্যে। বাস অথবা ট্রেনে
চরে। ট্রেনে ফিরতে চাইলে
চলে যান ফেনী রেলস্টেশন।
এক্ষেত্রে ট্রেনের সিডিউল আগে থেকে
যেনে নেয়া ভালো।
খরচের হিসেব-নিকেশ:
প্রতিটি
ধাপে আমি খরচের কথা
বলেছি। তারপরও আবার বলছি।
মিলিয়ে নিন।
ঢাকা থেকে নন এসি
বাসে যাওয়া-আসা – ৪৫০x২=৯০০
ট্রেনে
যাওয়া-আসা – ১২০x২= ২৪০
স্পটগুলোতে
যাতায়াত জনপ্রতি – ৩০০
টাকা
দুপুরের
খাবার জনপ্রতি – ১২০/- থেকে ২০০/-
অন্যান্য
খরচ – ১৫০/-
মোট খরচ কমবেশি – ১৭২০/- জনপ্রতি
এইখানে গুলিয়াখালী
সমুদ্র সৈকত ও ইকোপার্কের হিসাব তুলে ধরা হয়নি তাই এই দুটির যেকোন একটি স্পট এ
গেলে খরচ আরও বারবে তাছারাও খরচ আপনার
ওপর নির্ভর করে। আপনি
চাইলে একটু কমাতেও পারেন
আবার বাড়াতেও পারেন।
সাবধান!!
পাহাড়
এবং ঝর্ণা ভ্রমণে কোন
প্রকার ঝুকিঁ নেয়া যাবে
না। স্পটগুলো ঘুরে দেখতে যথেষ্ট
শারীরিক এবং মানসিক শক্তি
প্রয়োজন। অতি বয়স্ক অথবা
ছোট বাচ্চা নিয়ে যাওয়া
উচিত নয়।
বিঃদ্রঃ
প্রকৃতিকে ভালোবাসুন, তাকে রক্ষা করুন।
কোনো প্রকার পচনশীল ও
অপচনশীল ময়লা আবর্জনা ফেলে
প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষতি করবেন না।
ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা
না পেলে ব্যাগে সংরক্ষণ
করুন।
0 Comments