রাজা হরিশ চন্দ্রের দিঘীটির গপন রহস্য



১৯০৪ সালের ৭ম আইন অনুসারে  প্রাচীন কীর্তি রক্ষা দায়ী করা হয় - এই কীর্তির কোন রূপ অনিষ্ট বা প্রাচীন সৌন্দর্য নষ্ট করিলে তাহার তিন মাস পর্যন্ত কারাবাস বা ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উক্ত উভয় প্রচার দন্ডই হইতে পারে।ডি, ম্যাজিষ্ট্রেটরামপাল প্রধান সড়ক থেকে ধলাগাও হয়ে পশ্চিমে হাঁটলেই হাতের বামে উপরিউক্ত বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়বে। এরই পাশে রয়েছে রাজা হরিশচন্দ্রের রহস্যঘন সেই দীঘি। কেউ কেউ মাঘী পূর্ণিমার দীঘিও বলে থাকে। অনেক কথা ও ইতিহাস জন্ম দিয়ে বেঁচে আছে এই দীঘি। এই দীঘির জন্মকাল সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনা। সবাই বলে আমাদের এক পুরুষ আগে বৌদ্ধ রাজা হরিশচন্দ্র দীঘি কাটেন। মাঘী পূর্ণিমাতে দীঘি রহস্যময় হয়ে উঠে। দুর দূরন্ত থেকে লোকজন এসে জড়ো হয়। চারপাশে জমে ওঠে মাঘী পূর্ণিমার মেলা। মুড়ির মোয়া থেকে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় তামা কাসার আসবাব পর্যন্ত বিক্রি হয় মেলায়। আগরবাতি, মোমবাতি তো দুপা একপা এগুলেই পাওয়া যায়। দিনটিতে যারা আসেন তারা সবাই মনে মনে মানত মেনে আসেন। কিংবা গেলো বছরের মানতের ফল পেয়ে তার ভোগ নিয়ে আসেন। কারো চাকুরী নেই, ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে, কারো বা সন্তান হয়ে মারা যায়, আবার কারো কারো পালের গরু টেকেনা, কেউ কেউ প্রেমিক প্রেমিকার মন পাচ্ছে না ইত্যাদি হাজারো রকমের আশা নিয়ে তারা জড়ো হয় এখানে। দীঘির পারে পারে মোম আর আগরবাতির কি এক অদ্ভুত মজার ব্যাাপার এই যে, মোরগ, খাসি বা টাকা অলঙ্কারের মানত কেউ স্পর্শ করে না। পাছে কোন অনিষ্ট হয় এই ভয়। কিন্তু মেলা শেষে সবের এক রত্তিও আর চোখে পড়ে না। কোথায় যায় কেউ জানেনা। নিয়ে আরো এক রহস্য ঘনীভূত হয়ে উঠে মানুষের মনে।ঘটনা এইরূপঃসারা বছরই দীঘির জলের উপর ঘন ঘাসের একটা আবরণ থাকে এবং তা থাকে সম্পূর্ণ তীর বিবর্জিত।


(দীঘির চারপাশে দেড়হাত করে পরিস্কার টলমলে জল) আশেপাশের লোকজন গরু ছাগলের প্রয়োজনে সে সব ঘাস কেটে নেয়। বাঁশ ফেলে তারা ঘাসের উপর যায়। কেউ বা (যারা শুধু দেখতে যায়) মনের আগ্রহে এপার থেকে ওপার হেঁটে পার হয়। অগ্রহায়ণ থেকে মাঘের পূর্ণ শশীর দিন পর্যন্ত ঘাসের একটি অংশ  পানির নীচে চলে যেতে থাকে। কিংবা পানি উঠে আসে ঘাসের উপরে (এক এক বছর এক এক অংশ এভাবে ডুবে থাকে।পূর্ণিমা দিন শেষ হতেই আবার তা পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। কোন বছর এর ব্যতিক্রম হয়নি বলেই প্রতি বছর এখানে লোকের ভিড় জমে ওঠে। ঘাসেরই একটি পাতা খুবই সুস্বাদু এবং সুগন্ধময়। লোকেরা পাতাটি এনে পানের সাথে খায় এবং অজ্ঞাত কল্যাণের আনন্দে পুলকিত হয়ে উঠে। দীঘির পাড়ে বসতী, এমন এক বয়স্কা মহিলাকে সম্পর্কে (দীঘি) জিজ্ঞেস করা হলে সে যা বললো, তা নিম্নরূপঃআমরা শুনেছি বৃটিশ সরকার সাতটা দমকল দিয়েও এর জল সেচে শেষ করতে পারেনি। সারাদিন কল চলার পর পরদিন সকালে দেখা গেছে জল পূর্বাবস্থায়ই আছে। তারও আগে কোন এক জমিদার হাতী এবং লোকজন নিয়োগ করেছিল এটাকে পরিস্কার করার জন্য। পরিস্কার তো হয়নি পরন্ত হাতী এবং নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষগুলো অপঘাতে মরেছে। আর তাই নাকি এই নোটিশ বোর্ডটি টাঙানো হয়েছিল।- সবই কিংবদন্তী।সে আরো বললো-আমরাও কম অত্যাচার ভোগ করিনি দীঘির। প্রথম প্রথম না বুঝে এর উপর ময়লা এবং আর্বজনা ফেলতাম। একদিন রাতে  দেখলামস কে একজন এসে আমাকে বলছে, ‘ দীঘির সেবা কর, নইলে তোদের ক্ষতি হবে।আমল দিইনি সে  আর তাই, সংসারে নেমে এলো রোগশোক, পালের মড়ক। গরু ছাগল, সব একদিনেই হারালাম। একটা ছেলে হঠাৎ পাগল হয়ে গেলো। অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো আমার। কোনরকম কান্না চাপিয়ে তিনি বলে যেতে লাগলেন।তারপর থেকেই প্রতি বৃহস্পতিবার মোমবাতি, আগরবাতি এবং আরো বিভিন্ন উপায়ে একে সেবা করছি আর খুশী রাখছি। তবুও তো ভুল-ভাল হলে রাতে তা বলে দেয় এবং যতোদুর ক্ষতি করার তা করেই।



0 Comments