শীতকাল শুরু হতেই শিশু সন্তানের ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই নিয়ে মা-বাবার দুচিন্তার শেষ থাকে না। শীতে শিশুর যত্নে প্রত্যেক বাবা-মাকে বাড়তি সতর্ক হতে হয়। শীত আসার সাথে সাথেই শিশুর ত্বকে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া শিশুর ঠাণ্ডা লাগা, কাশি, জ্বর তো আসতেই পারে।পেটের অসুখ-বিসুখও দেখা দিতে পারে এসময়। তাই তাদের প্রতি একটু বাড়তি মনোযোগ দিলে শীতের সমস্যা থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।
উপযুক্ত পোশাক : শীত থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখার প্রধান করণীয় হল শিশুকে ঠাণ্ডারোধক পোশাক পরানো। প্রয়োজনে একাধিক কাপড় পরানো যেতে পারে। শিশুদের শীতের অনুভূতি বেশি বলে শীতের তীব্রতা অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করুন। এখন যেহেতু শীত হালকা, তাই হালকা কাপড় পরিধান করান। শীত বাড়তে থাকলে আস্তে আস্তে মোটা কাপড় পড়াতে হবে।
সারা শরীরে কাপড় পরিয়ে দিলেও শিশুদের হাত এবং মাথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাইরে থাকে। তাই আপনার শিশুকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হওয়ার সময় তার মাথা আর হাত ভালো করে ঢেকে দিন।
সঠিক নিয়মে গোসল : শীত আসতে না আসতেই শিশুদের গোসল নিয়ে বাবা-মায়েরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। শিশু অসুস্থ হয়ে যাবে এই ভয়ে অনেকেই গোসল করানো কমিয়ে দেন। তবে শিশুদের শীতকালে বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুর শরীরের তৈলাক্ত ময়লা দূর করতে নিয়মিত গোসল করানো জরুরি। গোসল করানোর সময় বাচ্চাদের উপযোগী সাবান ব্যবহার করতে হবে। গোসলের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা উচিৎ। অধিক সময় ধরে শিশুকে গোসল করানো যাবে না।
আর গোসল শেষে শিশুর শরীর যেন অতিরিক্ত পানি শোষণ করতে না পারে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গোসল শেষে দ্রুত শরীর ও মাথা পরিষ্কার গামছা অথবা তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে গোসল শেষে কিছুক্ষণের জন্য শিশুকে হালকা রোদে বসিয়ে রাখুন। এতে শিশু আরামবোধ করবে।
খাবারদাবার : শিশুর শীতের খাবার সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া চাই। শিশু যেন অতিরিক্ত ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। লেবু, কমলা, মাল্টা, আমলকি খাওয়ানো ভালো। তবে যেসব শিশু চিবিয়ে খেতে পারে না, তাদেরকে ফলের রস করে খাওয়াতে পারেন। খাবারের পাশাপাশি শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।
ত্বকের যত্ন : আর্দ্রতার কারণে শিশুদের ত্বক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। শীতে শিশুর কোমল ত্বকের যত্ন নিতে অবশ্যই ভালো মানের লোশন বা ক্রিম লাগাতে হবে। এছাড়াও বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ও ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
খালি পায়ে যাতে না হাঁটে : শিশু যেন শীতকালে মেঝেতে খালি পায়ে না হাঁটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর জন্য বাসায় ব্যবহার উপযোগী জুতা কিনবেন। ঘরের মেঝেতেও কার্পেট অথবা মোটা কাপড় বিছিয়ে দিতে পারেন। তাহলে মেঝেতে বসে খেলা করলেও সহজে ঠাণ্ডা লাগবে না। এ ছাড়া শিশুর বিছানা-বালিশ প্রতিদিন রোদে গরম করে নিলে শিশু আরাম বোধ করবে। প্রতিবার ডায়াপার ভিজিয়ে ফেলার পর তা পাল্টে দিতে হবে।
ঠাণ্ডা লেগে গেলে : সতর্ক থেকে যত্ন নেওয়ার পরেও অনেক সময় শিশুদের ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গেলে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। শিশু অসহ্যবোধ করতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ন্যাজাল ড্রপ ব্যবহার করুন। ঠাণ্ডা লেগে কাশি, শ্বাসকষ্ট কিংবা বুকের ভেতর গড়গড় আওয়াজ অথবা শিশু শ্বাস নিতে গিয়ে কষ্ট অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
0 Comments