অ্যারোমাথেরাপি হলো এক ধরনের উপশমক প্রক্রিয়া, যা কিনা অ্যারোমাটিক এসেনসিয়াল তেলের মাধ্যমে আপনার শারীরিক আর মানসিক উন্নতি ঘটায়। অ্যারোমা ফেসিয়ালের ফলে আপনার ত্বক আরও উজ্জ্বল কোমল হয়ে ওঠে। অ্যারোমা অয়েলগুলো খুবই ঘন, তাই ফেসিয়ালের জন্য ব্যবহার করতে হবে খুবই সাবধানে। সব স্কিন টাইপ এর নারী এই ফেসিয়াল করতে পারবেন। কিন্তু উপাদান একটু ভিন্ন হবে। যেহেতু সবই প্রাকৃতিক উপাদান তাই বয়সেরও কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। তবে ১৮ বছর বয়স হলে করা ভালো। আজ আমি বিভিন্ন ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রে আলাদা যে যে উপাদান ব্যবহার করতে হবে তা দিয়েই অ্যারোমা ফেসিয়ালের পদ্ধতি বলে দেবো।
উপকরণঃ
ক্লিঞ্জার
স্ক্রাব
ফেসিয়াল অয়েল
দুধ
চন্দন গুঁড়ো
কাঠবাদাম গুঁড়ো
ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম
রোজ অয়েল
জিরেনিয়াম অয়েল
ল্যাভেণ্ডার অয়েল
লেমন অয়েল
সারপ্রেস অয়েল
টক দই
কীভাবে করবেন?
(১) ফেইস ক্লিন করা
ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার পূর্বে প্রথমে গরম ভাপ নিয়ে নিন। এটি আপনার মুখের রন্ধ্র খুলে দিতে সাহায্য করবে। এর জন্য আপনি একটি তোয়ালে এক বাটি হার্বাল চায়ের মধ্যে ভিজিয়ে তা আপনার মুখে ও গলার উপর দিয়ে রাখুন এবং ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
(২) স্ক্রাব করা
এবার স্ক্রাব দিয়ে মুখ আলতো ভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘষুন। তারপর উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ফেলুন। মুখে কোন তেল থেকে থাকলে তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন। যদি আপনি ভারী মেক-আপ নিতে চান আপনি চাইলে আবার মুখ ক্লিন করে নিতে পারেন।
(৩) টোনার ব্যবহার
এই পর্যায়ে টোনিং করে নিতে হবে। টোনিং খুবই গুরত্বপূর্ণ ধাপ ফেসিয়ালের। তুলা দিয়ে টোনার মুখে লাগান কিন্তু ভুলেও ঘষবেন না। চোখের কাছে লাগাবেন না। আপনার ত্বক এখন ময়েশ্চারাইজিং এর জন্য প্রস্তুত।
(৪) ময়েশ্চারাইজ করা
এবার অ্যারোমেটিক ফেসিয়াল অয়েল দিয়ে মুখে ময়েশ্চারাইজ করতে পারেন। এই তেলে কিছু উপাদান আছে যা মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন টোনার লাগাবার পর মুখ কিছুটা আর্দ্র থাকা অবস্থায় তেল লাগাতে হবে। পুরোপুরি শুকনো হলে চলবেনা। যদি ত্বকের কোন জায়গা শুষ্ক থাকে তবে সেক্ষেত্রে দুবার ময়েশ্চারাইজ করবেন। কিন্তু প্রথম বার আর দ্বিতীয় বারের মাঝে ২-৩ মিনিট বিরতি রাখবেন এবং দ্বিতীয় বার কিছুটা পানি অথবা টোনার দিয়ে নিবেন।
৫ ধরণের ত্বকের যত্ন নিতে অ্যারোমা ফেসিয়াল
১. তৈলাক্ত ত্বকের অ্যারোমা ফেসিয়াল
ধাপ ১ – ক্লিনজিং
১/২ চা চামচ গুঁড়ো দুধ, ২ ফোঁটা লেমন অয়েল, চন্দনের তেল, ২ চা চামচ দই দিয়ে পেস্ট বানিয়ে গলায় এবং মুখে ২ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। তারপর টিস্যু অথবা তুলা দিয়ে মুছে ফেলুন।
ধাপ ২ – টোনিং
মুলতানি মাটি, ২ ফোঁটা রোজ মেরি অয়েল, পুদিনা পাতার তেল দিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
ধাপ – ৩ ময়েশ্চারাইজিং
সুগন্ধি বিহীন কোন ময়েশ্চারাইজার নিন। তাতে ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশান। হালকা হাতে ম্যাসাজ করে ত্বকে লাগান।
২. শুষ্ক ত্বকের জন্য অ্যারোমা ফেসিয়াল
ধাপ ১ – ক্লিনজিং
১ চা চামচ গুঁড়া দুধ, ১ চিমটি চিনি, ৪ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল, ৪ ফোঁটা রোজ অয়েল মিশিয়ে বানানো পেস্ট মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করুন। তারপর টিস্যু অথবা তুলা দিয়ে মুছে ফেলুন।
ধাপ – ২ টোনিং
কিছু বাদামের গুঁড়ো নিন। এর সাথে ১ ফোঁটা লেমন অয়েল আর ৩ ফোঁটা গোলাপ জল দিন। এবার এটা মুখে অ্যাপ্লাই করুন।
ধাপ – ৩ ময়েশ্চারাইজিং
সুগন্ধি বিহীন কোন ময়েশ্চারাইজার নিন। তাতে ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল আর রোজ অয়েল মিশান। হালকা হাতে ম্যাসাজ করে ত্বকে লাগান।
৩. স্বাভাবিক ত্বকের জন্য অ্যারোমা ফেসিয়াল
ধাপ – ১ ক্লিনজিং
চন্দনের গুঁড়ো, বাদামের গুঁড়ো, তরল দুধ সব গুলোই ১ চা চামচ করে নিন। তারপর মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করুন ২ মিনিট পর টিস্যু অথবা তুলা দিয়ে মুছে ফেলুন।
ধাপ – ২ টোনিং
১ চা চামচ বাদামের গুঁড়োর সাথে ১/২ চা চামচ মধু আর ১ ফোঁটা রোজ অয়েল দিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন।
ধাপ – ৩ ময়েশ্চারাইজিং
সুগন্ধি বিহীন কোন ময়েশ্চারাইজার নিন। তাতে ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল আর ২ ফোঁটা রোজ অয়েল মিশান। হালকা হাতে ম্যাসাজ করে ত্বকে লাগান।
৪. মিশ্র ত্বকের জন্য অ্যারোমা ফেসিয়াল
ধাপ – ১ ক্লিনজিং
১ চা চামচ গুঁড়ো দুধ, ২ ফোঁটা রোজ মেরি অয়েল এবং ১ ফোঁটা জুনিপার অয়েল দিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করুন ২ মিনিট পর টিস্যু অথবা তুলা দিয়ে মুছে ফেলুন।
ধাপ – ২ টোনিং
তৈলাক্ত অংশের জন্য-১ চা চামচ মুলতানি মাটি নিয়ে তার সাথে ২ ফোঁটা রোজ মেরি আর পুদিনা অয়েল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক অংশের জন্য – ১/২ চা চামচ বাদামের গুঁড়ো, ১ ফোঁটা লেমন অয়েল, ১ ফোঁটা রোজ অয়েল একসাথে মিশিয়ে বানানো পেস্টটি মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
ধাপ – ৩ ময়েশ্চারাইজিং
ভালো কোন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম নিয়ে তাতে ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে মুখে লাগান।
৫. সেনসিটিভ ত্বকের জন্য অ্যারোমা ফেসিয়াল
ধাপ – ১ ক্লিনজিং
কুসুম গরম পানিতে ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল, ১/২ চা চামচ মিল্ক পাউডার মিশিয়ে পেস্ট বানান। তারপর মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করুন ২ মিনিট পর টিস্যু অথবা তুলা দিয়ে মুছে ফেলুন।
ধাপ – ২ টোনিং
১ চা চামচ মুলতানি মাটি ,৩ ফোঁটা ক্যামোলি অয়েল এবং মধু দিয়ে বানানো পেস্ট বানিয়ে মু
খে লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ধাপ – ৩ ময়েশ্চারাইজিং
সুগন্ধি বিহীন কোন ময়েশ্চারাইজার নিন। তাতে ৫ ফোঁটা রোজ অয়েল মিশিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে মুখে লাগান।
বিভিন্ন তেলের আছে বিভিন্ন গুনাগুণ। আপনার ফেসিয়াল মাস্কে কয়েক ফোঁটা অ্যারোমাটিক অয়েল আপনার ত্বককে নরম আর বিশুদ্ধ করে। এমন কি বিষণ্ণতা কমিয়ে জাগিয়ে তোলে চনমনে অনুভূতি।
0 Comments