ত্বকের বলিরেখা দূর করুন জাদুকরী এই অ্যান্টি রিংকেল ক্রিম ব্যবহারে!
প্রাকৃতিক
নিয়মে বয়স বৃদ্ধি পায়,
আর বয়সের সাথে সাথে
ত্বকে দেখা দেয় বলিরেখা
বা রিংকেল। আর এই বলি
রেখা বা বয়সের ছাপ
দূর করার জন্য কত
কিছুই না আমরা করে
থাকি। অ্যাণ্টি রিংকেল ক্রিম, অ্যান্টি
রিংকেল ফেসিয়াল, নামী দামী কত
ক্রিমই না আমরা ব্যবহার
করে থাকি। এই ক্রিমগুলো
কি আসলেই কার্যকরী? কাজ
করলেও কতটুকুই বা কার্যকরী? আবার
বাজারে ক্রিম ব্যবহারে থাকে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়। বাজারে ক্রিম
সাময়িকভাবে ত্বক টানটান করে
বলিরেখা দূর করে থাকলেও,
দীর্ঘমেয়াদি ফল এর থেকে
লাভ করা সম্ভব নয়।
অনেক তো ব্যবহার করলেন
বাজারের অ্যান্টি রিংকেল ক্রিম। এবার
না হয় ঘরে নিজেই
তৈরি করে ফেলুন অ্যান্টি
রিংকেল ক্রিম। খুব সাধারণ,
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে এই
ক্রিম তৈরি করা হয়
বিধায় এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নেই। আর নিজেই তৈরি
করে নিতে পারেন এই
ক্রিমটি।
চামড়ায় ভাঁজ পড়া প্রতিকারে ৩টি ধাপে ফেসিয়াল পদ্ধতি
১. ক্লিনজ এবং এক্সফলিয়েসন
প্রথমে
আমরা আমাদের ত্বক ঘরোয়া
কিছু উপাদান দিয়ে পরিষ্কার
করে নেবো। এতে পরবর্তীতে
যে মাস্ক ব্যবহার করবো
তার উপকারিতা ভোগ করা সহজ
হবে। ১ স্লাইস খোসাসহ
গ্রেটেড আপেলের সাথে ২
টেবিল চামচ দই, ১
চা চামচ অলিভ অয়েল
আর ১ চা চামচ
সাইট্রাস জুস (লেবু, কমলা)
একসাথে মিশিয়ে মুখে এবং গলায়
হালকা হাতে সার্কুলার মোশনে
ম্যাসাজ করুন। তারপর কিছুটা
সময় মুখে ঐভাবে রেখে
দিন। এতে ক্লিনজার আপনার
ত্বকের উপর কাজ করবে
আর রক্ত সারকুলেশনের গতিকে
আরও ত্বরান্বিত করবে। এরপর হালকা
গরম পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন। এরপর এক্সফলিয়েসন করা
জরুরী। এতে আপনার ত্বকের
সব মরা কোষ দূর
হবে আর যে মাস্ক
দেওয়া হবে তার উপকারিতা
সম্পূর্ণ রূপে পাওয়া যাবে।
ডালিমের শুকনো খোসা চূর্ণের
সাথে দুধের সর এবং
গোলাপ জল মিশিয়ে স্ক্রাবিং
এর কাজটি সেরে ফেলুন।
তারপর উষ্ণ গরম পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. লোমকূপ ওপেন করার জন্য স্টিম করুন
ত্বককে
গভীর থেকে পরিষ্কার করার
জন্য স্টিম নেওয়া জরুরী।
১০-১৫ মিনিট ধরে
গরম পানির ভাপ নিন
মুখে।
৩. ফেসিয়াল মাস্কের ব্যবহার
এবার পালা ফেসিয়াল মাস্ক
লাগানোর। আমি কয়েকটি মাস্কের
কথা বলবো আপনারা আপনাদের
ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়তা, উপকরণ
প্রাপ্যতা এবং ত্বকের ধরনের
ভিত্তিতে মাস্ক বেঁছে নিবেন।
ক. বানানা পিল মাস্ক
কলাতে
আছে অনেক ধরনের ভিটামিন,
যা আপনার ত্বককে রিজুভিনেট
করে আর রিংকেল থেকে
আমাদের রক্ষা করে। তাই
আপনার মুখে যদি রিংকেলের
প্রভাব থাকে তবে খোসা
সহ পাকা কলার কয়েক
টুকরা পেস্ট করে নিন
এর সাথে ডিমের কুসুম,
টক দই এবং মধু
মিশিয়ে অ্যান্টি-রিঙ্কেল মাস্ক বানিয়ে ফেলুন।
১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে
রাখলেই চলবে।
খ. কিউকাম্বার মাস্ক
১/৪ ভাগ খোসা
ছাড়ানো শশা গ্রেট করে
নিন। এর সাথে ১টি
ডিমের সাদা অংশ, ১
চা চামচ লেবুর রস
নিন। এই সবগুলো উপাদান
ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। শশা
মুখের কালো দাগসহ রিঙ্কেল
কমিয়ে দেবে, ডিমের সাদা
অংশ ত্বককে টাইট করবে
আর লেবুর রস এক্সফলিয়েট
করবে।
গ. এভোক্যাডো মাস্ক
১টি ডিমের সাদা অংশ
স্টিফ টেক্সচার না পাওয়া পর্যন্ত
ফেটান। এর সাথে ১/৪ ভাগ ম্যাশড
এভোক্যাডো, আর ১ চা
চামচ মধু মিশান। এই
স্মুদ পেস্ট ত্বককে হাইড্রেট
এবং ময়েশ্চারাইজ করবে। যেটির অভাবে
ত্বকে সাধারনত ভাঁজ পড়ে।
ঘ. পাকা পেঁপের মাস্ক
১ চামচ শুকানো পাকা
পেঁপের খোসার গুঁড়া নিন।
এর সাথে ২-৩
ফোঁটা গ্লিসারিন এবং ১ চামচ
গোলাপ জল নিন। ভালো
ভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট
তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে
২০-২৫ মিনিট পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি
আপনার শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা
যোগাবে, করে তুলবে প্রাণবন্ত।
ঙ. ভিটামিন ই মাস্ক
৩টি ভিটামিন ই ট্যাবলেটের কনটেন্ট
একটি বাটিতে নিন তারপর
এতে যোগ করুন ২
টেবিল চামচ টক দই,
১/২ চা চামচ
মধু এবং ১/২
চা চামচ লেবুর রস।
এই মিশ্রণটি একটি কটন বলের
সাহায্যে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন
১০ মিনিট। তারপর উষ্ণ
গরম পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন।
চ. বাঙ্গির মাস্ক
ত্বকের
ভাঁজ পড়া কমাতে ও
কালচে ভাব দূর করতে
বাঙ্গির খোসা (পাল্প), মটর
ডাল বাটা, ডিমের কুসুম,
কয়েক ফোঁটা লেবুর রস
ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে
পেস্ট তৈরী করুন। শুকিয়ে
যাওয়া পর্যন্ত মুখে লাগিয়ে রাখুন।
এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন। ক্লিঞ্জিং, স্ক্রাবিং এর পর নিয়মিত
এই মাস্ক ব্যবহারে আস্তে
আস্তে ত্বকের ভাঁজ পড়া
ভাব কমে ত্বক হয়ে
উঠবে সতেজ।
যা যা লাগবে:
১/৪ কাপ বিশুদ্ধ
বাদাম তেল
২ টেবিল চামচ নারকেল
তেল
২ টেবিল চামচ বিশুদ্ধ
মোম
১/২ চা চামচ
ভিটামিন ই অয়েল
১ টেবিল চামচ শিয়া
বাটার
কয়েক ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েল
(ইচ্ছা)
যেভাবে তৈরি করবেন:
১। একটি পাত্রে সবগুলো
উপাদান মিশিয়ে নিন।
২। এবার পাত্রটি ৪
থেকে ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত
পানি দিয়ে ভরে ফেলুন।
৩। এখন পাত্রটি চুলায়
জ্বাল হতে দিন যতক্ষণ
পর্যন্ত না সবগুলো উপাদান
গলে না যায়, ততক্ষণ
জ্বাল দিন।
৪। মাঝে মাঝে এটি
নাড়ুন।
৫। সবগুলো উপাদান ভালমত
মিশে গেলে এটি চুলা
থেকে নামিয়ে ফেলুন।
৬। ক্রিমটি রুম তাপমাত্রায় ঠান্ডা
হওয়ার জন্য রাখুন।
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
দিনে দুইবার সকাল এবং
রাতে ব্যবহার করুন। ব্যবহারের আগে
মুখে ধুয়ে নিবেন। ক্রিমটি
ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন।
বাদাম
তেল, নারকেল তেল, শিয়া
বাটার প্রতিটি উপাদান ত্বকের জন্য
উপকারী। বাদাম তেল ত্বক
নরম কোমল করে তোলে।
নারকেল তেলের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ
পরা রোধ করে। মোম
এবং শিয়া বাটার উভয়ই
অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আছে। যা
ত্বকের বলিরেখা পরা প্রতিরোধ করতে
সাহায্য করে থাকে।
যা যা লাগবে:
১/২ চা চামচ
লেবুর রস
১টি ডিমের সাদা অংশ
যেভাবে প্যাক তৈরি করবেন:
১। একটি পাত্রে ডিমের
সাদা অংশ এবং লেবুর
রস একসাথে মেশান।
২। কয়েক মিনিট ভাল
করে নাড়ুন। ফেনা না
উঠা পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
১। প্রথমে মুখ এবং
ঘাড় ভাল করে ধুয়ে
ফেলুন।
২। আঙ্গুল দিয়ে ম্যাসাজ
করে মুখ এবং ঘাড়ে
চক্রাকারে প্যাকটি লাগান।
৩। ১০-১৫ মিনিট
রাখুন।
৪। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা
পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে
ফেলুন।
৫। তারপর ময়েশ্চারাইজার ক্রিম
বা লোশন ব্যবহার করুন।
৬। এটি সপ্তাহে তিন-চার বার ব্যবহার
করুন।
ডিমের
সাদা অংশ ত্বকের নমনীয়তা
বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিংয়ের
মত কাজ করে।
0 Comments