এক প্যাকেট চিপসের দাম যদি
১০ টাকা ধরি তবে
মাস শেষে আপনার সন্তানের
টিফিন খরচ বাবদ ২০০-২৪০ টাকা ব্যয়
হয়। একটি
মাত্র সন্তান থাকলে এই
টাকাটি বাবা মায়ের চোখেই
লাগবে না। কিন্তু
একের অধিক সন্তান থাকলে
এ ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই সাশ্রয়ী
হতে হবে। এই
খরচটি অর্ধেকেরও নিচে নামিয়ে আনতে
পারবেন যদি আপনি আপনার
সন্তানকে বাসায় তৈরি টিফিন
দিয়ে দেন। তবে
টিফিন তৈরির ক্ষেত্রে আপনাকেও
কিছুটা চালাক এবং হিসেবী
হতে হবে। নিম্নোক্ত
টিপসগুলো আপনাকে এ ব্যাপারে
অনেক সাহায্য করবে।
নিজের
সুবিধা
অনুযায়ী
সংরক্ষন
করুন
রান্নার সামগ্রী নষ্ট হওয়া মানেই
টাকা নষ্ট। শাকসবজি
ও ফলমূল দামী হলেও
এগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাই
এসব জিনিস প্রয়োজনের অতিরিক্ত
কেনা ঠিক নয়।
যদি দামাদামি করে অল্প দামে
প্রচুর কেনার সুযোগ থাকে
তবে কেনার আগেই ভেবে
নিতে হবে কিভাবে বাড়তি
শাকসবজি এবং ফলমূল সংরক্ষন
করবেন। নতুবা
অল্প করেই কিনুন যেটুকু
পরিবারের সবাই মিলে খেয়ে
শেষ করতে পারবে।
শাকসবজি আর ফলমূল কেনার
ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন সেগুলো
ফ্রেশ থাকতে থাকতে খেয়ে
শেষ করতে পারবেন কিনা। কারণ
বাসি হয়ে গেলে সেগুলো
খেতে স্বাদ লাগবেনা আর
গুনাগুণও তখন অনেক কমে
যায়। ফলের
মধ্যে আপেল,কমলা,আনার
এবং সবজির মধ্যে গাজর,সিম, মটরশুঁটি অনেকদিন
ফ্রিজে রেখে খাওয়া যায়। কিন্তু
আঙুর, তরমুজ, পেয়ারা এসব
ফল ফ্রিজে বেশিদিন ভালো
থাকেনা। আপনি
চাইলে স্যান্ডউইচ ব্রেড আর ন্যুডুলস
কিনে রেখে দিতে পারেন
রান্নাঘরে। এগুলো
অনেকদিন ভালো থাকে আর
দামও কম। তবে
খেয়াল রাখবেন যাতে দীর্ঘসময়
রান্নাঘরে পড়ে না থাকে। তাহলে
কিন্তু ছত্রাক জমে এগুলো
নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্যাকেটজাত
খাবার
থেকে
দূরে
থাকুন
নানারকম চিপস ছাড়াও বাজারে
আজকাল ছোট ছোট প্যাকেটে
কেক,বিস্কুট,ওয়েফার ইত্যাদি পাওয়া
যায়। রংবেরঙের
প্যাকেট দেখে বাচ্চারা সহজেই
আকৃষ্ট হয় এসব খাবারের
প্রতি। একারনে
অনেক বাচ্চাই স্কুলে দেয়া টিফিন
না খেয়ে এসব খেতে
চায়। এতে
করে একদিকে যেমন অর্থের
অপচয় হয় তেমনি এসব
খাবারের মান নিয়ে সবার
মনে প্রশ্নও থেকে যায়।
তাই সবচেয়ে উত্তম উপায়
হচ্ছে বাসা থেকে বাচ্চাদের
এসব খাবার বানিয়ে দেয়া। আপনার
সোনামণির কি খেতে ইচ্ছা
করে সেটি জেনে নিয়ে
তাকে টিফিনে সেই খাবারটি
বানিয়ে দিন। এসব
খাবারের রেসিপি আপনি অনলাইনেই
পাবেন। এতে
করে আপনি যেমন নিশ্চিন্ত
থাকতে পারবেন আপনার সন্তানের
স্বাস্থ্য নিয়ে তেমনি ফালতু
খরচও বেঁচে যাবে অনেক। তাছাড়া
এই খাবারগুলো রান্না করাও আপনি
শিখে ফেলতে পারবেন এই
সুযোগে। যদি
আপনার হাতে সময় কম
থাকে তবে সহজ কিছু
বানিয়ে দিন যেমন ন্যুডুলস। মাঝেমাঝে
আপনার সন্তানকে একটু আধটু প্যাকেটজাত
খাবার খেতে দিতে পারেন। এতে
দোষের কিছু নেই।
তবে খেয়াল রাখবেন সে
যেন এসব খাবারে আসক্ত
হয়ে না পড়ে।
ভালোমানের
টিফিনবক্স
ও
পানির
বোতল
ব্যবহার
করুন
আপনি যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ
টিফিন আপনার সন্তানকে দিতে
পারেন সেই জন্য ভালো
একটি টিফিন বক্সের জুড়ি
নেই। ওয়ান
টাইম ইউজেবল বক্স কখনই
ব্যবহার করবেন না।
এগুলো মানের দিক দিয়েও
ভালো নয় আবার এগুলো
থেকে খাবার ব্যাগে ছড়িয়ে
পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। তাই
বাজার থেকে ভালো এবং
টেকসই দেখে একটি টিফিনবক্স
কিনবেন।
কেনার সময় বিক্রেতার কাছ
থেকে অবশ্যই জেনে নিবেন
যে বক্সের প্লাস্টিক অতিরিক্ত
গরম বা ঠাণ্ডা সহ্য
করতে পারে কিনা।
এতে খাবার রাখলে কতক্ষন
পর্যন্ত খাবারটি গরম আর ভালো
থাকবে সেটিও জেনে নিবেন। কারণ
প্রতিদিন ঠাণ্ডা খাবার খেতে
আপনার বাচ্চাটির একটুও ভালো লাগবে
না। আবার
বক্সটি যদি গরম সহ্য
করতে না পারে তবে
সেটি ফেটে যাবে এবং
আপনাকে দুদিন পরপরই নতুন
বক্স কেনার জন্য বাড়তি
কিছু টাকা খরচ করতে
হবে। তাই
একবারেই ভালো এবং অনেকগুলো
কম্পার্টমেন্ট আছে এমন টিফিনবক্স
কিনবেন।
প্লাস্টিক পানির বোতল এবং
দামী জুসের বোতল এড়িয়ে
চলুন। তার
বদলে থার্মোস কিনুন। এতে
গরম বা ঠাণ্ডা দুরকম
পানিই রাখতে পারবেন এবং
পানির তাপমাত্রা একই থাকবে।
এক্ষেত্রেও কিপটামি করবেন না নতুবা
বাড়তি খরচ লাগবেই।
অবশিষ্ট
বাড়তি
খাবারের
সঠিক
ব্যবহার
করুন
রান্নার পর সবসময় খাবার
হটপটে রাখতে চেষ্টা করবেন। এতে
করে যদি সব খাবার
খাওয়া নাও হয় তবুও
সেগুলো আপনি পরে আবার
ব্যবহার করতে পারবেন।
অনেকসময় এগুলো দিয়েই সম্পূর্ণ
অন্যরকম ডিশ তৈরি করা
যেতে পারে। ধরুন
যদি রাতের খাবারের পর
দেখলেন অনেক মাংস বেঁচে
গেছে তবে তার কিছুটা
দিয়ে বার্গার স্টেক বানিয়ে ফেলতে
পারেন। আবার
সবজি থাকলে সেটি দিয়ে
ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ বানিয়ে ফেলতে পারেন। অর্থাৎ
যেটুকুই অবশিষ্ট থাকুক না কেন
সেটি ফেলে না দিয়ে
বরং সেটিকে কাজে লাগিয়ে
মনের মতো কিছু মজাদার
খাবার তৈরি করে ফেলুন
আপনার ছোট্ট সোনামণির জন্য।
ঘরে
তৈরি
টিফিনের
অভ্যাস
গড়ে
তুলুন
আমরা সকলেই জানি যে
ঘরের তৈরি টিফিনে সন্তানকে
অভ্যস্ত করা সহজ ব্যাপার
নয়। তাই
বলে হাল ছেড়ে দিলে
কিন্তু কাজ হবেনা।
অনেকসময় ঘরে টিফিন তৈরি
করে দেয়াটাও খুব কষ্টের কাজ
বলে মনে হতে পারে
বিশেষ করে ছুটির দিনের
পরে। কিন্তু
আপনি যদি আগেরদিনই অল্প
কিছু রান্নার প্রস্তুতি সেরে রাখেন তবে
টিফিন তৈরিটি অতোটা কষ্টকর
বলে মনে হবেনা।
ছুটির দিনে সারা সপ্তাহের
খাবারের পরিকল্পনা করে ফেলবেন।
এ ব্যাপারে আপনার সন্তানের মতামতও
বেশ গুরুত্তের সাথে গ্রহন করবেন। এরপর
পরদিনের কিছু রান্না আজকেই
গুছিয়ে রাখবেন। রাতে
ঘুমাতে যাবার আগে একবার
দেখে নেবেন পরদিন বাচ্চাকে
টিফিনে কোন খাবারটি রান্না
করে দেবেন। এভাবে
একই কাজ বারবার করতে
করতে এটি আপনার এবং
আপনার সন্তানের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।
বেশিরভাগ বাচ্চাই মনে করে ঘরে
তৈরি খাবারের কোন তুলনা হয়না। আর
সেটি যদি হয় পছন্দের
কোন খাবার তবে তো
কথাই নেই। তাই
ঘরের টিফিন আপনার পকেটের
টাকাও বাঁচিয়ে দেয় আবার আপনার
সন্তানকেও সুস্থ এবং সন্তুষ্ট
রাখে।
0 Comments