শিশুদের খেলনা #4 বয়স অনুসারে শিশুদের জন্য খেলনা


কোন বয়সের শিশুদের কেমন হবে খেলনা

খেলনা এবং খেলা শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের মাধ্যম একজন মানুষ ছোটবেলায় কী ধরনের খেলনা দিয়ে খেলেছে, তার প্রভাব পড়ে মানুষটির ব্যক্তিত্বের ওপর শিশুর জন্য খেলনা বাছাইয়ে হতে হবে সচেতন কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে শিশুর খেলনা বাছাই করা উচিত

ভালো খেলনার বৈশিষ্ট্য হলো, খেলনা হবে আবিষ্কারধর্মী, নাটকীয় সৃজনশীল শিশুর ক্ষেত্রে তার শারীরিক মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে বয়সের সঙ্গে শিশুর খেলনাও বদলে যাবে

খেলনা শিশুর তুলনায় হালকা ছোট হলে ভালো, যাতে শিশু নিজেই সেটা নাড়াচাড়া করতে পারে ঘরে বাইরে দু-জায়গায়ই খেলা যায় এমন খেলনা শিশু বিকাশে বেশি সহায়ক হয় শিশুর দলবদ্ধভাবে খেলার সুযোগ থাকতে হবে খেলনার কোনো অংশ যেন ধারালো বা শিশুর জন্য ক্ষতিকর না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যেকোনো বয়সী শিশুর ক্ষেত্রেই খেলা সময়ের অপচয় নয়; বরং শিশুর বিকাশ ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য আবশ্যক খেলার মাধ্যমেও অনেক সময় শিশুর গঠনমূলক সৃজনশীলতা প্রকাশ পায় নিজের অজান্তেই খেলার মাধ্যমে শিশুর প্রাথমিক সামাজিক শিক্ষা শুরু হয় তাই খেলার বহুমুখী দিক মাথায় রেখে শিশুর খেলনা নির্বাচন করতে হবে

 

বয়স অনুযায়ী খেলনা

বিভিন্ন বয়সে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের খেলনার প্রতি আগ্রহী হয় শারীরিক মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে খেলনা খেলার ধরন পরিবর্তন হবে জন্মের পর থেকে প্রায় ছয়-সাত মাস পর্যন্ত শিশুরা নিজে থেকে খেলতে পারে না, কিন্তু রঙিন, নরম মিউজিক হয় এমন খেলনা দিলে সে আনন্দ পায় এবং প্রতিক্রিয়া দেখায় এই বয়সের শিশুর খেলনা অবশ্যই সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে কেনার পর জীবাণুমুক্ত লিকুইড দিয়ে ধুয়ে-মুছে শিশুর হাতে দিতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে

নবজাতক থেকে বছর : এক বছরের কম বয়সী শিশুরা সাধারণত কোনো খেলনা পেলে প্রথমেই তা মুখে দেয়, শব্দ করে ছুড়ে ফেলে বা টানাটানি করে এতে তারা কোনটা নরম, শক্ত হালকা তা বুঝতে শেখে মিউজিক হয় এমন খেলনা দিতে পারেন তাছাড়াও ভাসমান খেলনা ওর গোসলের গামলায় দিতে পারেন গোসলের প্রতি অনীহা কমবে রঙিন বইও দিতে পারেন যেসব বইয়ের পাতা শক্ত বা প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো তেমন বই ভালো খেলার ছলে ফুল, ফল পশুপাখি চিনবে ফোম বা প্লাস্টিকের তৈরি ব্লক দিন নাড়াচড়া করতে করতে আকার, রং এবং সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠবে

থেকে বছর : দুই বছর বয়স থেকে শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং খেলনাকে জীবন্ত মনে করে খেলনার সঙ্গে অভিনয় করে যেমনঘরবাড়ি খেলা, পুতুল খেলা, জীবজন্তু বা ডাক্তার সাজা পুতুল বা এজাতীয় খেলনার সঙ্গে অভিনয়মূলক খেলা খেলে আশপাশে যা দেখে, সেসব মনে রেখে সেই আচরণগুলো পুতুলের সঙ্গে বা অন্য কিছুর সঙ্গে করে যেসব খেলনার মাধ্যমে শিশু রং, আকৃতি বা সহজ গণনা শিখতে পারে, তেমন খেলনাও দু-তিন বছর বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী

থেকে বছর :চার বছর পর্যন্ত শিশুদের খেলায় প্রাণশক্তির উদ্যম প্রকাশিত হয় দৌড়ঝাঁপ, লাফানো, চেয়ার-টেবিল ঠেলা, সাইকেলে চড়াএসব করতে পছন্দ করে তারা সব সময় কিছু না কিছু করতে ভালোবাসে সময় শিশুদের উপযোগী মাপের করাত, হাতুড়ি, ছোট কাঠের টুকরা, কাজ করার বেঞ্চ, কাগজ, শিশুদের উপযোগী কাঁচি দেওয়া যেতে পারে কোনো কিছুর আকৃতি গড়তে ক্লে বা ফুড কালার মেশানো রঙিন আটার দলা দেওয়া যেতে পারে খেলতে খেলতে বর্ণমালা শেখা, গুনতে শেখাও এই বয়সের জন্য ভাল রং পেন্সিল, খাতা দিন বাচ্চার বিকাশে সহায়ক হবে বড় আকারের গাড়ি বা রকিং ঘোড়া দিতে পারেন বল দিতে পারেন কোনো কিছু পর্যবেক্ষণ করে লক্ষ্য স্থির করার প্রাথমিক প্রস্তুতি পাবেবিল্ডিং ব্লকস, ক্লে সেট দিন নতুন কিছু বানানোর চিন্তাশক্তি ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে কাগজ দিয়ে খেলনা বানিয়ে দিন বাচ্চাকে নিজে নিজে তা বানাতে উৎসাহ দিন ফুল, পশুপাখি বা সংখ্যা সাজানোর অনেক খেলনা আছে তেমন খেলনা দিন স্মৃতিশক্তি আর সৃজনশীলতা বাড়বে

থেকে বছর : পাঁচ বছর বয়স থেকে শিশুরা পরিকল্পনা অনুযায়ী গঠনমূলক খেলায় অংশগ্রহণ করে প্রথম দিকে তারা বালু, কাদা, গুঁড়া রং, ব্লক ইত্যাদি দিয়ে কিছু একটা তৈরি করার চেষ্টা করে সময় তারা রং-তুলি দিয়ে ছবি আঁকতে পছন্দ করে এবং তাদের আঁকা ছবি কিছুটা বোঝাও যায় সময় ছবি দেওয়া গল্পের বইও দিতে পারেন

থেকে বছর : ছয় বছর বয়স থেকে শিশুদের মধ্যে সাধারণত জিনিসপত্র সংগ্রহ করার প্রবণতা দেখা দেয় যেমনমার্বেল, টিকিট, স্টিকার, রং-পেনসিল, ছবি, পুতুল ইত্যাদি এই বয়সের শিশুরা যেকোনো খেলা সঠিকভাবে নিয়ম মেনে খেলতে চেষ্টা করে বড়দের দলগত খেলায় অংশ নিতে আগ্রহ দেখায় বয়সে অভিনয়মূলক খেলার প্রতি আগ্রহ কমে আসে তারা গল্প শুনতে দলবদ্ধভাবে খেলতে পছন্দ করে বয়সে শিশুর নিজস্ব আগ্রহ তৈরি হয় পছন্দ-অপছন্দ নির্ণয় করতে পারে শিক্ষণীয় খেলনা বয়সের শিশুদের জন্য উপযুক্ত যেমন বিজ্ঞান সামগ্রী, রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, বারবি পুতুল, কম্পিউটার ভিডিও গেমস, স্পোর্টস ইক্যুইপমেন্ট কিনে দিতে পারেন


খেয়াল রাখতে হবে পছন্দ : আপনার পছন্দ হয়েছে বলেই কিনে ফেলবেন অথচ শিশু সেভাবে আনন্দ পেল না এমনটা যেন কখনোই না হয় এমন খেলনা নির্বাচন করুন যেটা বাচ্চাকে আনন্দ দেবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে যেন সেই খেলনা নিয়ে খেলতে পারে পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজের মতো খেলাধুলাও যদি শিশুর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ বয়ে আনবে শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে

রং : বাচ্চারা রঙের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয় একদম ছোটদের রং, আকার চেনাতে বিভিন্ন রঙিন খেলনা, ব্লক কিনে দিতে পারেন এতে ওরা খেলতে খেলতে শিখে যাবে নানা রং, বিভিন্ন আকার তবে খেলনার রঙের ক্ষেত্রে প্রাথমিক মাধ্যমিক রঙের প্রতি জোর দেওয়া উচিত কারণ ছোট শিশুদের চোখের ওপর এসব রং কম চাপ ফেলে রঙিন খেলনা মানসিক বিকাশেও সহায়ক

সৃজনশীলতা : কিনতে পারেন স্ট্রাকচার মেকিং বা ব্লকস জাতীয় খেলনা যার সাহায্যে নানা ডিজাইন বা ছবি তৈরি করা যায় মনের আনন্দে খেলতে খেলতে নতুন কোনো কিছু তৈরি করতে পারলে ওদের উৎসাহ আরও বাড়বে ধরনের খেলনা শিশুকে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস গড়তে সহায়তা করে শিশু নিজের গুণাবলিকে গুরুত্ব দিতে শেখে এবং নেতৃত্বের লক্ষণও প্রস্ফুটিত হয়

নিরাপত্তা : ধারালো বা তীক্ষè খেলনা, গানস অ্যান্ড ফলস বুলেটস, মেকানিক্সের জিনিসপত্র জাতীয় খেলনা শিশুদের থেকে দূরে রাখাই ভালো একান্তই পছন্দ হয় তাহলে খেলার সময় বড় কেউ যেন সামনে থাকে

সতর্কতা

প্যাকেটের লেবেলটি ভালোভাবে পড়ে নিন খেলনাটি কত বছরের শিশুর খেলার উপযুক্ত এবং কীভাবে ব্যবহার করতে হবে এসব তথ্য লেবেল থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন

শিশুরা কিছু পেলেই সেটা মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে তাই খেলনা বা খেলনার অংশ যেন শিশুর হাঁ-মুখের চেয়ে ছোট না হয়, ব্যাপারটি বিবেচনায় রাখুন

উচ্চ স্বরে শব্দ হয় এমন খেলনা না কেনাই ভালো শিশুর শ্রবণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে

শূন্যে ছুড়ে দেওয়া যায় এমন খেলনা শিশুর হাতে দেওয়া ঠিক না চোখে আঘাত লেগে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে

কাপড়ের পুতুল বা জাতীয় খেলনা কেনার আগে দেখে নিন ময়লা হলে যাতে সহজেই ধোয়া যাবে কি না, সেলাই ঠিকঠাক আছে কি না

প্লাস্টিকের খেলনা কেনার আগে দেখে নিন কোনো অংশ ধারালো কি না এর রং শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কি না

 

 

0 Comments