গাজীপুরে রয়েছে বেশকিছু পিকনিক স্পট ।
ঢাকার কাছের শহর গাজীপুরে এমন অনেক কিছুই আছে যা কালের ইতিহাস হয়ে দাড়িয়ে আছে। গাজীপুর
সদর, ছাতিয়ানী বটবৃক্ষ- জাঙ্গালিয়া, কালীগঞ্জ, রাথুরার জঙ্গল - শ্রীপুর , চন্দ্রা শালবন, কালিয়াকৈর, কেওয়া বটবৃক্ষ (প্রায় ২০ বৎসরের প্রাচীন)- শ্রীপুর, কৃষি খামার (সর্ববৃহৎ)- কাশিমপুর, বরমী বাজার (বানর বিচরণ ক্ষেত্র ও প্রাচীন বাজার)-শ্রীপুর, গাজীপুর, নুহাস চলচ্চিত্র ও পর্যটন কেন্দ্র
– মির্জাপুর, হোতাপাড়া স্যুটিং স্পট- গাজীপুর সদর, জীবন্ত স্বর্গ- শ্রীপুর, পুষ্পদাম- শ্রীপুর, অনন্তধারা পর্যটন বিনোদন কেন্দ্র - রাজেন্দ্রপুর, গাজীপুর সদর,
সীগার্ল-শ্রীপুর, অঙ্গন- সুর্য্যনারায়নপুর, কাপাসিয়া, নন্দন- কালিয়াকৈর।জীবিকার
প্রয়োজনে রাজধানীর বেশির ভাগ মানুষ সপ্তাহ জুড়ে ব্যস্ত থাকে। তাই
সপ্তাহান্ত হয়ে ওঠে একটু নিজেকে সময় দেওয়ার মতো দিন। সপ্তাহান্তের
একদিনের ছুটিতে দূরে যাওয়ার সুযোগ কই? তাই ঢাকার কাছাকাছি গাজীপুরই হতে পারে উত্তম গন্তব্য।গাজীপুরের
পূর্ব নাম ছিল জয়দেবপুর। তারও
আগে একে ভাওয়াল নামে ডাকত লোকে। জনৈক
মুসলিম কুস্তিগির গাজী এ অঞ্চলে বসতি
স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি বহুদিন সাফল্যের সঙ্গে এ অঞ্চল শাসন
করেছিলেন। জনশ্রুতি
বলছে, এই কুস্তিগিরের নামানুসারেই এ অঞ্চলের নাম
রাখা হয় গাজীপুর।তবে
অন্য আরেকটি জনশ্রুতি বলছে, সম্রাট আকবরের সময় চবি্বশ পরগনার জায়গিরদার ছিলেন ঈশা খাঁ। এই
ঈশা খাঁরই একজন অনুসারীর ছেলের নাম ছিল ফজল গাজী। যিনি
ছিলেন ভাওয়াল রাজ্যের প্রথম ‘প্রধান’। তারই
নামের সঙ্গে যুক্ত ‘গাজী’ পদবি থেকে এ অঞ্চলের নাম
রাখা হয় গাজীপুর।
ঢাকা থেকে কাছে হওয়ায় একদিনের ভ্রমনের জন্য আদর্শ স্থান গাজীপুর।
গাজীপুরের দেখার মতো স্থানের মধ্যে রয়েছে ভাওয়াল রাজবাড়ী ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান , নুহাশ পল্লী, বলিয়াদী জমিদার বাড়ী, নাগরী, নিকোলাস চার্চ ও বঙ্গবন্ধু সাফারি
পার্ক,
তাছাড়াও গাজীপুরের প্রত্নসম্পদ এর মধ্যে রয়েছে জয়দেবপুর, ইন্দ্রাকপুর (প্রাচীন রাজধানী), শ্রীপুর, বলধার জমিদার বাড়ী, বাড়ীয়া, টোক বাদশাহী মসজিদ, কাপাসিয়া, পূবাইল জমিদার বাড়ী, পূবাইল, সেন্ট নিকোলাস চার্চ, কালীগঞ্জ, বলিয়াদী জমিদার বাড়ী, ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী, জয়দেবপুর, শৈলাট, শ্রীপুর, কাশিমপুর জমিদার বাড়ী, গাজীপুর সদর, দত্তপাড়া জমিদার বাড়ী, টঙ্গী, কপালেশ্বর ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরাকীর্তি, রাজা শিশু পালের রাজধানী, একডালা দুর্গ, কাপাসিয়া, মীর জুলমার সেতু, টঙ্গী, সাকাশ্বর স্তম্ভ, কালিয়াকৈর ইত্যাদি নানা ঐতিহাসিক কৃতি।
ভাওয়াল রাজবাড়ী:
ব্রিট্রিশভারতে
এক পরিচিত নাম ভাওয়াল রাজবাড়ী। বিংশ
শতকের প্রথম দিকে একটি বিশ্ববিখ্যাত মামলা হয়েছিল যা ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায়কে ঘিরে ও ভাওয়ালের সন্ন্যাসী
মামলা নামে খ্যাত। এ
ঘটনা থেকে কবিতা উপন্যাস এমনকি যাত্রাপালা তৈরী হয়েছিলো। তৈরী
হয়েছে ছবিও। ১৮৭৮
সালে এই পরিবারের জমিদার কালীনারায়ণ রায়চৌধুরী ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বংশানুক্রমিক ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন। কালীনারায়ণের
পুত্র রাজা রাজেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী এই জমিদারির আরও বিস্তৃতি ঘটান। রাজা
নিজেই সরাসরি জমিদারি পরিচালনা সেই ভাওয়ালের রাজবাড়ী এখনো দাড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। এই
রাজবাড়ীর আওতায় ভাওয়াল এস্টেট প্রায় ৫৭৯ বর্গমাইল (১,৫০০ কিমি)
এলাকা জুড়ে ছিল । ভাওয়াল
এস্টেট পরিধি এবং আয়ের দিক থেকে পূর্ব বাংলায় নওয়াব এস্টেটের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম । সম্পূর্ণ
জমিদারিটি কয়েকটি সার্কেলে বিভক্ত ছিল। বর্তমানে
ভাওয়াল এস্টেটের কর্মকাণ্ড গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি সংস্কার বোর্ড পরিচালনা করে।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান :
গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে কালের সাক্ষী হয়ে প্রায় অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ি। এই
উদ্যানটি রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায়
অবস্থিত। ভাওয়ালের
রাজবাড়ি ছিল ভাওয়াল এস্টেটের মূল পরিচালনা কেন্দ্র। পরিধি
এবং আয়ের দিক থেকে পূর্ব বাংলার নওয়াব এস্টেটের পরেই ছিল ভাওয়াল এস্টেটের জমিদারির অবস্থান। আয়তন
এবং কক্ষের হিসেবে এটি একটি বিশাল আকারের রাজবাড়ি। প্রায়
৫ একর জায়গার ওপর রাজবাড়িটি নির্মিত। এ
রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে রয়েছে বিশাল একটি দীঘি এবং সামনে রয়েছে বিশাল সমতল একটি মাঠ। এই
রাজবাড়ীর আওতায় ভাওয়াল এস্টেট প্রায় ৫৭৯ বর্গমাইল (১,৫০০ কিমি)
এলাকা জুড়ে ছিল। ভাওয়াল
এস্টেট পরিধি এবং আয়ের দিক থেকে পূর্ব বাংলায় নওয়াব এস্টেটের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম। সম্পূর্ণ
জমিদারিটি কয়েকটি সার্কেলে বিভক্ত ছিল। মূল
প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে একেবারে পিছনে যেতে হলে হাঁটতে হবে অনেকটা পথ, পেরুতে হবে অনেক অলিন্দ আর বারান্দা। ক্ষণে
ক্ষণে চোখ আটকে যাবে বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শনে। বিশাল
এ রাজপ্রাসাদটির বিশালত্ব দেখে যে কেউ অভিভূত হবেন। আবার
অনেকেই রাজবাড়িতে ঢুকে গোলক ধাঁধায় পড়ে যেতে পারেন। কারণ
এর অলিন্দ গলি উপগলি দিয়ে একবার হেঁটে গিয়ে নতুন যে কারোর পক্ষে পুনরায় সেগুলো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। এ
রাজবাড়ির প্রতিটি স্থানে প্রতিটি কক্ষে ঘুরে দেখতে সারা দিন লেগে যেতে পারে। বিংশ
শতকের প্রথম দিকে একটি বিশ্ববিখ্যাত মামলা হয়েছিল। এটি
ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায়কে ঘিরে। এ
ঘটনা থেকে কবিতা, উপন্যাস, যাত্রাপালা, এমনকি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছিল।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭৪) অনুযায়ী ৫,০২২ হেক্টর
জায়গা জুড়ে ভাওয়াল শালবনে এই উদ্যান গড়ে তোলে। ১৯৮৫
সালে এ বনে খেঁকশিয়াল,
বাগদাস, বেজী, কাঠবিড়ালী, সহ ৬৪ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যার মধ্যে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী,
৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১০ প্রজাতির উভচর ও ৩৯ প্রজাতির
পাখি রয়েছে। ভাওয়াল
জাতীয় উদ্যান মূলত ক্রান্তীয় পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি।এ
বনে ২২১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যার মধ্যে ২৪ প্রজাতির লতা, ২৭ প্রজাতির তৃণ, ৩ প্রজাতির পামজাতীয়
বৃক্ষ, ১০৫ প্রজাতির ঔষধি, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৪৩ প্রজাতির বৃক্ষ। শাল,
(Shorea robusta) এ উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ। এছাড়া
এ বনে কৃত্রিমভাবে ইউক্যালিপটাস আর রাবারের বনায়ন করা হয়েছে।এখানে
বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। স্পটগুলোর
হলো: আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন। এখানকার
কটেজগুলো হলো: বকুল, মালঞ্চ, মাধবি, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি। এখানে
১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্টহাউজ
রয়েছে। তবে
রাত্রি যাপনের জন্য এখানে অনুমতি দেওয়া হয় না।
গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে মৃতপ্রায় চিলাই নদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজশ্মশানেশ্বরী। বর্তমানে
বাংলাদেশের প্রত্ন ঐতিহ্যের অংশ এই রাজশ্মশানেশ্বরীটি ছিল ভাওয়াল রাজপরিবারের সদস্যদের শবদাহের স্থান। এখানে
পরিবারের মৃত সদস্যদের নামে সৌধ নির্মাণ ও নামফলক স্থাপন
করা হতো। শ্মশান
চত্বরে একটি শিবমন্দির রয়েছে। ১৯৫১
সালে কালী নারায়ণের সময়ই ভাওয়াল শ্মশান মঠ নির্মিত হয়। আটটি
মঠের মধ্যে সামনের তিনটি মঠের নির্মাণশৈলী সাধারণ। দেখতে
প্রায় একই রকম। কিন্তু
বাকি পাঁচটি মঠের নির্মাণশৈলী চিত্তাকর্ষক। এদের
মধ্যে একটি মঠ সবচেয়ে উঁচু। সবচেয়ে
বড় মঠটি নির্মিত হয়েছে ভাওয়াল জমিদারির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণ নারায়ণ রায়ের উদ্দেশ্যে। উনিশ
শতকের শেষের দিকে নির্মিত এই মঠগুলো কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে। শ্মশানঘাটের
পূর্ব দিকে চিতা। এখানে
শবদাহ করা হয়। ঐতিহাসিকদের
মতে, মূল শ্মশানের কাজে হাত দিয়েছিলেন রাজা কীর্তি নারায়ণ রায়। পাঁচ
একর জমির ওপর গড়ে ওঠে সমাধিসৌধ চত্বরটি। জানা
যায়, লোক নারায়ণ রায় ভারতের পুরীর বিখ্যাত স্থপতি কামাখ্যা রায়কে দিয়ে ভাওয়াল রাজশ্মশানেশ্বরী নির্মাণ করান। ভাওয়াল
রাজ শ্মশানেশ্বরীর গায়ের অনিন্দ্য নকশাগুলো এখনো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। ছয়টি
স্তম্ভবিশিষ্ট শিবমন্দিরটি নির্মাণে মোগল স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। আগে
অনেক দূর থেকেও মন্দিরের স্তম্ভগুলো দেখা যেত। কিন্তু
শ্মশান চত্বরের আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় চোখের আড়ালে পড়ে যাচ্ছে মন্দিরটি। কিছুদিন
আগেও নানা গাছগাছালির ভিড়ে শ্মশান ভূমির প্রবেশস্থল থেকে মঠগুলো দেখা যেত না। কিন্তু
এখন গাছগুলো কেটে ফেলার ফলে সামনে পায়ে হেঁটে কয়েকগজ এগোলেই চোখে পড়ে বিস্ময়কর স্থাপত্য। সংরক্ষণের
কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় খসে পড়ছে স্তম্ভগুলোর গায়ের অনবদ্য সব কারুকাজ। গাজীপুর
চৌরাস্তা থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্ব
দিকে এই শ্মশানঘাট অবস্থিত।
ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কপথে ও রেলপথে গাজীপুর
যাওয়া যায়। গাড়িতে
গেলে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে জেলা জাজ কোর্ট (রাজবাড়ী) তার ১০ মিনিট দূরত্বে শ্মশানঘাট। এয়ারপোর্ট
স্টেশন থেকে জয়দেবপুরগামী ট্রেনে জ্যাম এড়িয়ে অল্প সময়ই যেতে পারবেন। কোন
ট্রেন জয়দেবপুর থামবে জেনে নেবেন। স্টেশনে
নেমে রিকশা নিয়ে সোজা রাজবাড়ি ও শ্মশানঘাট।
নুহাশ পল্লী ঢাকার অদুরে গাজীপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে গাছপালা পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। জনপ্রিয়
কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ এর বাড়ী বলা যায় একে। সেখানকার
নানা স্থাপনা আর অসংখ্য ফলজ, বনজ গাছের পাশাপাশি তিনি বানিয়েছেন ঔষধি গাছের বাগান। শৈল্পিক
দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি নুহাশ পল্লীকে এক স্বপ্নজগত করে তুলেছেন । এখানে
রয়েছে আড়াইশ প্রজাতির বিভিন্ন গাছগাছালি। আছে
স্যুটিং স্পট, দিঘি আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো। শানবাঁধানো
ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম ‘ভূত বিলাস’। দুর্লভসব
ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই প্রতৃকিৃতি আকারে রয়েছে রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরো
রয়েছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল। ৪০
বিঘা জায়গা নিয়ে নুহাশ পল্লী তৈরি করেন হুমায়ুন আহমেদ।
এদেশে অধিকাংশ জায়গায় খ্রিষ্টান ঐতিহ্য ব্রিটিশ আমলের হলেও এই গীর্জা মুঘল আমলের। উপজেলার
দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে বালু
ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। নাগরীতে
ষোড়শ শতকের শেষ দিকে পুর্তগীজ খ্রীস্টানরা আস্তানা গাড়ে এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতিক্রমে ১৬৬৪ সনে তারা প্রথম গীর্জা স্থাপন করেন। পরে
১৬৮০ সনে পাকা ইমারত হয় নাগরীর সেন্ট নিকোলাস টলেন্টিনো চার্চ। এখান
থেকে কালীগঞ্জের আঞ্চলিক বাংলা ভাষার প্রথম বাইবেল অনুদিত হয়। সর্বপ্রথম
বাংলা ভাষার দ্বিভাষিক অভিধান ও প্রথম গদ্য
ছাপার বইও প্রকাশিত হয়। এজন্য
ভারতবর্ষজুড়ে এর বিশেষ স্থান রয়েছে।
কিভাবে যাবেন:
এই চার্চে যাওয়ার জন্য প্রথমেই ঢাকা থেকে গাজীপুরে অবস্থিত টঙ্গীতে আসতে হবে। টঙ্গী
থেকে কালীগঞ্জের বাস কিংবা সিএনজি ধরে তারপর আহসান উল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার পার হতে হবে। এরপর
নলছটা সেতু হয়ে সেইন্ট নিকোলাস চার্চে যাওয়া যায়। এই
সেতু থেকে গির্জাটির দূরত্ব মাত্র ২-৩ কিলোমিটার। তাছাড়া
প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রোবাস নিয়ে খুব সহজেই ঢাকা কিংবা অন্যান্য যেকোন শহর থেকে গির্জাটিতে আসা যায়।
কোথায় থাকবেন:
ঢাকা থেকে একদিনেই সেইন্ট নিকোলাস চার্চ ঘুরে আসতে পারবেন। তবে
থাকলে চাইলে অথবা দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে চার্জটিতে আসলে রাত্রিযাপনের জন্য গাজীপুরে শহরের কোণাবাড়ি ও চৌরাস্তা বাস
স্ট্যান্ডের কাছে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। তাছাড়া
গাজীপুরে বেশকিছু অত্যাধুনিক ও মনোরম রিসোর্ট
রয়েছে। তবে
রিসোর্টে থাকার জন্য আগে থেকেই বুকিং দেওয়া লাগবে। কিন্তু
আবাসিক হোটেলে থাকতে চাইলে কেবল যোগাযোগ করে আসলেই হবে।
গাজীপুরে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে, সেখানকার খাবারও বেশ জনপ্রিয় ও সুস্বাদু এবং
খাবারগুলো বেশ সুলভ মূল্যেই পাওয়া যায়। এছাড়া
সেইন্ট নিকোলাস চার্চটির কাছে নাগরী বাজারে হালকা চা-নাস্তা করার জন্য বেশ ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। তবে
একদিনের জন্য গেলে পিকনিকের মতো বাসা থেকে পছন্দ অনুযায়ী খাবারও নিয়ে নিতে পারেন।
যেহেতু সামনেই আসছে খ্রিস্টধর্মাবলম্বিদের প্রধান উৎসব বড়দিন এবং দেশব্যাপি রাষ্ট্রীয় ছুটিরদিন, এইদিনে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক ও প্রাচীন সেইন্ট
নিকোলাস চার্চটিতে।
চিড়িয়াখানায়
জীবজন্তু থাকে আবদ্ধ অবস্থায় এবং দর্শনার্থীরা মুক্ত থেকে জীবজন্তু পরিদর্শন করেন। কিন্তু
সাফারী পার্কে বন্যপ্রাণী উন্মুক্ত অবস্থায় বনজঙ্গলে বিচরণ করবে এবং মানুষ সতর্ক হয়ে চলমান যানবাহনে বসে মুক্ত প্রাণীদের দেখবেন। এতে
বন্য পরিবেশে প্রাণীকুল কীভাবে জীবনযাপন করে, তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ধারণা নিতে পারবে। ঢালাই
করা রাস্তার দুপাশে রকমারি ফুলের বেড। নানা
জাতের ফুল আর পাতাবাহারে ছেয়ে আছে। সাফারি
পার্কটিকে ৫টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে – কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। সামনের
অংশটুকু সাধারণ পার্কের মতোই। ওটুকু
ঘুরে নিয়ে কোর সাফারির দিকে পা বাড়ালাম।
কোর সাফারিতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে দুটি জিপ ও দুটি মিনিবাস। ১০০
টাকা ফি দিয়ে বন্য পরিবেশে মুক্ত প্রাণী দেখার জন্য নিজেদের বন্দী করতে হবে এসি বাসে। খানিক
বাদেই দেখা যাবে জিরাফ, জেব্রা, কালো ভাল্লুক, সাদা সিংহ, লম্বা কেশরওয়ালা সিংহ, চিতা বাঘ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতিসহ আরও নানান প্রাণী। সাফারি
কিংডমের ভেতরে প্রথমেই পাখিরাজ্য। ম্যাকাওসহ
বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি পাখি রয়েছে ওতে।
পাশেই অর্কিড হাউজ। তারপর
হাঁটতে শুরু করলে বিশাল এক জলাশয়ে রাজহাঁস, কুমির দেখা যাবে। শকুন
দেখা যাবে গাছে। গাধা
আর ঘোড়ার এক ধরনের সংকরসহ লম্বা ঠোঁটওয়ালা ধনেশ পাখি, সারস পাখি, মুখপোড়া বানর, কাছিমসহ আরো অনেক কিছু দেখা যাবে। ময়ূর
রাজ্যে নীলচে সবুজাভ ময়ূরের সাথে সাথে দুর্লভ সাদা ময়ূরও দেখা যাবে৷
সাফারী পার্কটি দক্ষিণ এশীয় মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডের সাফারী ওয়ার্ল্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়েছে। আবার
ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারী পার্কের কিছু ধারণা এখানে প্রয়োগ করা হয়েছে। সাফারী
পার্কের চারদিকে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী ঘেরা এবং এর মধ্যে দেশী/বিদেশী বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের
সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে পর্যটকরা চলমান যানবাহনে অথবা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্ত বিনোদনের
সুযোগ লাভ করতে পারেন।
প্রবেশ
ফি:
প্রাপ্ত বয়স্ক জনপ্রতি পার্কে প্রবেশ টিকেট ৫০ টাকা এবং ১৮ বছরের নিচে প্রবেশ ফি ২০ টাকা। শিক্ষা সফরে আসা বা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। গাড়িতে করে কোর সাফারি পার্ক পরিদর্শন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিজনের টিকিট ফি ১০০ টাকা। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা। প্যাডেল বোট ভ্রমণ ৩০ মিনিট ২০০ টাকা। বাস পার্কিং ২০০ টাকা। মিনি বাস বা মাইক্রোবাস পার্কিং ২০০ টাকা। গাড়ি বা জিপ পার্কিং ৬০ টাকা। অটোরিকশা বা সিএনজি পার্কিং ৬০ টাকা।
কীভাবে
যাবেন:
গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে বাঘের বাজার গেলেই চোখে পড়বে সাফারি পার্কের বিশাল সাইনবোর্ড। বাঘের বাজার থেকে সাফারি পার্কের দরজা পর্যন্ত যেতে রিকশা ও অটোরিকশা পাওয়া যায়। ভাড়া নেবে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত করা বাসে করে বাঘের বাজার সরাসরি নামা যায়। এছাড়াও গুলিস্তান কিংবা আজিমপুর থেকে ২৭ নাম্বার বাসে উঠে গাজীপুর চৌরাস্তা। চৌরাস্তায় নেমে সোজা রাস্তা পার হয়ে বাস বা টেম্পুতে করে সাফারি পার্ক। চৌরাস্তা থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে সাফারি পার্ক। ভাড়া ৫০ টাকার মতো লাগবে।
পার্কের সময়সূচি:
সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থিদের জন্য পার্কটি খোলা থাকে। প্রতি মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ। মূল সাফারি পার্ক ৯টায় খুললেও কোর সাফারি খোলে ১২টায়।
বলধা জমিদারবাড়ি:
বলধার জমিদার ছিলেন রাজ কিশোর রায় চৌধুরী। তার দত্তক পুত্র ছিলেন জমিদার হরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরি। ধারণা করা হয়, হরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী এ জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। জমিদার বাড়িটি ছিল ৪০ কামরা বিশিষ্ট।এ এলাকায় যে এককালে জমিদারিত্ব চিল তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। কালী বাড়িটি ছয় কক্ষ বিশিষ্ট ‘ভি’ আকৃতির একতলা পাকা ভবন। সেগুলোও এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সেখানে কেবল বলধার জমিদার বাড়ির ধংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে। পূর্বপাশে প্রায় আড়াই শ’ ফুট লম্বা, দুই ফুট প্রশস্ত এবং কোথাও ২-৩ আবার কোথাও ৫-৭ ফুট উঁচু একটি দেওয়ালও রয়েছে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৪ কি.মি পূর্বে অবস্থিত বলধা জমিধার বাড়ী।সি.এন.জি বা নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে বলধা জমিদার বাড়ী সহজেই পেীছানো যায়।
কাসিমপুর জমিদার বাড়ী:
কাশিমপুর কারাগারের রয়েছে এক পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়ী। আর দশটি জমিদার বাড়ীর মতই নিতান্ত অবহেলায় পড়ে আছে এই জমিদার বাড়ীটি।
কাশিমপুরের জমিদার রায়বাহদুর কেদারনাথ লাহিড়ী এই জমিদার বাড়ীর গোড়াপত্তন করেন। আনামি প্রাসাদ রায় চৌধুরী ছিলেন কাশিমপুরের শেষ জমিদার। তাদের এই জমিদারী ছিল কাশিমপুর এবং বলধা জুড়ে। এই জমিদার বাড়ীর ইতিহাস নিয়ে খোঁজ করে তেমন কিছু আমি যোগাড় করতে পারি নাই, তবে খোঁজে আছি। কাশিমপুরের জমিদার রায়বাহদুর কেদারনাথ লাহিড়ী’র এই জমিদার ইতোমধ্যে এর অর্ধেক ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ এর ‘সমাজসেবা অধিদফতর’ এর ‘সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে।
কিভাবে যাবেন :
গাজীপুরপুর-কালিয়াকৈর সড়কে কালীবাড়ি বা কাশিমপুর বাসস্ট্যান্ড নেমে কাশিমপুর কারাগার রোড ধরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর আঞ্চলিক কার্যালয় – ০৫ (কোনাবাড়ী-কাশিমপুর) হতে ২০০ গজ সামনে গেলে পাবেন এই কাশিমপুর জমিদার বাড়ী।
দত্তপাড়া জমিদার বাড়ী:
দোতলা ডার্ক পিংক কালারের পলেস্তরা করা একটি স্থাপনা। সামনে আবার লোহার বিমের উপর প্লাস্টিকের টিনের ছাউনি। দত্ত সাহেব ছিলেন গাজীপুরের ভাওয়াল রাজার নাতি এবং চৌষট্টি’র রায়টের পর তিনি তার প্রায় দুইশত একর জমিদারী এক ব্যবসায়ীর সাথে বিনিময় করে ভারতে চলে যান। বর্তমানে জমিদার বাড়ীটি একটি এনজিও লিজ নিয়ে হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
কপালেশ্বর:
বিশাল বাউন্ডারি দেয়া এলাকার অর্ধেক মাঠ, অর্ধেক একটি দীঘি, দীঘি ঘেঁষে একটি স্কুল । আগে পুরো এলাকাজুড়ে ছিল দীঘিটি, দীঘির পাড় ঘেঁষে ছিল প্রাচীন সব বৃক্ষসমূহ, যেগুলোর বেড় ছিল খুব বেশী। একটা কড়ই গাছ ছিল যা প্রায় বিঘা’খানেক এলাকা ছায়াময় করে রাখতো। কিছু প্রভাবশালী’র ছত্রছায়ায় সব জমি দখল হয়ে গেছে। গাছগুলো বনখোকোর দলের পেটে চলে গেছে হয়তোবা আর বাকী অংশ নিয়ে দীঘিটি এখনো সরকারী লিজে আছে।
সাকাশ্বর বৌদ্ধস্তম্ভ:
এটি কালিয়াকৈর অবস্থিত। এটি মৌর্য শাসন আমলে মহামতি সম্রাট অশোক কর্তৃক নির্মিত ৮৪ হাজার স্তম্ভের একটি। এটি প্রায় আড়াই হাজার বৎসের পূর্বে তৈরি মৌর্য আমলের সূচনা স্তম্ভ। স্তম্ভ খুব বড়ো না হলেও এর ঐুতহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
একডালা দুর্গ:
কাপাসিয়া উপজেলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বানার, শীতলক্ষ্যা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিমে, আনুমানিক ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জনৈক হিন্দু রাজা এই দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন। দুর্গটির দৈর্ঘ্য ছিল ৫ কিলোমিটার আর প্রস্থে ছিল ২ কিলোমিটার। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইলিয়াস শাহ ১৩৫২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে দুর্গটির সংস্কার সম্পন্ন করেন। ১৩৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ফিরোজ তুঘলক বাংলা আক্রমণ করলেও একাডালা দুর্গ অধিকার করতে পারেন নি। ১৩৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ইলিয়াস শাহ-এর মৃত্যুর পর, এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, ফিরোজ তুঘলোক পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন। এবারও পিতার মতো সিকান্দার শাহ একডালা দুর্গে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পান। এরপর ১৫১৮ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র নাসির উদ্দিন শাহ পুনরায় দুর্গটি সংস্কার করেন। রায়েদ ইউনিয়নে কালী বানার নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত দ্বার-ই দরিয়া (দরদরিয়া) দুর্গ ছিল একডালা দুর্গের শাখা দুর্গ। মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে রাজা টোডরমল এ অঞ্চলকে ভাওয়াল পরগণায় অন্তর্ভুক্ত করেন। ক্রমে ক্রমে এই দুর্গটি পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। মীর জুমলার সেতু ঢাকায় পৌছার (১৬৬০) অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মীর জুমলা বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন। মীর জুমলা 'র নাম ঢাকায় দুইটি রাস্তা এবং দুইটি সেতু নির্মানের সাথে জড়িয়ে আছে।সৈন্য, গোলাবারুদ দ্রুত চলাচলের জন্য এবং জনকল্যানে তিনি এগুলো নির্মান করেন। সড়ক দুইটির একটি ঢাকার সাথে এর উত্তরের জেলাগুলিকে সংযুক্ত করে, যা বর্তমানে ময়মনসিংহ রোড নামে পরিচিত। রাস্তাটি জামালপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। জামালপুরে একটি দূর্গ এবং টঙ্গীতে তুরাগ নদীর উপর এই টঙ্গী ব্রিজ তিনি তৈরী করেন। এছাড়া সারাবছর রাজবাড়ীর সামনের মাঠ এবং গাজীপুর চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গন এখানকার নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে মুখরিত থাকে। জমিদারী ঐতিহ্যের পাশাপাশি গাজীপুরে রয়েছে কিছু পুরনো জলাধার যেমন, হায়দ্রাবাদ দীঘি- হায়দ্রাবাদ পূবাইল। ভাওয়াল কলেজ দীঘি- গাজীপুর সদর, রাহাপাড়া দীঘি- গাজীপুর পৌরসভা, টেংরা দীঘি – শ্রীপুর, তেলিহাটী দীঘি- শ্রীপুর, সিঙ্গার দীঘি (পাল রাজাদের রাজধানী নগরী) , শ্রীপুর (মাওনা অদূরে), সিঙ্গারদীগি কাউছি টিহর, কেওয়া, শ্রীপুর, কর্ণপুর দীঘি- শ্রীপুর, চৌড়াদীঘি, কালীগঞ্জ, মাওনা দীঘি-শ্রীপুর, ঢোল সমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তি- কালিয়াকৈর, রাজবিলাসী দীঘি, কোটামুনির ডিবি ও পুকুর – ডাকুরাইল, মনই বিবি-রওশন বিবির দীঘি (চান্দরা), চন্দ্র (চান্দরা) কালিয়াকৈর, মকেশ্বর বিল- কালিয়াকৈর, বিল বেলাই- গাজীপুর সদর, উষ্ণোৎস, শালদহ নদী, গঙ্গা (সরোবর) তীর্থক্ষেত্র- শ্রীপুর, ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী ও টোক বাদশাহী মসজিদ ছাড়াও আরো কিছু ধর্মীয়স্থান ও সমাধিক্ষেত্র, যেমন: সমাধিক্ষেত্র (কবরস্থান)- চৌড়া, কালীগঞ্জ, সাকেশ্বর আশোকামলের বৌদ্ধ সত্মম্ভ (ধর্মরাজিকা)- কালিয়াকৈর , পানজোড়া গীর্জা- কালীগঞ্জ, ব্রাহ্ম মন্দির কাওরাইদ, সমাধিক্ষেত্র, গুপ্ত পরিবার- কাওরাইশ, শ্রীপুর, সেন্ট নিকোলাস (চার্চ)- নাগরী, কালীগঞ্জ, বক্তারপুর, ঈশা খাঁর মাজার- কালীগঞ্জ।
শীতলক্ষ্যা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিমে, আনুমানিক ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জনৈক হিন্দু রাজা এই একডালা দুর্গটি (Ekdala Fort) নির্মাণ করেছিলেন। দুর্গটির দৈর্ঘ্য ছিল ৫ কিলোমিটার আর প্রস্থে ছিল ২ কিলোমিটার।
ইলিয়াস শাহ বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর, দিল্লীর সুলতান ফিরোজ তুঘলকের সাম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ১৩৫২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে দুর্গটির সংস্কার সম্পন্ন করেন। ১৩৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ফিরোজ তুঘলক বাংলা আক্রমণ করলে, ইলিয়াস শাহ কোনো বাধা না দিয়ে এই দুর্গে আশ্রয় নেন। এই সময় বাংলার রাজধানী ফিরোজ তুঘলক করলেও একাডালা দুর্গ দখল করতে পারেন নি। কয়েক মাস অবরুদ্ধ থাকার পর, উভয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হলে, বাংলার সৈন্যরা পরাজিত হয়, কিন্তু তখনও একডালা দুর্গ অপরাজেয় ছিল। অবশেষে হতাশ হয়ে ফিরোজ শাহ দিল্লী ফিরে যান। পরে উভয়ের ভিতরে শান্তি স্থাপিত হয়।
১৩৫৭ খ্রিষ্টাব্দে
ইলিয়াস শাহ মৃত্যুবরণ করলে, বাংলার সিংহাসনে বসেন সিকান্দার শাহ। ইলিয়াস শাহ-এর মৃত্যুর
পর, এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, ফিরোজ তুঘলোক পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন। এবারও পিতার
মতো সিকান্দার শাহ একডালা দুর্গে আশ্রয় নেন। কয়েকমাস এই দুর্গ অবরোধ করে রাখার পর ফিরোজ
তুঘলক সন্ধি করেন। এরপর ফিরোজ তুঘলক বাংলার স্বাধীনতা মেনে নিয়ে দিল্লীতে ফিরে যান।
কিভাবে যাওয়া যায়:
বাংলাদেশের
বর্তমান গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়া উপজেলার অন্তর্গত একটি স্থান। বর্তমান
কাপাসিয়া উপজেলা থেকে ১০ কি. মি. দক্ষিণে তারাগঞ্জ বাজারের পাশে শীতলক্ষা নদীর পশ্চিম তীরে এই দুর্গের অবস্থান।
0 Comments