বাহারি রঙ্গের পিঠা পুলি
পিঠা পুলির দেশ আমাদের
এই বাংলাদেশ। রকমারি পিঠা পুলি
আমরা সব সময়ই খেয়ে
থাকি। আর এমনি সব
মজাদার পিঠা নিয়ে আমি এসেছি আপনাদের মাঝে । মচমচে নারিকেলের ভাজা
পুলি ও অনান্য অনেক পুলি খেতে খুবই টেস্টি। কিন্তু
খেতে পছন্দ করলেও অনেকেরই
জানা নেই এর রেসিপি।
তাই আজ বাহারি রান্না
শিখে চটপট বানিয়ে নিন।
নারিকেলের ভাজা পুলি পিঠা
উপকরণ :
চালের
আটা – পরিমাণ মত
লবন
পানি
প্রণালী :
পানি ফুটে উঠলে তাতে
আটা দিয়ে দিন , অল্প
আচে কিছুক্ষন ঢেকে রাখুন ।
চুলা থেকে নামিয়ে কিছুক্ষন
ঢাকনা দেয়া অবস্থায় রাখুন
।
ভাল করে ময়ান দিন
। অল্প অল্প
নরমাল পানি দিয়ে খামিটা
ময়ান দিন । ছোট
ছোট রুটি বেলে ছাঁচে
দিয়ে পুর দিয়ে দিন
।
গরম ডুবো তেলে হালকা
সোনালী করে ভেজে নিন
।
নারিকেলের পুর :
কোড়ানো
নারিকেল
চিনি বা গুড়
এলাচ
, তেজপাতা
লবন সামান্য
সব এক সাথে জাল
দিয়ে আঠালো পুর তৈরি
করে নিন ।
*** মনে
রাখবেন চালের আটা অবশ্যই
ভাল হতে হবে ।
ভাল না হলে এবং
ভাজা বেশি হয়ে গেলে
এই পিঠা খুবই শক্ত
হবে । ***
মজাদার দুধ পুলি পিঠা
উপকরণ:
চালের
গুঁড়া – আড়াই কাপ
ময়দা
– আধা কাপ
পানি
– দেড় কাপ
লবণ –
আধা চা চামচ
ঘি – আধা চা চামচ
দুধ –
দেড় কেজি
চিনি
– স্বাদ মতো ; নূন্যতম এক
কাপ
গুঁড়ো
দুধ – প্রয়োজনীয়তা অনুসারে
কনডেন্সড
মিল্ক – প্রয়োজনমত
নারিকেল
কুড়ানো – দেড় কাপ
এলাচ
– ২,৩টি
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে
পিঠার ভেতরে থাকা পুরের
জন্য দেড় কাপ নারিকেল
কুড়ানো আলাদা করে রেখে
দিন (সামান্য রেখে দিতে হবে
পরে দুধের মধ্যে দেওয়ার
জন্য)। এখন
বাকি নারিকেল কুরার সাথে পাঁচ
থেকে ছয় চামচ চিনি
দিয়ে ফ্রাইপ্যানে সাত থেকে আট
মিনিট ভেজে উঠিয়ে নিন
(মূলত নারিকেলের পানি শুকাতে যতক্ষণ
লাগে আরকি) এই সদ্য
প্রস্তুতকৃত পুর পিঠার ভেতরে
দিতে হবে।
এবার দুধের সঙ্গে গুঁড়াদুধ,
চিনি, কনডেন্সড মিল্ক আর এলাচ
মিশিয়ে জ্বাল দিন। পিঠা
বানানো হতে হতে দুধ
খুব সুন্দর জ্বাল হয়ে
হালকা রং হবে। এখন
অন্য পাতিলে পানির সঙ্গে
লবণ এবং ঘি একসাথে
দিয়ে গরম করুন। ফুটানো
পানির সঙ্গে চালের গুঁড়া
ও ময়দা একসাথে দিয়ে
খুব ভালো করে মিশিয়ে
নিয়ে চুলা বন্ধ করে
দিয়ে খামির প্রস্তুত করে
ফেলুন। রুটি বানানোর পিঁড়িতে
গরম গরম খামির খুব
ভালো করে মথে নিন।
এখন খামিরটা ১০ ভাগ করুন।
এক একটি ভাগ দিয়ে
ছোট ছোট রুটি বেলে
অথবা হাত দিয়ে চেপে
পাতলা করে ভিতরে নারিকেলর
পুর দিয়ে পুলিপিঠা প্রস্তুত
করুন। এভাবে সব পিঠাগুলো
তৈরি করে নিন। এখন
বানানো পুলিপিঠা, ফুটিয়ে রাখা দুধের
মধ্যে দিয়ে চুলার আঁচ
কম রেখে ১০ মিনিট
রান্না করে ফেলুন।
হাঁড়ি
আস্তে ঝাঁকিয়ে পিঠার সঙ্গে দুধ
মিশিয়ে নিন। ১০ মিনিট
রান্নার পর কুড়ানো নারিকেল
দিয়ে আরও দুই থেকে
তিন মিনিট রান্না করে
নামিয়ে পাত্রে ঢেলে পরিবেশন
করুন মজাদার দুধ পুলি
পিঠা। প্রয়োজনে স্বাদবৃদ্ধির জন্য কিছুক্ষণ ফ্রিজেও
রাখতে পারেন, একটু ঠান্ডা
ঠান্ডা খেতে চাইলে!
সিদ্ধ পুলি পিঠার রেসিপি
উপকরণ :
আতপ চালের গুঁড়া ৪
কাপ,
খেজুরের
গুড় পরিমাণ মতো,
কোরানো
নারকেল ২ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালি
:
আতপ চালের গুঁড়া হালকা
ভেজে পরিমাণ মতো পানি
দিয়ে খামি করে নিন।
কড়াইতে গুড় ও নারকেল
একসঙ্গে চুলায় দিয়ে জ্বাল
দিতে হবে। মিশ্রণটি শুকিয়ে
আঠা আঠা করে নামিয়ে
রাখুন। খামির হাতে নিয়ে
গোল গোল করে বেলে
মাঝ খানে পুর দিয়ে
অর্ধ চন্দ্রাকারের আকার দিয়ে মুখটি
বন্ধ করে দিন। এভাবে
সব পুলি পিঠা বানিয়ে
ভাপে সিদ্ধ করে গরম
গরম পরিবেশন করুন। ঠাণ্ডা পুলি
খাওয়ার মজাই আলাদা।
তিল নারকেলে পুলি পিঠা
উপকরণ :
তিলের
গুঁড়া আধা কাপ,
খেজুরের
গুড় ১ কাপ,
এক চিমটি এলাচ গুঁড়া,
দারচিনি
২-৩টা,
আতপ চালের গুঁড়া ২
কাপ,
পানি দেড় কাপ,
লবণ স্বাদমতো,
ভাজার
জন্য তেল দুই কাপ।
প্রস্তুত প্রণালী
:
প্রথমে
কুরানো নারকেলের গুড দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রান্না
করতে হবে। একটু শক্ত
হয়ে এলে এলাচ, তিল
ও আতপ চালের গুঁড়া
ছড়িয়ে আরও একটু রান্না
করতে হবে। তেল উঠে
পুর যখন পাকানোর মতো
শক্ত হয়ে যাবে, তখন
সেটা নামিয়ে ঠাণ্ডা করে লম্বাভাবে
সব পুর বানিয়ে নিন।
এবার আতপ চালের গুঁড়া
সেদ্ধ করে ভালোভাবে চুলার
আঁচ কমিয়ে নাড়ুন, যাতে
খামিরে কোন ধরণের চাকা
না থাকে।
একটু ঠাণ্ডা হলে পানি
ছিটিয়ে ভালো করে ছেনে
রুটি বানাতে হবে। রুটির
এক কিনারে পুর রেখে
অন্য কিনার বাঁকানো চাঁদের
মতো উল্টে পিঠে আটকে
দিতে হবে। এবার টিনের
পাত অথবা পুলিপিঠা কাটার
চাকতি দিয়ে কেটে নিতে
হবে।চাইলে কিনারে মুড়ি ভেঙে
ও নকশা করতে পারেন।
সব শেষে গরম তেলে
মচমচে করে ভাজতে হবে।
চিকেন ঝাল পুলি পিঠা
উপকরন
পুলির
খামিরের জন্য
ময়দা ১ ১/২ কাপ
কালোজিরা
১/২ চা চামচ
লবন ১/২ চা
চামচ থেকে একটু বেশি
তেল ৩ টেবিল চামচ
ঠাণ্ডা
পানি ৬ টেবিল চামচ
বা পরিমানমত
পুরের জন্য
চিকেন
থাই ১ ১/২
কাপ
পেঁয়াজ
কুঁচি ১/২ কাপ
টমেটো
সস ১
চা চামচ
আদা বাটা ১ চা
চামচ
রসুন বাটা ১ চা
চামচ
মরিচ গুঁড়া ১/২
চা চামচ
জিরা গুঁড়া ১/২
চা চামচ
ধনিয়া
গুঁড়া ১/২ চা
চামচ
গোলমরিচ
গুঁড়া ১/৮ চা
চামচ
গরম মশলা গুঁড়া ১/২ চা চামচ
লবন স্বাদমত
কাবাব
মশলা ১/২ চা
চামচ
তেল ১ ১/২
টেবিল চামচ
ধনিয়া
পাতা কুঁচি ১/৪
কাপ (শেষ মুহূর্তে)
পেঁয়াজ
মোটা করে কাটা ১/৪ কাপ (শেষ
মুহূর্তে)
কাঁচা
মরিচ কুঁচি ১ টেবিল
চামচ (শেষ মুহূর্তে)
চাট মশলা ১ চা
চামচ (শেষ
মুহূর্তে)
প্রস্তুত প্রণালী
:
১। পুরের জন্য প্রথমে
মাংস ছোট ছোট টুকরা
করে নিন। এখন এই
মাংসের সাথে পেঁয়াজ, আদা,
রসুন, সস, হলুদ, জিরা,
ধনিয়া, গরম মশলা, গোলমরিচ,
লবন, কাবাব মশলা এবং
তেল সহ সব ভাল
করে মেখে রান্না করা
নিন। কোন পানি দেয়ার
প্রয়োজন নেই মাংস থেকে
যে পানি বের হবে
তাতেই মাংস সিদ্ধ হয়ে
যাবে।
২। মাংস সিদ্ধ হয়ে
পানি শুকিয়ে গেলে দেখবেন
তেল উপরে উঠে এসেছে,
তখন এর মধ্যে ধনিয়া
পাতা, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ এবং
চাট মশলা দিয়ে দিন।এবার
আর বেশিক্ষণ চুলায় রাখার দরকার
নেই পেঁয়াজ সামান্য নরম
হলেই ১ থেকে ২
মিনিট পর মাংসের পাত্র
চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা
করে নিন।
৩। এবার পুলির খামির
তৈরি করে নিন। খামির
তৈরির জন্য প্রথমে পাত্রে
ময়দা, কালোজিরা, লবন এবং তেল মিশিয়ে নিন।
এরপর এই ময়দার সাথে
পরিমানমত পানি দিয়ে শক্ত
খামির তৈরি করে গরম
ভেজা কাপড় দিয়ে ঘণ্টাখানেক
ঢেকে রাখুন।
৪। ময়দার খামির ১৪
ভাগ করুন। এবার একটি
ভাগ নিয়ে রুটি বেলে
এর মধ্যে পরিমানমত মাংসের
পুর দিয়ে পুলির আকারে
গড়ে নিন। এভাবে সবগুলো
পুলি তৈরি করে নিন।
৫। সবগুলো পুলি তৈরি
করা হয়ে গেলে চুলায়
তেল গরম হতে দিন।
তেল গরম হয়ে গেলে
পুলিগুলো ভেঁজে নিন।
৬। পছন্দসই সস বা চাটনির
সাথে পরিবেশন করুন মজাদার চিকেন
ঝাল পুলি।
মুগের পুলি পিঠার রেসিপি
উপকরণ :
ভাজা মুগ ডাল – ১
পোয়া,
নারিকেল
কুরানো – ২ কাপ,
ময়দা
– ১ কাপ,
চিনি
– ৩ পোয়া
লবণ ও সয়াবিনের তেল
পরিমান মত।
প্রস্তুত প্রণালি
:
প্রথমে
মুগের ডাল গরম পানিতে
সিদ্ধ করে পাটায় বেটে
নিন। এবার দেড় পোয়া
চিনিতে ৩/৪ কাপ
পানি দিয়ে সিরা করে
নিন। তারপর নারিকেল ও
বাকি চিনি মিশিয়ে চুলায়
জ্বাল দিতে থাকুন। ঘন
ও আঁঠালো হয়ে আসলে
চুলা থেকে পাত্রটি নামিয়ে
ফেলুন।
এরপর ময়দা ও ২
টেবিল চামচ তেল দিয়ে
ময়ান বানিয়ে নিন। ময়দার সাথে
১/৪ ভাগ পানি
ও সিদ্ধ ডাল দিয়ে
ভাল করে মাখিয়ে নিন।
২০-২৫ ভাগ করে
প্রত্যেক ভাগে নারিকেলের পুর
দিয়ে মুখ বন্ধ করে
দিন। এবার ডুবো তেলে
ভেজে চিনির সিরায় চুবিয়ে
পরিবেশন করুন।
চন্দ্র পুলি পিঠার রেসিপি
উপকরণ :
নারকেল
– ৩ টি,
চিনি
– ৩ পোয়া,
গুড়
– আধা কেজি,
ময়দা
– ১ কেজি,
দুধ –
২ কেজি,
তেল –
পরিমান মত।
প্রস্তুত প্রণালী
:
প্রথমে
নারিকেল মিহি করে কুরে
নিন। কুরানো অর্ধেক নারিকেল
আবার শিল পাটায় আর
ও মিহি করে বেটে
নিন। বাকি অর্ধেক নারিকেলের
সঙ্গে গুড় জ্বাল দিয়ে
হালুয়ার মত করে পুর
বানিয়ে নিন। হালুয়া শুকিয়ে
চটচটে হয়ে এলে চুলা
থেকে নামিয়ে ফেলুন। এবার একটি
পাত্রে ঘন করে দুধ
জ্বাল দিয়ে নিন।
তারপর
পাটায় মিহি করা নারিকেল
ও চিনি মিশিয়ে ময়দা
দিয়ে কাই করে নিন।
এরপর রুটি বেলে নারিকেলের
পুর ভরে বাঁশের চটা
বা ছুড়ি দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকারে
কেটে নিন। চন্দ্রপুলি ডুবো
তেলে ভাল করে ভেজে
নিন। গরম গরম এই
মজাদার ও সুস্বাদু চন্দ্রপুলি
পরিবারে পরিবেশন করুন।
ফুল কপির ভাপা পুলি পিঠার রেসিপি:
উপকরণ :
চালের
গুঁড়ো ৪ কাপ,
মাংস ১ কাপ (কিমা),
চিংড়ি
মাছ আধা কাপ,
ফুলকপি
কুচি ১ কাপ,
আদা বাটা আধা চা
চামচ,
পেঁয়াজ
কুচি ২ টেবিল চামচ,
কাঁচামরিচ
বাটা ১ চা চামচ,
গরম মসলা গুঁড়ো আধা
চা চামচ,
তেল আধা কাপ,
লবণ ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি
:
চালের
গুঁড়ো গরম পানিতে পরিমাণ
মতো লবণ দিয়ে ডো
তৈরি করে নিতে হবে।
কড়াইয়ে তেলে পেঁয়াজ কুচি
বাদামি করে ভেজে আদা
বাটা, মরিচ বাটা, মাংসের
কিমা, চিংড়ি ও অল্প
পানি দিয়ে কষাতে থাকুন।
মাঝারি আঁচে রান্না করতে
হবে।
পানি শুকিয়ে গেলে ফুলকপি কুচি
দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রান্না করতে
হবে। তেল উপরে উঠলে
গরম মসলা দিয়ে ভাজা
ভাজা করে কষিয়ে নামাতে
হবে। পুলি পিঠার আকৃতিতে
পুর ভরে পিঠা বানিয়ে
নিন। এবার একটা হাঁড়িতে
পানি দিয়ে স্টিলের জালি
বসিয়ে দিন। পানিতে ভাপ
এলে একটা পাতলা সাদা
কাপড় বিছিয়ে ভাপানোর জন্য পিঠা দিন।
ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন
১০ থেকে ১৫ মিনিট
ভাপালে পিঠা খাওয়ার উপযোগী
হবে। এবার নামিয়ে চাটনি
বা সস দিয়ে পরিবেশন
করুন মজার স্বাদের ফুলকপি
ভাপা পুলি।
0 Comments