রাতারগুল, বিছানাকান্দি, জাফলং, লালাখাল, সংগ্রামপুঞ্জি প্রকৃতির বিছানা বিছানাকান্দি।


আমি নিয়ে এসেছি আজ আপনাদের জন্য খুব অল্প খরচে ও অল্প সময়ে সিলেটের ট্যুর,
যা যা থাকছে: রাতারগুল, বিছানাকান্দি, জাফলং, লালাখাল, সংগ্রামপুঞ্জি প্রকৃতির বিছানা বিছানাকান্দি
খরচ মাত্র ৪২০০ টাকা / আর থাকছে কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?

এই পোস্টটি শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা সিলেটে ট্যুরে যেতে আগ্রহী বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরা হয়েছে এখানে। সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনুরধ করা হয়েছে্ এবং পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বর্ষাকাল হচ্ছে সিলেট ট্যুরের উপযুক্ত সময় এই সময় সিলেটের ট্যুরিস্ট স্পটগুলো হয়ে উঠে স্বাছন্দ এবং খুঁজে পায় তাদের নতুন প্রাণ অন্যান্য সময়ে যে যাওয়া যাবে না তা নয় কিন্তু সেক্ষেত্রে সিলেটের প্রকৃত সৌন্দর্য কিছুটা কমতি থাকবে

এবারে থাকছে স্পট এবং সকল স্পটের যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাবার-দাবার, সম্ভাব্য খরচ আর বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায
-
1)রাতার গুল সোয়াম্প ফরেস্ট:


এটি হলো একটি বন। আর এই বনটি মূলত সিলেটের সুন্দরবন নামে পরিচিত এটিকে ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ। চারদিকে রয়েছে নদী হাওর।এ বনের বেশির ভাগই রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা হিজল-করচগাছ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র 'সোয়াম ফরেস্ট' (জলবন) খ্যাত রাতারগুল। 'নদীর মধ্যে বন' এটাই জায়গাটাকে ভালোভাবে আলাদা করে অন্যান্যদের তুলনায় এটি ঘুরে দেখতে হলে অবশ্যই নৌকা দিয়ে সম্পূর্ণ বনটি ঘুরে দেখতে হবে। আর একটি কথা বলব জায়গাটা ভালো লাগবে সেটিতে কোন সন্দেহ নাই।

সমস্যা:  দুটি সমস্যা অবশ্যই আপনাদের সামনে এসে দাড়াবে প্রথমটি হলো:, জায়গাটা এমন জায়গাতে অবস্হিত যেখানে যেতে আপনাকে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হবে যোগাযোগ ব্যবস্থাটি ভয়ানক দ্বিতীয়টি হলো, নৌকা ভাড়া নৌকা ভাড়া করার সময় আপনাকে ব্যাপকভাবে ঝগড়া করতে হবে  পাঁচশো টাকার ভাড়া আপনার কাছে পাঁচ হাজারও চাওয়া হতে পারে কিন্তু এর ন্যায্য ভাড়া হলো ৫৫০ টাকা দিয়ে ঘন্টা ৩০ মিনিট সেখানে সিন্ডিকেটের নির্ধারন করা ৭৫০ টাকা লিখা ছিল

2) শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় :

যদিও এটা কোন ট্যুরিস্ট স্পট না তারপরও বলবো যদি সম্ভব হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটা একবার ঘুরে আসবেন শহীদ মিনারটা অনেকটাই ইউনিক মনে হবে এবং অনেক ভালো লাগবে বলে আমি মনে করি

3) জাফলং :

সিলেটের ঘুরতে যাওয়া বলতে মূলত আমরা 'জাফলং' আর 'মাধবকুন্ড'কে বুঝে থাকি িআমার মনে হয় জাফলং আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে যোগাযোগ ব্যবস্থা রাতারগুলের মতো এতোটা খারাপ না পাথরের ওপর স্বচ্ছ 'ঠান্ডা' পানির সৌন্দর্য উপভোগ করতে জাফলংয়ের বিকল্প নেই তবে সেজন্য বর্ষাকালে যেতে পারলে ভালো হয় ছবি তোলা নিয়ে কোনও টেনশনের কারণ নেই কারণ সেখানে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফাররা মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে একেকটি ছবি তুলে দিবে গোসলের জন্য এক্সট্রা কাপড় নিয়ে যাওয়া আবশ্যক

সমস্যা: এখানেও আপনাকে কিছু সমস্যায় পরতে হতে পারে। যেমন, জাফলং আপনার পার্সোনাল ব্যাগ অথবা অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি দেখে আপনি যখন পাগল হয়ে যাবেন তখন আপনার পছন্দের ব্যাগটি হারিয়ে যেতে পারে এমনটাই স্বাভাবিক সেজন্য গ্রুপ ট্যুরে যেতে পারলে ভালো যাদের পাহাড়ে ওঠা নামায় প্রবলেম আছে তারা বিশ্রাম নিয়ে ওঠানামা করার চেষ্টা করবেন মেয়েদের ক্ষেত্রে গোসলের পর চেইন্জ্ঞ করার জন্য আলাদা জায়গা খুঁজে পাওয়াটাও সেখানকার একটা সমস্যা


4)খাসিয়াপল্লী :

জাফলংয়ের ঠান্ডা পানিতে গোসল শেষে আপনি সেখান থেকে যেতে পারেন খাসিয়াপল্লীতে নৌকা, অটোরিকসা এবং হেঁটে আপনাকে সেখানে যেতে হবে এর জন্য প্রবল ইচ্ছা থাকা জরুরি এখানে আপনি জমিদার বাড়ি, খাসিয়াদের জীবনধারা এবং সমতল ভূমির চাবাগান উপভোগ করতে পারবেন

5) তামাবিল :
নাম শুনেই জায়গাটাকে খাল অথবা বিল ধারণা করে ভুল করবেন না এটা বাংলাদেশ-ভারত সিমান্তের বর্ডার মাত্র যারা খুব কাছে থেকে বর্ডার দেখতে চান তারা জাফলং থেকে ফেরার সময় দশ মিনিটের জন্য জায়গাটা দেখে যেতে পারেন

6) হরিপুর গ্যাস ফিল্ড :

গ্যাস সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয়ে ধারণার জন্য জাফলং আর তামাবিল দেখে ফেরার পথে জায়গাটা ঘুরে দেখতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে স্পেশাল পারমিশনের প্রয়োজন হবে

7) মাধবকুন্ড :

জায়গাটা সম্পর্কে জানতে যারা আমার এই পয়েন্টটা পড়তে মুখিয়ে রয়েছেন তাদের মন খারাপ হবার সম্ভাবনাই বেশি কারণ মাধবকুন্ড এখন আর আগের মতো নাই 2007 সালের সেই মাধবকুন্ড আর এখনকার মাধবকুন্ডের মধ্যে বিস্তর তফাত আমি সাজেস্ট করবো একটু কষ্ট হলেও মাধবকুন্ডে না যেয়ে প্রয়োজনে বিছানাকান্দি যান তবে যারা বিছানাকান্দি যাওয়ার প্যারা নিতে চাননা তাদের জন্য মাধবকুন্ডকে আরোও রোমাঞ্চকর করতে কয়েকটি বিষয় ফলো করার অনুরোধ করবো এক, সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর মাসে মাধবকুন্ডে যান তাহলে হয়তো কিছুটা প্রাণবন্ত ঝরণার দেখা পাবেন এখনকার কন্ডিশনে মাধবকুন্ডে গোসল করার কোনও পরিবেশ নাই তবে, আপনি চাইলে একটু অবৈধ অপশনে পাহাড়ে উঠে ঝরণার কাছাকাছি যেতে পারেন সেখানে গোসল করতে পারবেন তবে সেক্ষেত্রে সমস্ত রিস্ক আপনার একজন লোকাল গাইড নিয়ে যেতে ভুলবেন না

যাদের পাহাড়ে ওঠার শখ আছে তারা সিড়ি বেয়ে প্রায় 1000 ফিট ওপরে ওঠতে পারেন সেজন্য আপনার প্রচুর মানসিক শারীরিক শক্তির প্রয়োজন আমাদের ওঠতে প্রায় আধঘন্টার বেশি সময় লেগেছিল এক্ষেত্রেও লোকাল গাইড আবশ্যক তবে এটি বৈধ অপশন

8) সিলেট শহর :

সিলেট শহরটাতে অল্প সময়ে আপনি কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন যেমন : মনিপুর মার্কেট, সিলেট জেলা স্টেডিয়াম, শহীদ মিনার, ক্রীন ব্রিজ ইত্যাদি

9) বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট :

এটা সিলেটের শ্রীমঙ্গলে অবস্হিত এখানে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই তবে যদি ঢুকার অনুমতি পান তাহলে ঘুরে যেতে পারেন এখানে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির চা-গাছ,চা উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং একটি বিরল প্রজাতির ফল গাছ দেখতে পারবেন

10) লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান :

চা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্যানের দূরত্ব 5/7 কিলোমিটার প্রকৃতির খুব কাছাকাছি যেতে উদ্যানটি ঘুরে আসতে পারেন এখানে বিভিন্ন রকমের বিরল প্রজাতির গাছ,বানর,পাখি ইত্যাদি দেখতে পারবেন

11) Novem Eco Resort :

যদিও নামটি নতুন মনে হচ্ছে কিন্ত তারপরও এখানে যাওয়ার চেষ্টা করবেন উপরের ভেন্যুগুলোর মধ্যে জাফলংয়ের পর এটাই সবচেয়ে শান্তির জায়গা কিন্ত এটা বেশ কস্টলি আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক বড়োভাই রিসোর্টের উদ্যোক্তা শেয়ার হোল্ডার হবার জন্য আমরা মুটামুটিভাবে ফ্রিতেই ঢুকতে পেরেছিলাম চমৎকার একটা প্লানিং নিয়ে রিসোর্টটা তৈরী করা ফ্যামিলি ট্যুর অথবা বয়ফ্রেন্ড গালফ্রেন্ডদের জন্য এরচেয়ে উপযুক্ত জায়গা আর দ্বিতীয়টি নেই এখানে আপনি সিলেটের সকল সৌন্দর্য একই সাথে দেখতে পাবেন এখানে সুইমিংপুল,পাহাড়,পাহাড়ের উপর বিশেষভাবে তৈরী করা বাড়ি,একটি কাঠের ব্রিজ এবং উন্নতমানের খাবার ব্যবস্থা রয়েছে উইকেন্ড কাটানোর জন্য এরচেয়ে ভালো জায়গা খুব কমই আছে এখানকার প্রবলেম একটাই; সেটা হচ্ছে এটা বেশ কস্টলি

12) বিছানাকান্দি :

চার পাশে শুধু সবুজ চা বাগান। নীল আকাশ আর সবুজ কার্পেটের ওপর যেন তাঁবু টানিয়েছে। বিমানবন্দর থেকে সালুটিকর রাস্তা চরম খারাপ। পিচঢালা কালো রাজপথে একটু পরপরই ভাঙা গর্ত। মনে হয় একটু আগেই যেন পথে গডজিলা হেঁটে গেছে। ভারী বালুর ট্রাকগুলো রাস্তার দশা করেছে।
হাদার বাজার থেকে নৌকায় বিছানাকান্দি। নৌকা পথে দূরত্ব্ব কম কিন্তু ভাড়া বেশি। রিজার্ভ নৌকা মৌসুম ভেদে ৮০০-১২০০ টাকা। বিছাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। সঙ্গে ছাতা, রেইনকোট নিতে ভুলবেন না।
বিছানাকান্দিতে খুব ভাল হোটেল নেই। তাই সিলেটে থাকাই ভাল। সিলেট থেকে সকাল সকাল রওয়ানা দিলে দিনে দিনে ফেরত আসা যাবে। সিলেট শহরে টুরিস্টদের থাকার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত রুম ভাড়া পাওয়া যায়। নিরাপত্তাও ভালো। দরগা গেটে কয়েকটি ভালো হোটেল আছে।
বিছানাকান্দি যাবার দিনটা যদি হয় শুক্র বা সোমবার, তাহলে ভাববেন কপাল খুলে গেছে আপনার। সকাল দশটা থেকে চারটার ভিতর যেতে পারবেন ভারতে, সীমান্তে হাট বসে তখন। খেতে পারবেন ভারতীয় কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলমূল।
তবে সাবধান থাকবেন যাতে ফেনসিডিল দালালদের পাল্লায় না পড়েন। ছোট্ট শিশুরাও অফার করতে পারে। পা দিলে বিপদে পড়বেন কারণ, কিছুক্ষণ পরপর বিজিবি চেকআপ হয়। এছাড়া সাঁতার না জানলেও খুব সাবধান থাকবেন। সাঁতার যারা জানেন তারাও সাবধান, প্রচন্ড স্রোতে আপনি পাথরের আঘাত পেতে পারেন, পাথরে ধরতেও সাবধান থাকবেন, কারণ মাঝে মাঝে খুব পিচ্ছিল পাথর আছে।
আপনিও ঘুরে আসতে পারেন, তবে অনুরোধ খাবার দাবার নিয়ে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে প্রকৃতির অনন্যতা কিন্তু নষ্ট করবেন না।

খাবার-দাবার :
আমার কাছে মনে হইছে সিলেটে এই একটা জিনিস নিয়ে আপনার টেনশনের কোনোও কারণ নাই মাঝারি মানের রেস্টুরেন্টেও আপনি ভালো মানের খাবার পাবেন সময় থাকলে ডিঙি রেস্টুরেন্টের শুটকি-ভর্তা ট্রাই করে আসবেন ভালো লাগবে আশা করি

সবশেষে বলবো,পৃথিবীর যেকোন ট্যুরিস্ট প্লেস মানেই সেখানে খারাপ ক্যাটাগরির লোকের আনাগোনা বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক সেজন্য সিলেটের মানুষদের দোষ দেয়াটা সমীচীন হবে না সাবধানে চলাফেরা করার অনুরোধ রইলো

বি:দ্র:
) মাজার এলাকাতে সাবধান থাকুন
) থাকার জন্য সিলেট শহরকেই বেছে নিন মাএ 300-3000 টাকার মত হোটেল ভাড়া রয়েছে। কিন্তু আপনি 300 টাকাতেই ভালো হোটেল পেয়ে যাবেন
) ১০/১২ জন মিলে যেতে পারলে মাথাপিছু ৭০০ টাকা সেভ হবে  জনপ্রতি মাএ ৪২০০ টাকাতেই হয়ে যাবে বলে মনে করা যাচ্ছে
) স্পটগুলোতে যেতে মাইক্রবাস ভাড়া করে নিন
) পাহাড়ে ওঠার সময় সঙ্গে আবশ্যই পানি রাখুন

0 Comments