কেরাটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট

আজকাল লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে সকলেই ভালোবাসেন আর তাই বেশিরভাগ মহিলাই পার্লারে ছোটেন পার্মানেন্ট হেয়ার স্ট্রেটনিং করানোর জন্য কিন্তু শুধু দর্শনধারী হলেই তো আর হল না, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখাও বিশেষভাবে দরকার আর এই জন্যই প্রয়োজন কেরাটিন ট্রিটমেন্টেরচুলের স্টাইল স্টেটমেন্টে অনেকদিনই সংযোজিত হয়েছে স্ট্রেট হেয়ার হেয়ার স্ট্রেট করার সহজ স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি হল কেরাটিন ট্রিটমেন্ট এই ট্রিটমেন্ট কীভাবে হয় ।

কেরাটিন ট্রিটমেন্ট কী?

সোজা কথায়, চুল স্ট্রেট উজ্জ্বল করার পদ্ধতি হল কেরাটিন ট্রিটমেন্ট এই হেয়ার ট্রিটমেন্টে ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যাল্স, কন্ডিশনার কিছুটা কেরাটিন (চুলের প্রোটিন) মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় কেরাটিন ট্রিটমেন্ট প্রতি চারমাস বাদে করা উচিত তবেই চুলের টেক্সচার ঠিক থাকে তবে যাদের কোনও রাসায়নিক পদার্থে অ্যালার্জি আছে, তাদের কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে তাই আগে চেক করে নাও তোমার চুলে ফরম্যালডিহাইড ব্যবহার করা যাবে কিনা

কেরাটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট কেন করবেন?

কেরাটিন হল চুলের মধ্যেই থাকা একপ্রকার প্রাকৃতিক প্রোটিন

দূষণ, চুলে বারবার কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা, অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রায়ার বা স্ট্রেটনার ব্যবহার করার ফলে চুলে একটু একটু করে এই প্রোটিনের অভাব দেখা দেয়

যার ফলে চুল হারিয়ে ফেলতে পারে তার প্রাকৃতিক জৌলুস, সেইসঙ্গে অকালে চুল ঝরে যাওয়া, ডগা ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে

আর এই কারণে বাইরে থেকে চুলের প্রোটিনের যোগান দেওয়া খুবই জরুরী

এতে চুলের গোড়া মজবুত হওয়ার পাশাপাশি চুলের হারিয়ে যাওয়া জেল্লাও ফিরে আসে

খসখসে অনুজ্জ্বল চুলে প্রাণ ফেরাতে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করানোটা খুবই দরকার

কেরাটিন ট্রিটমেন্টে কী কী থাকে?

চুলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করার জন্য ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যাল (Formaldehyde) এর সঙ্গে কন্ডিশনার এবং কেরাটিন হেয়ার প্রোটিন মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় এই ফর্মুলা চুলের ড্যামেজ কন্ট্রোলে বিশেষভাবে সাহায্য করে

 হেয়ার স্ট্রেটনিং কেরাটিন ট্রিটমেন্টের মধ্যে পার্থক্য:

হেয়ার স্ট্রেটনিং পারমানেন্ট, কিন্তু এতে চুলের সব কার্ল সরিয়ে পিন-স্ট্রেট করা হয় চুলকে কিন্তু কেরাটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট কার্ল বা চুলের ফ্রিজ় নরম করে আনে, চুলে কেরাটিন অ্যাড করায়, চুলের পুষ্টি জোগায় মাস মতো কেরাটিন ট্রিটমেন্ট স্থায়ী হয়, কিন্তু চুলের ক্ষতি কম করে

 কী করে করা হয় এই কেরাটিন ট্রিটমেন্ট?

কেরাটিন ট্রিটমেন্টে চুল ভাল করে ধুয়ে কেরাটিন প্রডাক্ট লাগানো হয় তার কুড়ি-পঁচিশ মিনিট পর ৪৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফ্ল্যাট আয়রন গরম করে চুলটা স্ট্রেট করা হয়

কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করালে চুলের কী উপকার হবে?

প্রতিদিনের ধূলো-বালি-দূষণের পাশাপাশি অল্প সময়ে সুন্দর লুক পেতে আপনারা যেসব কৃত্রিম পদ্ধতির সাহায্য নেন, আর তার ফলে আপনার চুলের যা যা ক্ষতি হয় সেই সব ক্ষতি নিরাময় করে দেয় কেরাটিন ট্রিটমেন্ট যেমন-

চুলের হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে

চুলের ড্রাইনেস ফ্রিজিনেস এবং কোকড়ানোভাব দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী

কেরাটিন ট্রিটমেন্টে চুলের একটা প্রাকৃতিক স্ট্রেট লুক আসে, তার ফলে আপনাকে আলাদা করে চুলে স্ট্রেটনিং করার প্রয়োজন পড়ে না

তবে যারা ইতিমধ্যেই হেয়ার স্ট্রেটনিং করিয়ে ফেলেছেন, তারা চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন

যারা অনেকদিন আগেই হেয়ার স্ট্রেটনিং করিয়েছেন, এবং যাদের নতুন চুল গজাতে শুরু করে দিয়েছে তারা আবার হেয়ার স্ট্রেটনিং না করিয়ে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করুন

এতে চুলের পুষ্টি সৌন্দর্য আরও বাড়বে

কতদিন অন্তর করাবেন কেরাটিন ট্রিটমেন্ট?

চুলের টেক্সচার ঠিক রাখতে চার থেকে পাঁচ মাস অন্তর এই কেরাটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট করানো উচিত তবে এমনিতে কিন্তু ছয় মাস পর্যন্ত কেরাটিন ট্রিটমেন্টের এফেক্ট কার্যকর থাকে

 কেরাটিন ট্রিটমেন্ট কি চুলের পক্ষে ক্ষতিকর?

আগেই বলেছি কেরাটিন ট্রিটমেন্টের সময়ে চুলে ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তবে যাদের কেমিকেল প্রোডাক্টে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের কিন্তু এই কেমিকেল ব্যবহারে উল্টো ফল মিলতে পারে

কারণ এই কেমিক্যাল ব্যবহারে অনেক সময়ে চোখ এবং নাকে চুলকানি অনুভব হতে পারে

চোখের ক্ষেত্রে ইরিটেশনের ফলে চোখের সমস্যা হতে পারে

এছাড়াও, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে বিশেষজ্ঞরা এও বলেন যে, ফরম্যালডিহাইড কেমিকেল ক্যান্সারের কারণ তবে এজন্য ভয় পাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই আগে ডারমেটোলজিস্ট-এর কাছ থেকে ভাল করে পরীক্ষা করে নিতে হবে যে, আপনার চুলে ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যাল ব্যবহার করা যাবে কি না

শুধু তাই নয় পার্লারে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করানোর আগে ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যালের পরিমাণ কম রয়েছে এমন প্রোডাক্ট দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা উচিত

গর্ভবতী মহিলারা এই ট্রিটমেন্ট থেকে দূরে থাকবেন সন্তান প্রসবের পরেও এটি করাবেন না যতদিন না আপনার সন্তান মাতৃ দুগ্ধ খাওয়া বন্ধ করছে

 বাড়িতে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করবে কী করে?

কেরাটিন ট্রিটমেন্টের জন্য সঠিক প্রডাক্ট বাছাটাই আসল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করার কেমিক্যালে ফরম্যালডিহাইড থাকে, যা চুলের জন্য এবং শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর তাই কম ফরম্যালডিহাইডযুক্ত বা ফরম্যালডিহাইডবিহীন প্রডাক্ট কিনব

এবার পরপর তিনবার ভাল করে শ্যাম্পু করব, বিশেষত চুলে

চুল ভাল করে মুছে চুলের জলটা চেপে তুলে নেবে এবার পুরো চুল চারটে ভাগে ভাগ করে নিতে হবে প্রত্যেকটা ভাগে গোড়া থেকে ডগা অবধি ভাল করে কেরাটিন প্রডাক্ট লাগিয়ে নিতে হবে

পুরো প্রডাক্টটা ভাল করে চুলে লাগানো হয়ে গেলে একটা চিরুনি দিয়ে চুলটা আঁচড়ে নিতে হবে চিরুনিতে যদি প্রডাক্ট লেগে থাকে, তা হলে আরও কয়েকবার ভাল করে আঁচড়ে নাও

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে কোন প্রডাক্ট চুলে বসতে কতক্ষণ সময় নেবে তবে সাধারণত ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে কিছুক্ষেত্রে হিট দিয়ে বসানো হয়, কখনও আবার জাস্ট ক্যাপ পরিয়ে মাথার স্বাভাবিক উত্তাপ কাজে লাগিয়ে প্রডাক্টটা চুলে বসানো হয়

কুড়ি মিনিট পর ব্লো ড্রাই দিয়ে চুলটা শুকিয়ে নিতে হবে মনে রাখবে, যতক্ষণই সময় লাগুক না কেন, ভাল করে চুলটা ব্লোয়ার দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে

এবার একটা সেরামিক আয়রন নিয়ে ৪৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গরম করে নিতে হবে পুরো চুল চারভাগে ভাগ করবে এবার এক-একটা ভাগ আবার চারভাগে ভাগ করে, ফ্ল্যাট আয়রন দিয়ে চুল আয়রন করবে, যতক্ষণ না চুলে লেগে থাকা প্রডাক্ট উবে যায় এক-একটা চুলের ভাগে সাতবার মতো করলেই হয়ে যাবে

 ট্রিটমেন্টের পরের যত্ন

কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করার পর তিনদিন চুলে জল বা শ্যাম্পু লাগাবে না

ওই তিনদিন কোনও ক্লিপ বা ব্যান্ডও চুলে লাগাবে না

তিনদিন পর শ্যাম্পু করতে পার, কিন্তু ড্রাই শ্যাম্পু লাগাবে না সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু কন্ডিশনারই ব্যবহার করবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি, যেখানে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করছ, সেখান থেকেই শ্যাম্পু কিনে নিতে পারো

0 Comments